এক লাফে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম বাড়লো ৩৮ টাকা

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
এবার আরেক দফা দাম বাড়িয়ে ভোজ্যতেলের সঙ্কট মেটানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিলিটারে ৩৮ থেকে ৪৪ টাকা পর্যন্ত বেশি দাম দিয়ে ভোজ্যতেল কিনতে হবে ভোক্তাকে। নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন ১৮০, প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৯৮, প্রতি পাঁচ লিটারের ক্যান ৯৮৫ এবং প্রতিলিটার সুপার পাম খোলা ১৭২ টাকায় খুচরা বাজারে বিক্রি হবে। আজ শুক্রবার থেকে সারা দেশে নতুন দাম কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এতে করে খুরচা বাজারে ভোজ্যতেলে সরবরাহ বাড়বে বলে জানিয়েছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এদিকে, আরেক দফা দাম বাড়বে এ আশঙ্কা থেকে সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা ঈদের আগে বাজার থেকে ভোজ্যতেল সরিয়ে ফেলে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে এবার ছুটির মধ্যে সারা দেশে তেল নিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। কৃত্রিম সঙ্কটের মুখে বাড়িয়ে দেয়া হয় ভোজ্যতেলের দাম। কিন্তু বেশি দাম দিয়ে দেশের কোন কোন বাজার থেকে ভোজ্যতেল কিনতে পারেনি সাধারণ ভোক্তারা। তেল সংগ্রহে অনেকেই এক বাজার থেকে আরেক বাজারে ছোটাছুটি করেছেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
আগামী দুই মাসের চাহিদা পূরণের মতো পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও ঈদের আগের দিন বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের বাজারে ভোজ্যতেল পাওয়া যায়নি। সঙ্কট এতটা চরমে পৌঁছে যে, শেষ মুহূর্তে ঈদ রান্নাবান্নার আয়োজন করতে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে কেউ কেউ ভোজ্যতেল ধার করতে বাধ্য হয়েছেন। ফের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে ঈদের আগে বাজার থেকে ভোজ্যতেল উধাও হয়ে যায়। এতে করে এবারের ঈদে তেল নিয়ে ভোক্তাদের চরম বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হয়েছে। ঢাকার উত্তর বাড্ডার বাসিন্দা বেসরকারী চাকরিজীবী কামরুল হাসান জানান, ‘ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর বাজারে গিয়ে দুধ সেমাই মাংস মসলা কিনতে পারলেও ভোজ্যতেল কিনতে পারেনি। কিন্তু তেল ছাড়া তো মাংস রান্না করা যায় না। তাই শেষ পর্যন্ত উপায় না পেয়ে আগে কিনেছেন এ রকম এক নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে ভোজ্যতেল ধার করতে হয়েছে।’ জীবনে এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা বলেও তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন। সয়াবিন তেল নিয়ে সরবরাহকারীরা রীতিমতো ইঁদুর-বিড়াল খেলা শুরু করেছেন বলে অভিযোগ করেন ঢাকার মুদিপণ্যের ব্যবসায়ীরা। ঈদের আগে ঢাকার কাওরোন বাজারসহ বেশিরভাগ বাজার ঘুরে দেখা যায়, সয়াবিন তেল বাজার থেকে হাওয়া হয়ে গেছে। তেল যেন রীতিমতো অমাবস্যার চাঁঁদ হয়ে উঠেছে। কোন কোন দোকানে দু-এক লিটারের তেলের বোতল পাওয়া গেলেও, কিন্তু শর্ত হচ্ছে তেলের সঙ্গে অন্যান্য পণ্য কিনতে হবে।
জানা গেছে, ঈদের ছুটির মধ্যে এবার ভোজ্যতেল নিয়ে সবচেয়ে বড় কারসাজি হয়েছে। রাজধানীর কোন কোন বাজারে পাঁচ লিটারের বোতলজাত ক্যান হাতে গোনা দু-একটি পাওয়া গেলেও তা কিনতে ভোক্তাকে ব্যয় করতে হয়েছে ৯৫০-১০০০ টাকা। এর সঙ্গে বাধ্যতামূলক অন্যান্য ঈদপণ্যের কেনাকাটা করতে হয়েছে। আর খোলা পামওয়েল ও সয়াবিন বিক্রি হয়েছে প্রতিলিটার ২০০-২১০ টাকা পর্যন্ত। দাম বেশি দিয়েও অনেক ক্রেতা তেল না পেয়ে খালি হাতে ঘরে ফিরেছেন। টানা কয়েকদিন সরকারী ছুটি এবং বাজার অভিযান অনেকাংশে কমে যাওয়ার সুযোগ নিয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। কৃত্রিম সঙ্কটের মুখে ভোক্তাদের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর থেকে বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হলেও ঈদের ছুটির কারণে ভোজ্যতেলের বাজার পুরোপুরি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ভোজ্যতেলের বাজার স্বাভাবিক করতে ঈদের বন্ধের পর প্রথম কার্যদিবস বৃহস্পতিবার জরুরী বৈঠক করেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
ওই বৈঠকে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স এ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশনের উর্ধতন কর্মকর্তা, মিল মালিক প্রতিনিধি এবং ট্যারিফ কমিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে উত্থাপিত ভোজ্যতেলের নতুন মূল্য কার্যকর করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন ১৮০, প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৯৮, প্রতি পাঁচ লিটারের ক্যান ৯৮৫ এবং প্রতিলিটার সুপার পাম খোলা ১৭২ টাকায় কিনতে হবে ভোক্তাকে। মূল্য তালিকা নির্ধারণ সংক্রান্ত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়- আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও অপরিশোধিত পামতেলের মূল্য উর্ধমুখী প্রবণতা বিবেচনায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স এ্যান্ড বনস্পতি এ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক পরিশোধিত সয়াবিন পরিশোধিত পামতেলের মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব দফতরের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে যা শুক্রবার থেকেই বাজারে কার্যকর হবে। তিনি বলেন, এখন থেকে খুচরা বাজারে নতুন মূল্য অনুযাযী ভোজ্যতেল বেচাকেনা হবে। নির্ধারিত দামের বাইরে বেশি নেয়া হলে জেল-জরিমানার মতো শাস্তি পেতে হবে বলে বৈঠকে ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে পর্যাপ্ত ভোজ্যতেল মজুদ রয়েছে। এ নিয়ে ভোক্তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই।
এদিকে, সম্প্রতি ভোজ্যতেলের মজুদ পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ইন্দোনেশিয়া রফতানি বন্ধ করলেও আগামী দুই মাসের চাহিদা পূরণের মতো তেল মজুদ রয়েছে। এ নিয়ে অস্থিরতার কোন কারণ নেই। ভোক্তারা নির্ধারিত মূল্য দিয়ে ভোজ্যতেল কিনতে পারবেন। এদিকে, নতুন দাম অনুযায়ী পাঁচ লিটারের বোতলজাত ক্যান তেলের সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে। এক লাফে ৭৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৮৫ টাকা করা হয়েছে। এতে করে প্রতি পাঁচ লিটারে একজন ভোক্তাকে আগের চেয়ে ২২৫ টাকা বেশি খরচ করতে হবে। জানা গেছে, দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদার ৮০ শতাংশের বেশি আমদানি করে পূরণ করা হয়। সাত থেকে আটটি প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত তেল আমদানি করে পরিশোধন করে বাজারে ছাড়ে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান বীজ আমদানি করেও তা ভাঙিয়ে তেল উৎপাদন করে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, এ বছর ১ মার্চ থেকে মে মাস ৫ তারিখ পর্যন্ত প্রায় দুই মাসে সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ৯২ হাজার টন। যা অন্য বছরের চেয়ে কিছুটা কম। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমদানিতে উৎসাহ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশে দামের পার্থক্যকে দায়ী করছেন। তাঁরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম অনেক বেশি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সর্বশেষ গত ২০ মার্চ বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৬০ টাকা নির্ধারণ করে। তখন পাঁচ লিটার বোতলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৭৬০ টাকা। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন প্রতিলিটার ১৩৬ এবং পামঅয়েল প্রতিলিটার ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এই দামের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে ভোক্তাদের ভোজ্যতেল কিনতে হয়েছে। মিল মালিকরা বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করছেন। আমদানি পর্যায়ে তিন স্তরে ৩০ শতাংশ ভ্যাট কমানো হলেও ভোজ্যতেলের দাম কমেনি। বরং আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে ভোজ্যতেলের দাম। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়া ভোজ্যতেল রফতানি বন্ধের ঘোষণা দিলে বিরাট সুযোগ আসে ব্যবসায়ীদের সামনে। আর সেই সুযোগের কারণে দেশে প্রতিনিয়ত ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, খুচরা বাজারে এখন সবচেয়ে বেশি থাকার কথা বসুন্ধরা গ্রুপ, সিটি, মেঘনা, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল, টিকে ও সেনা কল্যাণ সংস্থার তেল। এই ছয় কোম্পানি এপ্রিল মাসে (১-২৮) আট কোটি লিটার সয়াবিন তেল বাজারজাত করেছে। এ ছয়টিসহ দেশে এখন মোট সাতটি কোম্পানি সয়াবিন তেল বাজারজাত করছে। সয়াবিন তেল আমদানি করে প্রথমে জাহাজ থেকে কর্ণফুলী নদীর তীরে কাস্টমস বন্ডেড ট্যাঙ্ক টার্মিনালে রাখা হয়। সেখান থেকে পরিশোধন করে বাজারজাত করার জন্য শুল্ক কর পরিশোধ করে খালাস করে নিয়ে যায় কোম্পানিগুলো। দেশের ভোজ্যতেলের বাজার মূলত আমদানিনির্ভর। এ কারণে আন্তর্জাতিক বাজারের দামের ওপর তেলের দাম অনেকটা নির্ভর করে। যদিও অর্থনীতিবিদদের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক বাজারে দর বাড়ার কারণে দেশের বাজারে দর যতটা বাড়ে, তার চেয়ে বেশি বাড়ে স্থানীয় বাজারের কারসাজির কারণে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে বিশ্ববাজারে সয়াবিনের দামে অস্থিরতা শুরু হয়। আর্জেন্টিনা রফতানি সীমিত করার ঘোষণা এবং ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রফতানি বন্ধের ঘোষণার পর দাম বাড়ার নতুন নতুন রেকর্ড হয়। চলমান পরিস্থিতিতে ভোজ্যতেলের বাজার পরিস্থিতি ও সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গত কয়েক মাস ধরে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।
এ ছাড়া সংস্থাটির পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্রের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে ভোক্তারা। সংস্থাটির পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার এ প্রসঙ্গে বলেন, গত কয়েকদিনে বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন পাইকারি বিক্রেতা ও ডিলারকে অবৈধ মজুদের দায়ে শাস্তি দেয়া হয়েছে। কারণ তেলের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কায় তারা পণ্যগুলো মজুদ করে রেখেছেন। কাওরান বাজারে বিস্্মল্লিাহ ট্রেডার্স নামের একটি পাইকারি দোকান থেকে দুই হাজার লিটার তেলের মজুদ উদ্ধার করা হয়েছে। অথচ তারা কয়েকদিন ধরে তেল নেই বলে ক্রেতাদের বার্তা দিচ্ছিল। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরে বিভিন্ন পাইকারি দোকানে বিভিন্ন পণ্যের আড়াল থেকে মজুদ তেল উদ্ধারের তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি ডিলার ও পাইকারি বিক্রেতারা তেলের মজুদ করছেন। আমরা এর বিরুদ্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নেব। এ ধরনের দোকানগুলোকে এক মাসের জন্য বন্ধ রাখা হবে।
আমদানির বিকল্প উৎস খোঁজা হচ্ছে : ইন্দোনেশিয়া রফতানি বন্ধ করার পর এবার বিকল্প উৎস থেকে সব ধরনের ভোজ্যতেল আমদানির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পামঅয়েল ও সয়াবিন তেল আনা হবে মালয়েশিয়া, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে সরকার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস কিংবা বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাণিজ্যিক উইং থেকে ভোজ্যতেল আমদানির ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এবার ভোজ্যতেল আসবে আরও পাঁচ দেশ থেকে। এ কারণে ভোজ্যতেল নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর। চাহিদা মেটাতে এক সময় রান্না ও শিল্প উৎপাদনে ব্যবহৃত দেশের বাজারের বেশিরভাগ পামতেল আমদানি করা হতে মালয়েশিয়া থেকে। তবে দামের পার্থক্যের কারণে দেশের পাম তেলের বাজার এখন প্রায় পুরোটাই চলে গেছে ইন্দোনেশিয়ার হাতে। পাম তেলের ৯০ শতাংশের বেশি আসছে দেশটি থেকে। অন্যদিকে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সয়াবিন তেল উৎপাদিত হয় চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে চীন ১ কোটি ৮০ লাখ টন ও যুক্তরাষ্ট্র ৮০ লাখ টন সয়াবিন তেল উৎপাদন করে, যা বিশ্বের মোট উৎপাদন প্রায় ৪৫ শতাংশ।
এ ছাড়া সয়াবিন উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭তম। তবে বাংলাদেশের সয়াবিন বীজ দিয়ে ভোজ্যতেল করা হয় না। মাছের খাবার, পোল্ট্রিফিডসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয়। এর পাশাপাশি দেশে ভোজ্যতেল হিসেবে সরিষা, সূর্যমুখী এবং রাইন ব্রান তেল ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এসব তেলের দাম বেশি হওয়ার কারণে ভোক্তা আকর্ষণ নেই বললেই চলে। অভিজাত ও ধনাঢ্য শ্রেণীর ভোক্তারা রান্নায় সূর্যমুখী ও রাইস ব্রান তেল ব্যবহার করেন। তবে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাজারে সূর্যমুখী তেলের সরবরাহ কমে গেছে। কারণ এই তেল উৎপাদন হয় শুধুমাত্র রাশিয়া এবং ইউক্রেনে। চলমান যুদ্ধের কারণে সূর্যমুখী তেলের আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে।
এ অবস্থায় ইন্দোনেশিয়ার বিকল্প উৎস হিসেবে মালয়েশিয়া ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে পামঅয়েল ও সয়াবিন তেল আমদানি করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে মালয়েশিয়া থেকে আমদানি আরও বাড়ানো হবে। অন্যদিকে নতুন করে চীন, আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভোজ্যতেল আমদানি করা যায় কিনা সে বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া শুরু হয়েছে। যদিও ব্রাজিল থেকে কিছু সয়াবিন তেল আমদানি করা হচ্ছে। তবে দাম বেশি পড়ায় ইন্দোনেশিয়া থেকেই সিংহভাগ ভোজ্যতেল আমদানি করা হচ্ছিল। এবার বিকল্প উৎস থেকে তেল আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েল সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ভোজ্যতেল আমদানি ও আন্তর্জাতিক বাজারের দিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ইন্দোনেশিয়া তেল রফতানি কমানোর ঘোষণা দেয়ার পর থেকে বিকল্প বাজারের চিন্তা মাথায় রেখে কাজ করা হচ্ছে।