পানি ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্রের সীমানা ছাড়িয়ে অনেক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচনা জরুরী হয়ে পড়ে। এর মূল কারণ আন্তঃসীমান্ত নদী প্রবাহ। চীন থেকে একটি নদীর উৎপত্তি হয়ে ভারত-বাংলাদেশ হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে শেষ হয়। বাংলাদেশ, ভারত কিংবা চীন চাইলেই এককভাবে এই নদীর পানি ব্যবস্থাপনা করতে পারে না। ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তি চীনের তিব্বত এলাকায়। সাংপো নামে এটি চীনের ভূখন্ডে প্রবাহিত হয়ে ভারতের অরুণাচল ও অসম রাজ্য হয়ে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। অসম ভ্যালিতে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও দুটি উপনদী। সাংপো নদীতে চীন বেশ কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ভারত ও বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র নদের পানির প্রবাহ কমে যাবে। এ নিয়ে ভারত ইতোমধ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। চীনের প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পানি প্রবাহ ধরে রাখার জন্য ভারত বড় জলাধার নির্মাণসহ কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে পানি প্রবাহ তলানিতে ঠেকবে। এই সমস্যা সমাধানে তিন দেশের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত নদী ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার জাপানের কুমামোটো শহরে ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য পানির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং পরবর্তী প্রজন্ম’ প্রতিপাদ্য নিয়ে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী পানি সম্মেলনে এক ভিডিও বার্তায় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, চলমান কোভিড-১৯ মহামারী থেকে পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠন উদ্যোগ ‘বিল্ড ব্যাক বেটারের’ জন্য একটি উন্নত পানি ব্যবস্থাপনা জরুরী। এজন্য আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি ব্যবস্থাপনায় অববাহিকাভিত্তিক পদ্ধতি প্রহণ করতে হবে।
আন্তঃসীমান্ত পানি ব্যবস্থাপনার আলোচনা অনেকদিনের। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তঃনদীর সংখ্যা ৫৪টি। সব নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতে। বাঁধ ও জলবিদ্যুতসহ এসব নদীতে ভারতের নানা প্রকল্প বাংলাদেশের পানি সঙ্কট সৃষ্টির দায়ী বহুলাংশে। দুই দেশের পানি বণ্টন নিয়ে স্বাধীনতার পর থেকেই আলোচনা চলছে। গঠিত হয়েছে যৌথ নদী কমিশন। অনেক আলোচনার পর ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গঙ্গার পানি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি হয়েছে। এখনও ৫৩টি নদীর পানি প্রবাহের নিষ্পত্তি হয়নি। তিস্তার পানি নিয়ে আলোচনা চলছে একযুগ ধরে। এখন পর্যন্ত চুক্তি হয়নি। মিয়ানমানের সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশের অভিন্ন তিনটি নদী। মোট ৫৭টি আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আন্তর্জাতিক আইন। কোন দেশই এই আইন অমান্য করতে না। স্বাভাবিকভাবেই পানির হিস্যা নিয়ে তৈরি হয় বিরোধ। প্রতিটি দেশের অভ্যন্তরীণ পানি ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে করতে হলে নদীগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল দেশের যৌথ উদ্যোগ ও চুক্তি জরুরী। আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো আলোচনায় বসলে প্রত্যেক দেশের পানি ব্যবস্থাপনাই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হতে পারে।