কাজিরবাজার ডেস্ক :
বাংলাদেশে ঈদের সময়ের মাদকের বাজার টার্গেট করে তৎপরতা শুরু করেছে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাকারবারি সিন্ডিকেট। এজন্য মাদকের মজুদ বাড়াচ্ছে এমন তথ্য পেয়ে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ, র্যাব, ডিবি, সিআইডি, কোস্টগার্ড, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সারাদেশে ৭০ লাখ মাদকসেবী প্রতিবছর ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি মাদক সেবনের পেছনে ব্যয় করে। মাদকসেবীদের ৮০ শতাংশই যুবক-যুবতী। ঈদের সময়ে মাদকের বাজার হয়ে উঠে জমজমাট ও রমরমা। হাজার কোটি টাকার মাদকের বাজার ধরতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে মাদক মাফিয়া চক্র।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রতিবছর যে ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি মাদক সেবনের পেছনে ব্যয় হচ্ছে তার মধ্যে বেশিরভাগই ইয়াবা আসক্ত। তবে সম্প্রতি বেড়েছে আইস সেবনকারীর সংখ্যাও। প্রতিবছর দেশের ভেতরে শতাধিক কোটি টাকার আইস মাদক ঢুকছে। মাদককেন্দ্রিক যোগাযোগের বড় প্ল্যাটফর্ম এখন অনলাইন। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি যোগাযোগে এই ধরনের মাদকের লেনদেন হয়। ফলে এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের দেশে যেই ডিভাইস, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা দরকার তার কিছুটা অপ্রতুলতা ও ঘাটতি রয়েছে। মাদকের গন্ধ এড়াতে ধোঁয়া, ট্যাবলেট কিংবা ইনজেকশনের মাধ্যমে সেবনযোগ্য শ্রেণীর মাদকের দাম অনেক বেশি হওয়ায় ধনী ঘরের ছেলে-মেয়েরাই আইস গ্রহণ করেন বেশি। ঈদের বাজারের মাদকের মজুদ করার খবর পেয়ে দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ, র্যাব, ডিবি, সিআইডি, কোস্টগার্ড, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
তথ্যপ্রযুক্তি ও আধুনিকায়নের নেতিবাচক প্রভাব, পারিবারিক-সামাজিক চাপসহ নানান কারণে তরুণদের মধ্যে হতাশা-বিষণ্ণতা ভর করছে। এর জেরে ঘটছে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, যার চূড়ান্ত পরিণতিতে মাদকাসক্তিতেও ঝুঁকছেন অনেক তরুণ-তরুণী। দিন দিন এমন অবসাদগ্রস্ত তরুণ-তরুণীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় বাড়ছে মাদকের চাহিদা। সেই চাহিদার জোগান দিতে বাড়ছে চোরাচালানও। এই চাহিদার প্রয়োজন মেটাতেই মাদকের ধরনও পাল্টাচ্ছে বছর বছর। এক সময় দেশের মাদকের বাজারে গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবার আধিপত্য থাকলেও সম্প্রতি বিস্তার ঘটছে আলোচিত ক্ষতিকর মাদক আইস (মেথামফেটামিন) বা ক্রিস্টাল মেথের। বিভিন্ন সংস্থা ও অধিদফতরের তথ্য অনুসারে, বছরে দেশে আসছে শত কোটি টাকার আইস বা ক্রিস্টাল মেথ। এরমধ্যে ধরা পড়ছে অর্ধশত কোটি টাকার আইস।
মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ মাদকের বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এশিয়ার গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল, গোল্ডেন ক্রিসেন্ট ও গোল্ডেন ওয়েজ নামে পরিচিত মাদক চোরাচালানের তিনটি প্রধান অঞ্চলের কেন্দ্রে বাংলাদেশের অবস্থান। তাই আন্তর্জাতিক মাদক কারবারিরাও বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে সহজে ব্যবহার করতে পারছেন। বাংলাদেশে মাদক আসার পথ (রুট) নিয়ে গবেষণা করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)। সেখানে তিনটি অঞ্চলের মধ্যে আছে মিয়ানমার, লাওস ও থাইল্যান্ডের সীমানা মিলে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল। এটি বাংলাদেশের পূর্বে অবস্থিত। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি সীমানা রয়েছে। মাদক উৎপাদন ও চোরাচালানের পথ হিসেবে ইরান, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানকে একত্রে বলা হয় গোল্ডেন ক্রিসেন্ট। এই অঞ্চল বাংলাদেশের পশ্চিমে। আর গোল্ডেন ওয়েজ হচ্ছে ভারতের হিমাচল প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, নেপাল ও ভুটানের কিছু অংশ। এই অংশ বাংলাদেশের উত্তরে অবস্থিত। এ তিন অঞ্চলের কেন্দ্রে থাকা বাংলাদেশের ওপর চার দশকের বেশি সময় ধরে মাদক কারবারিরা চোখ রাখছেন। শুরুর দিকে চোরাচালানির তালিকায় হেরোইন ও ফেনসিডিলের আধিক্য থাকলেও পরবর্তী সময়ে অন্য মাদকও যুক্ত হতে থাকে। এরমধ্যে গত এক দশকে দেশে ইয়াবার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। আর ইয়াবা তৈরির মূল উপাদান মেথএ্যাম্ফিটামিন আসছে বছর দুই ধরে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, মাদক চোরাচালানে বহুমাত্রিকতা এসেছে। চোরাচালানকারীরা এখন ‘ডার্কওয়েব’ ব্যবহার করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এতে কোন ধরনের তথ্য পাচ্ছে না। লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে বিট কয়েন। এ কারণে মাদক চক্রকে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। মাদক কারবারিরা যে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করছেন, সে অনুযায়ী আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা নেই। সক্ষমতা অর্জনে উদ্যোগ না নিলে দেশে আরও বেশি মাদকের ঝুঁকি তৈরি হবে। বাংলাদেশে মেথএ্যাম্ফিটামিন আইস বা ক্রিস্টাল মেথ নামে পরিচিত। ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল’ ও ‘গোল্ডেন ক্রিসেন্ট’ অঞ্চলে এ আইসের উৎপাদন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের অন্তর্ভুক্ত মিয়ানমার যে ছয়টি দেশের বাজার সামনে রেখে আইস উৎপাদন করছে, এরমধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে বলে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক সংস্থা ইউএনওডিসির সর্বশেষ বৈশ্বিক মাদক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছর ধরে দেশে আইসের চালান আসছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি) বলছে, গতবছর অভিযানে আইসের ২২টি চালান জব্দ করা হয়েছে। দেশে এখন পর্যন্ত মাদকের বাজার ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক ইয়াবার মতোই এটি সারাদেশে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আইস বা ক্রিস্টাল মেথ ইয়াবার চেয়েও ভয়ঙ্কর মাদক। কারণ, ইয়াবা তৈরির মূল উপাদান মেথএ্যাম্ফিটামিন হলেও ইয়াবায় মেথএ্যাম্ফিটামিন থাকে মাত্র ১৫ শতাংশ। আর আইস বা ক্রিস্টাল মেথের ৯৬ শতাংশই এ মেথএ্যাম্ফিটামিন। এটি দেখতে স্বচ্ছ কাচের (ক্রিস্টাল) মতো। এ মাদক সেবনে নিদ্রাহীনতা, স্মৃতিবিভ্রম, মস্তিষ্কবিকৃতিসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে এ মাদক সেবনে ওজন হারানো, কিডনি ও হৃদযন্ত্রের সমস্যা এবং বিষণ্ন্নতা ও স্ট্রোকের মতো বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। বাংলাদেশ যেহেতু মাদক চোরাচালানের তিন প্রধান অঞ্চলের কেন্দ্রে, তাই আন্তর্জাতিক মাদক চক্র এ দেশে সক্রিয় রয়েছে। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কা ও নাইজিরিয়ান চক্র বেশি সক্রিয়। তারা বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাদক পাচার করছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, আইস আগে উত্তর আমেরিকার দেশে উৎপাদিত হতো। ২০১৫ সাল পর্যন্ত উত্তর আমেরিকা ছিল আইসের মূল উৎপাদনকারী অঞ্চল। কিন্তু সেই উত্তর আমেরিকার দেশ ছাড়িয়ে তা এখন এশিয়াতেও উৎপাদিত হচ্ছে। ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আইস ল্যাব স্থাপনের প্রবণতা বেড়েছে। এ দেশগুলোর মধ্যে ইরান, চীন, আফগানিস্তান ও মিয়ানমারে আইসের উৎপাদন বাড়ছে। পাশাপাশি এশিয়ায় আইসের বড় বাজারও তৈরি হয়েছে। মাদকের বাজার ধ্বংস করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা তৎপর থাকলেও পাশের দেশ থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে উচ্চমূল্যের এই মাদক আসছেই। অবশ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আইসসহ মাদক ঠেকাতে অভিযান আরও জোরদার করার কথা বলছেন। যেসব দেশে যুবশক্তি বেশি সেখানে মাদক কারবারিদের নজর থাকে অনেক বেশি। সেসব স্থানে মাদকের বিস্তার ঘটানোর জন্য মাদক কারবারিরা নানা কৌশল গ্রহণ করে। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে বিশ্বের সব দেশের সামগ্রিক অবস্থা জানা সহজ হওয়ায় টার্গেটকৃত স্থানে মাদক বিস্তারে যোগাযোগ চালায় কারবারিরা। নেয় পাচারের নানা কৌশল। বাংলাদেশে এখন জনসংখ্যার বড় একটি অংশ যুবগোষ্ঠী। সেজন্য এ দেশ মাদক কারবারিদের অন্যতম টার্গেট। এখানে আইসসহ অধিকাংশ মাদকই আসে বিভিন্ন দেশ থেকে, যার বেশিরভাগ আসে মিয়ানমার ও ভারত থেকে। এরমধ্যে আবার সিংহভাগ আইসই প্রবেশ করছে মিয়ানমার থেকে। কক্সবাজারের টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ও এর আশপাশের এলাকা দিয়ে দেশে আসছে এই মাদক। কখনও আচার, কখনও কাপড়ের প্যাকেট আবার কখনও চায়ের প্যাকেটে করে নানা কৌশলে আনা হচ্ছে আইস। এই মাদক কারবারের সঙ্গে প্রভাবশালী অনেকের সম্পৃক্ততার খবর বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রথম আইস বা ক্রিস্টাল মেথ ধরা পড়ে ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। রাজধানীর জিগাতলার একটি বাসায় তখন ৫ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়। ওই চালানের পর সেই বছরের জুন মাসে রাজধানীর খিলক্ষেতে ধরা পড়ে ৫২২ গ্রাম আইস। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা তৎপরতায় ওই বছর এবং তার পরের বছর ২০২০ সালে আইস আসা কমে যায়। ২০১৯ সালে মাদকদ্র্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর মোট ৫৬১ গ্রাম আইস জব্দ করে। পরের বছর ২০২০ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ও কোস্ট গার্ডসহ সব সংস্থা জব্দ করে দশমিক ০৬৫ গ্রাম আইস।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে উদ্বেগজনক আকারে আসে এ মাদক। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ও কোস্ট গার্ডসহ বিভিন্ন সংস্থা গতবছর ৩৬ কেজি ৭৯৪ গ্রাম আইস জব্দ করে। প্রতি গ্রামের দাম ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ধরে জব্দ আইসের মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা। এসব মাদক জব্দ করার সময় ৩৫ কারবারিকেও আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে করা হয় ৩২টি মামলা। গতবছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাড়ে ৩৬ কেজির বেশি আইস জব্দ করলেও দেশে ঢুকেছে আরও বেশি। সবমিলিয়ে গতবছর অন্তত শত কোটি টাকার আইস ঢুকেছে দেশে এমনটাই ধারণা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, অনলাইনে মাদক ব্যবসা জমে উঠেছে প্রযুক্তির ফলে। এক সময় গাঁজা বা ইয়াবা কারবারের স্পট ছিল। এখন স্মার্টফোনের কারণে মাদক মানুষের হাতে চলে যাচ্ছে। ভার্চুয়াল যোগাযোগেই কারবার ঘটছে মাদকের। এসব নিয়ন্ত্রণে নতুন করে সাইবার ক্রাইম সেল গঠনে কাজ চলছে। পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেতন নাগরিকদের নিয়ে একটি বৃহৎ কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। মাদক মামলার বিচার কাজে জনবল বাড়িয়ে সেগুলো নিষ্পত্তি করতে আলাদা একটি কোর্ট দরকার। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ সবাই মিলেই বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। তবে আইস নামে একটা নতুন মাদকের আবির্ভাব ঘটেছে। একটা সময় ফেনসিডিল, হেরোইন বেশ আসত, তারপর ইয়াবা, এখন আইস। দেশী ও আন্তর্জাতিক একটি চক্র বিভিন্নভাবে মাদক কারবারে জড়িত। আমরা যেসব তথ্য পাই, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেই। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু ক্যাম্পেনও রয়েছে। একজন মাদক সেবন শুরু করলে তার ফলে আশপাশের লোক আসক্ত হতে থাকে। এভাবে মাদক সেবনকারীর সংখ্যা বেড়ে যায়। মাদককেন্দ্রিক যোগাযোগের বড় প্ল্যাটফর্ম (ক্ষেত্র) এখন অনলাইন। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি যোগাযোগে এই ধরনের মাদকের লেনদেন হয়। ফলে এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের দেশে যেই ডিভাইস, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা দরকার তার কিছুটা অপ্রতুলতা ও ঘাটতি রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি এগুলো কাটিয়ে ওঠার। তবে সামাজিকভাবে মাদকের বিরুদ্ধে একটি জোরালো অবস্থান মানুষেরও থাকা উচিত।
মাদকদ্র্রব্য বিশ্লেষকরা বলছেন, যে পরিমাণ মাদক ধরা পড়ে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ মাদক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সব সংস্থার ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকে। তাই এর বিস্তার রোধে প্রয়োজন পাচার রুট বা সরবরাহ এলাকায় নজরদারি বাড়ানো। একেক সময় একেকটা মাদক আসছে। কোন একটা মাদকের আমদানি ও চাহিদা যখন কমে যায়, তখন নতুন ধরনের মাদকের দিকে ঝুঁকে সেবনকারীরা। আধুনিকায়নের ফলে জীবনযাপনে পরিবর্তন আসায় মানুষ তার রিক্রিয়েশনের (বিনোদনের) জন্য নতুন ধরনের মাদক নেয়। সেই সঙ্গে থাকে হতাশা ও মানসিক চাপ। উন্নত বিশ্বে এখন আইসের প্রচলন তেমন নেই। সেখানে এগুলো সহজলভ্য বলে এখন আমাদের মতো দেশে হয়ত পাচার শুরু হয়েছে। মাদক বন্ধ করতে হলে চাহিদা ও জোগান দুটোকেই কমাতে হবে। যে ধরনের পদক্ষেপ নিলে আমাদের হতাশা, বিশৃঙ্খল বা অস্থির জীবনযাপনের লাগাম টানা যাবে, যেসব পদক্ষেপে অর্থের দাপট ও আধুনিকায়নের নেতিবাচক দিকগুলো দূর করা যাবে, সেসব পদক্ষেপ নিতে হবে, তবেই মাদকের বিস্তার রোধ করা যাবে।
গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, ঈদ, পূজা-পার্বন আনন্দ-উৎসবের সময়ে মাদকের চাহিদা বাড়ায় সরবরাহ বাড়ে। মাদক কারবারি সিন্ডিকেট এ সময়ে মাদকের মজুদ বাড়ায়। এই সময়টায় মাদকের মুনাফাও বেশি হয়। ঈদের বাজারকে সামনে রেখে মাদকের জমজমাট রমরমা বাজারকে টার্গেট করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে। শুধু ঈদের বাজার নয়, স্বাভাবিক সময়েও দেশে যাতে মাদকের চালান আসতে না পারে, মাদক বিক্রি, সেবনে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।