জ্বালানিতে এ বছর দরকার হবে ১০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি

3

কাজিরবাজার ডেস্ক :
জ্বালানি খাতে এ বছর ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি প্রয়োজন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্ববাজারে হঠাৎ জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় পেট্রোবাংলা এবং পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের এই ভর্তুকির প্রয়োজন হবে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নয় হাজার ৩০৭ কোটি টাকার ভর্তুকির প্রস্তাব করা হয়েছিল। এই ভর্তুকির বিপরীতে অর্থ বরাদ্দ চাইলে অর্থ বিভাগ থেকে এক হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি সচিব আনিছুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, কয়েক বছর ধরেই জ্বালানি খাতে কোনও ভর্তুকি ছিল না। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম স্থিতিশীল থাকায় তেল আমদানি করে বিক্রির পরও বিপিসি লাভ করেছে।
সম্প্রতি এলএনজি এবং জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনছে বিপিসি এবং পেট্রোবাংলা। ফলে সরকারকে ভর্তুকি দিয়েই জ্বালানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হচ্ছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, এখন স্পট মার্কেট থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ (ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) ৩২ থেকে ৩৬ ডলারের নিচে এলএনজি কেনা যাচ্ছে না। এখন বাড়তি দামে তিনটি এলএনজির কার্গো কেনা হচ্ছে। এতে সব মিলিয়ে সরকারের ২ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে। এর বাইরেও জ্বালানি তেলেও বিপুল পরিমাণ লোকসানের কারণে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়তে শুরু করেছে।
জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, এখন অক্টোবর মাস চলছে। নভেম্বর থেকেই শীতের হাওয়া বইতে শুরু করলে বিদ্যুতের চাহিদা কমতে শুরু করবে। এখন যে আড়াই হাজার মেগাওয়াটের মতো কুলিং লোড (এসি)-এর জন্য বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় তা লাগবে না। ফলে ওই আনুপাতিক হারে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো যাবে। তবে কুলিং লোড না থাকলেও ওই সময়ে সেচ মৌসুম শুরু হয়। ফলে তখন আবার ডিজেলের ওপর চাপ বেশি পড়বে।
জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বছরের শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার মতো ভর্তুকি প্রয়োজন হবে। কিন্তু এখন মনে করা হচ্ছে এই অর্থের প্রায় চারগুণ ভর্তুকি প্রয়োজন হবে। এত ভর্তুকি জোগাড় করাটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অন্য খাতে চাপ পড়বে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগের এক বৈঠকে ভর্তুকির বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। তখন জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান তিন কার্গো এলএনজির বিষয়টি সমন্বয় করে ভর্তুকির প্রস্তাবটি রিভাইজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
জানতে চাইলে জ্বালানি সচিব আনিছুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বাড়ছে। ফলে আমাদের বেশি দামে এলএনজি কিনে এনে কম দামের আমাদের দেশের গ্যাসের সঙ্গে মিশ্রিত করে বিক্রি করতে হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া অনেক দিনের। এজন্য সরকার সব সময়ই এসব খাতে কিছুটা ভর্তুকি দিয়েই আসছে। আমরা এরমধ্যে ভর্তুকি কি পরিমাণ হতে পারে তা জানিয়ে অর্থ বিভাগে চিঠি দিয়েছিলাম। তারা কিছু বরাদ্দ দিয়েছেও। আমরা আবার ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য নিয়ে হিসাব করছি, যাতে ডিসেম্বর পর্যন্ত কত হতে পারে তার ধারণা পাওয়া যায়। সে হিসাব করে আবারও চিঠি দেবো আমরা। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম যদি এমনই থাকে তাহলে জ্বালানি নির্ভর দেশগুলোর জন্য তা অসহনীয় হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে কি করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করছি আমরা।