ওসমানীনগর থেকে সংবাদদাতা :
সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোজাহারুল ইসলামের জন্মদিন পালনকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম চলাকালে বড়কর্তার জন্মদিন ঘিরে সহকর্মীদের আনন্দের উচ্ছ্বাস ও ফুলের শুভেচ্ছা বিনিময়ের কয়েকটি ছবি ফেসবুকে প্রকাশের পর থেকে উপজেলা জুড়ে সমালোচনার জড় উঠতে দেখা যাচ্ছে।
জানা যায়, গত ১৩ এপ্রিল ছিলো ওসমানীনগর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোজাহারুল ইসলামের জন্মদিনকে ঘিরে তাজপুর উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রস্থ অস্থায়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপজেলায় কর্মরত মেডিকেল অফিসার, নার্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচ সিপিসহ বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা আসেন শুভেচ্ছা জানাতে। ওই দিন ওই কর্মকর্তার জন্মদিনকে ঘিরে দিনভর অস্থায়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছিলো সহকর্মীসহ ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের আড্ডা। দিনভর ফুলের শুভেচ্ছায় শিক্ত হলেও ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা পাননি বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে। ওই দিন বিকালে অফিস পাড়ায় জন্মদিনের শুভেচ্ছা বিনিময়ের কয়েকটি ছবি নিজের ফেসবুকে আপলোড করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মোজাহারুল ইসলাম। পরে স্থানীয় কয়েকজন সেই ছবি স্কিন শর্ট দিয়ে নিজের টাইমলাইনে আপলোড দিতেই শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। সিলেট জেলা মোটরসাইকেল ইঞ্জিনিয়ারিং এসোসিয়েশনর সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান সাদিকও সেই স্কিন শর্ট নিজের ফেসবুকে আপলোড করেন। সেখানে অনেকেই পক্ষে বিপক্ষে কমেন্ট করে ঝড় তুলেন সমালোচনার। এম.ডি মিঠু খান নামের একজন সেই কমেন্টে লিখেন, একটা হোটেল ভাড়া করলেই তো হয়। শিপন আহমদ নামের একজন লিখেন বিনোদন!, তারেক মিয়া নামের একজন লিখেন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে জন্মদিন পালন না করাই ভালা। রাসেল আহমদ নামের একজন কমেন্ট লিখেন উনাকে দেখে ত আমার ডাক্তারই মনে হয় না। মিজান আহমদ সুজন নামের একজন কমেন্টে লিখেন হায় রে মানুষ অফিসে জন্মদিন পালন, নিজের বাসায় করইন না কেনে। ওসমানীনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার আফতাব আহমদ লিখেন, এরা স্বাধীন দেশে জন্মগ্রহন করেছে তাই তারা সব সময় ইচ্ছা মতো চলতে পারে। আমরা তো!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোজহারুল ইসলাম ওসমানীনগরে যোগদানের পর থেকে উপজেলার কিমিউনিটি ক্লিনিক ও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা সেবা নাজুক থাকলেও একটি উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে অস্থায়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘোষণার মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীদের নিয়ে দিন ব্যাপি নানা মনোরঞ্জনে ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে। বিকাল বেলা সেই ছবিগুলো নিজের ফেসবুক আইডিটে আপলোড দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উন্নতি হচ্ছে বলে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন। উপজেলার অস্থায়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আউটডোর সার্ভিসের নামে সকল মেডিকেল অফিসারদের একত্রিত করে দিনব্যাপী খোশগল্পসহ নানা ফটো সেশনে ব্যস্থ থাকায় অস্থায়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে রোগীরা হচ্ছে সেবা বঞ্চিত।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তাজপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আগে যে পরিমান সেবা পাওয়া যেত এখন উপজেলা অস্থায়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘোষণার পর থেকে সেটাও পাওয়া যাচ্ছে না। তাজপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে অস্থায়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কার্যালয় ঘোষণার পর ৭জন মেডিকেল অফিসার যোগদান করলেও সাধারণ মানুষের ভাগ্যে প্রকৃত চিকিৎসা সেবা জুটছে না। কর্মরত চিকিৎসকরা ব্যস্থ থাকেন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে বাণিজ্যিক রফা দফা নিয়ে কিংবা অলস সময় কাটে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মোহাজারুল ইসলামের কক্ষে। হাসপাতালে আগত সেবাগ্রহিতাদের সেবা দেন অফিস সহায়ক ও কম্পাউন্ডাররা। সপ্তাহের অধিকাংশ সময়ই সেবাগ্রহিতাদের ভাগ্যে সরকারী ঔষধও জুটে না। এ ক্ষেত্রে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের সাধারণ বক্তব্য হাসপাতালে ঔষধ শেষ হয়ে গেছে পরে আসেন। কিন্তু সরকারী ঔষধ পাওয়ার আসার দিনের পর দিন হাসপাতালে বারান্দায় ধর্না দিয়ে সরকারী ঔষধ পান না বলে জানিয়েছেন ভোক্তভোগিরা। তবে অভিযোগগুলো অস্বীকার করে ওসমানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোজাহারুল ইসলাম বলেন, আমার জন্মদিন ছিলো সেটা কাজের চাপে আমরাই মনে ছিলো না। সারা দিন অফিসের কাজে শহরে ছিলাম। বিকালে অফিসে আসলে কয়েকজন সহকর্মী ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। স্বাস্থ্য কমপ্লের্ক্সের ভিতরে অফিস টাইমে জন্মদিনের জন্য আলাদা কোনো অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি।