স্পোর্টস ডেস্ক :
করোনাভাইরাসের প্রভাবে জুনে হতে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর স্থগিত হয়ে গেছে। আর তাতে করে হতাশা প্রকাশ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার অফ স্পিনার নাথান লিয়ন। তার হতাশ হওয়ারই কথা। উপমহাদেশে তার বোলিং যে কার্যকর। তিনি উপমহাদেশের মাটিতে খেলতেও যে পছন্দ করেন।
লিয়ন এ নিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সফরে যাওয়া হবে না। এটা খুবই হতাশার। এই সফরটা দলের জন্য অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ হতে পারত। বাংলাদেশ এমন একটা জায়গা, যেখানে আমি ব্যক্তিগতভাবেও চ্যালেঞ্জ অনুভব করি। সেখানে খেলতে উপভোগ করি আমি। সূচীর ব্যাপারে বলব, আইসিসি এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া নিশ্চয়ই যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবে আবার মাঠের খেলা শুরুর ব্যাপারে।’
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দুটি টেস্ট খেলার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়ার। ১১ জুন চট্টগ্রামে প্রথম ও ১৯ জুন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ সফর স্থগিত হয়ে গেছে। লিয়নের ৯৬ টেস্ট খেলা হয়ে গেছে। বাংলাদেশের মাটিতে দুটি টেস্ট খেলতে পারলে ৯৮ টেস্ট খেলা হয়ে যেত। টেস্টে ৩৯০ উইকেট নেয়া এ স্পিনারের সামনে ১০০তম টেস্ট খেলার মাইলফলক এবং ৪০০ উইকেট নেয়ার সুখস্মৃতি অপেক্ষা করছে। ৭০৮ উইকেট নেয়া কিংবদন্তি লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্নের পর অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সফল স্পিনার লিয়ন। তবে অফ স্পিনে লিয়নই সেরা। এশিয়ার মাটিতে তো লিয়নের নৈপুণ্যের জুড়িই শুধু খুঁজে পাওয়া যায়। ১৯ টেস্ট খেলেই ৯৫ উইকেট শিকার করে ফেলেছেন লিয়ন। উপমহাদেশের উইকেট এমনিতেই স্পিনারদের জন্য সবচেয়ে কার্যকর। সেখানে খেলতেও স্পিনাররা মুখিয়ে থাকেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর স্থগিত হওয়ায় তা আপাতত পারছেন না লিয়ন। বাংলাদেশ সফর স্থগিত হলেও, এখনও সম্ভাবনা রয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অস্ট্রেলিয়া সফরের। অসিদের ক্রিকেট মৌসুম শুরুই হবে সেই চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজ দিয়ে। ওই সিরিজের মধ্য দিয়েই ১০০ টেস্ট খেলার মাইলফলক অর্জন করবেন লিয়ন। ভারতের বিরুদ্ধেও খেলতেও উত্তেজনা অনুভব করছেন তিনি। লিয়ন বলেছেন, ‘ভারত আসবে অস্ট্রেলিয়াতে, এ সিরিজটি জন্য আমি রোমাঞ্চিত। এ্যাশেজের পাশাপাশি এটিই এখন বিশ্বের অন্যতম বড় সিরিজ। তারা নিঃসন্দেহে বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম শক্তিশালী দল। মাঠে দর্শক থাক বা না থাক (করোনার কারণে), আমাদের নির্দেশনা মেনেই খেলতে হবে। আমি এটাকে দেখছি ভারতের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ হিসেবে। গতবার তারা সিরিজ জিতে গেছে। তবে এবার আমরা আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী।’ গত ১০ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর স্থগিত হওয়া নিয়ে ঘোষণা আসে। ঘোষণায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) যৌথ বিবৃতি দেয়। যেখানে বিসিবি থেকে প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন বলেন, ‘এটা খেলোয়াড়, সমর্থক ও দুই দলের জন্যই হতাশার। কোভিড-১৯ মহামারী রূপ নেয়ায় এখন যে বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে বিসিবি ও সিএ (ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া) ঐকমত্যে পৌঁছেছে যে এটাই এখন সবচেয়ে সুবুদ্ধিপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত। আশা করি শীঘ্রই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আমরা আশা করি, নিকট ভবিষ্যতে সুবিধাজনক সময়ে সিরিজটা আয়োজন করতে পারব। অস্ট্রেলিয়া বোর্ড আগেও আমাদের সহযোগিতা করেছে। ভবিষ্যতেও সিএর সঙ্গে কাজ করে যাবে বিসিবি।’ সিএ এর প্রধান নির্বাহী কেভিন রবার্টস বলেছেন, ‘আমরা জানি বৈশ্বিক ক্রিকেটের ক্যালেন্ডারটা খুব ব্যস্ত। আমরা সবই করার চেষ্টা করব যাতে বাংলাদেশকে দেয়া প্রতিশ্রুতিকে সম্মান জানানো হয়। আলোচনার ভিত্তিতে একটি তারিখ ঠিক করে সে অনুযায়ী কাজ করব।’
দুই বোর্ড মিলে ঐক্যমত হয়ে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগেই অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক টিম পেইন এ নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এই মুহূর্তে আমার মনে হয় না বাংলাদেশ সফর হবে, বিশেষ করে জুন মাসে। কিন্তু এখানে দুইটি টেস্ট খেলা হবে এবং তা না হলে আমরা খুব মিস করব।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘খুব সম্ভবত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সব খেলা শেষ করার জন্য টানা পাঁচ সপ্তাহও মাঠে থাকা লাগতে পারে খেলোয়াড়দের। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলা এবং শিরোপা জেতা এখন লক্ষ্য। আমার মনে হয়, সব ক্রিকেটারই চাইবে, যে কোনভাবেই হোক এটি (টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ) শেষ করতে। কিন্তু তা যদি না হয়, বুঝতে হবে, বিশ্বে এই মুহূর্তে আরও বড় কিছু ইস্যু আছে। সেই ইস্যুর চেয়ে কিছু টেস্ট ম্যাচ মিস করা আমাদের খুব একটা ভোগাবে না।’ পেইন টেস্ট চ্যাম্পিয়ন শেষ করতে চান। কিন্তু তা কী দ্রুত করা সম্ভব। আগামী বছর জুনে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুই ফাইনালে ওঠা দলের মধ্যে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ হওয়ার কথা। কিন্তু তা কী এখন আর সম্ভব? যা বোঝা যাচ্ছে, তাতে সম্ভব নয়।
লিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর স্থগিত হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করলেও বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুমিনুল হক কিন্তু হতাশ নন। তার কাছে যা হয়েছে ভালই হয়েছে। মন্দের ভাল দেখেছেন তিনি। মুমিনুল বলেছেন, ‘ক্রিকেট ক্যালেন্ডারে অনেক পরিবর্তন আসবে। আমাদের ম্যাচ যেহেতু টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সঙ্গে জড়িত, তাই কেউই বলতে পারে না যে ম্যাচ হবে না। ২-৩ মাস পর ম্যাচ হতে পারে। পরের বছরেও হতে পারে। সবার মনে করা উচিত যে ম্যাচ হবে। তাহলে সবাই অনুপ্রাণিত হতে পারবে।
আমরা যদি চিন্তা করি ম্যাচ হবে না, তাহলে প্রেরণা খুঁজে পেতে কষ্ট হবে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমি সিরিজটা (অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে) স্থগিত হওয়ায় তেমন একটা হতাশ না। বরং পরবর্তীতে সিরিজটা আমাদের পূর্ণ শক্তি নিয়ে খেলার দুয়ার খুলে দিয়েছে। কারণ যদি সিরিজটা আগামী বছরে গিয়ে পড়ে, তবে আমরা দলে সাকিব ভাইকে ফিরে পাব। সাকিব ভাই দলে থাকলে এমনিতে সবাই উজ্জীবিত থাকেন।
তাকে ছাড়া দলে আমার অতিরিক্ত একজন বাঁ-হাতি স্পিনারের দিকে ঝুঁকতে হয়। একদিন থেকে সিরিজটা স্থগিত হওয়া তাই ভালই বলতে হবে। সিরিজটা যদি আগামী বছরের এপ্রিলে হয় আমরা আরও প্রস্তুত সাকিব ভাইকে পাব। অধিনায়ক হিসেবে আমি অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিরুদ্ধে আমাদের সেরা ক্রিকেটারকে নিয়ে খেলতে চাইব।’ মুমিনুল হতাশ নন। বরং সুযোগ দেখছেন। তবে হতাশ লিয়ন।