লবীব আহমদ কোম্পানীগঞ্জ থেকে :
কোম্পানীগঞ্জের দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নে মাদকের অবাধ বিচরণে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর বারবার প্রতিবাদেও বন্ধ হচ্ছে না মাদকের ক্রয়-বিক্রয়। দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে এই এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের সুন্দাউরা, দরাকুল ও গৌরীনগর গ্রামে অবাধে মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের হাট বসে। প্রতিদিনই বহিরাগত লোকজন আসছে মাদক সেবন করতে। বিভিন্ন অজুহাতে এলাকার সচেতন মহলকে ফাঁকি দিয়েই চলছে মাদক বিক্রি ও সেবন। এই এলাকায় প্রাইভেট কার, জিপ, সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল দিয়ে চলছে দিনে-দুপুরে অবাধে মাদকের বিচরণ। দেখে বুঝার উপায় নাই এটা কোন সভ্য সমাজ বা পুলিশের নিয়ন্ত্রণের ভিতরের এলাকা। এলাকার ছাত্রসমাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংগঠন মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেও প্রশাসন থেকে ততটা ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তবে পুলিশ বলছে তারা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে এবং অনেক মাদক ব্যবসায়ীকে ধরে চালান করেছে। কিন্তু জেল থেকে এসে সে আবার মাদক বিক্রির সাথে জড়িয়ে পড়ে।
এদিকে দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন ইমাদ দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থা নিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সময় পুলিশের সহযোগিতায় মাদক ব্যবসায়ীদের শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু তাতে কোন কাজ না হওয়ায় গত ২ এপ্রিল তিনি তার পরিষদের সকল সদস্য ও মহিলা সদস্যদের নিয়ে মাদক, চুরি ও ডাকাতি নির্মূলে সামাজিক কমিটি গঠন করেন। দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সকল সদস্যদের স্বাক্ষরিত পেড থেকে জানা যায়, এই কমিটি মাদক, চুরি ও ডাকাতি প্রতিরোধে উঠান বৈঠক, মাদক কারবারিদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় এনে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া সহ বিভিন্ন সহযোগিতা করবে। তার পরেও যদি কেউ মাদক, চুরি ও ডাকাতির সাথে জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের খাগাইল বাজারের প্রবেশমুখ সুন্দ্রগাঁও ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে পুলিশ মাঝেমধ্যে গাড়ি আটকিয়ে অভিযান চালালেও মাদকসেবিরা গোয়াইনঘাটের পিয়াইনগুল উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে মহিষখেড় হয়ে সহজেই বিনা বাধায় দরাকুল-সুন্দাউরা গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে। প্রতিদিনই মাদকসেবীদের এমন বিচরণ দেখে ৫ এপ্রিল রাতে মহিষখেড় গ্রামের যুবকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তারা মাদকসেবীদের বেশ কয়েকটি গাড়ি আটকায়। এতে ধরা পড়ে বেশ কয়েকজন মাদকসেবনকারী। পরে এলাকার সালিশী বৈঠকে তারা আর মাদক সেবন করতে আসবে না মর্মে স্টাম্পে দস্তখত রাখা হয়। এমন সময় স্থানীয় চেয়ারম্যানের উপস্থিততে তাদেরকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য র্যাব পরিচয় দানকারী ২ জন লোক এসে তাদেরকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘ ২/৩ বছর থেকে তারা মাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যাচ্ছেন কিন্তু প্রশাসন তাদেরকে তেমন সহযোগিতা করছেন না। প্রশাসনের জোড়ালো ভূমিকা না থাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা অবাধে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আর যারা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করতেছে, তাদেরও দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। তবে মাঝে মধ্যে পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে জেল হাজতে গেলেও অল্প দিনে জামিনে বের হয়েই আবারও চলছে তাদের এই অবৈধ ব্যবসা। এমন ওপেন মাদকের ছড়াছড়িতে সন্তানদের নিয়ে অনেকটা আতঙ্কে রয়েছেন অভিভাবকেরা।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন ইমাদ বলেন, দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন বর্তমানে যেন মাদকের জন্য নিরাপদ জায়গা! বারবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সভায় মাদক নির্মূলে জোরালো দাবি জানানোর পরও তেমন কোনো সাড়া পাই নি৷ আমি গত ২ তারিখে ইউনিয়ন পরিষদে সকল সদস্যদের নিয়ে একটা রেজুলেশন পাস করি। সকল সদস্যদের মতামত নিয়ে ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। তারপরও যদি না কমে, তাহলে আঞ্চলিকভাবে তাদের বয়কট করা হবে এবং পরিষদ থেকে যা যা করার তা করা হবে।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী জানান, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। বহিরাগত কেউ প্রবেশ করলে তাদের তল্লাশি করা হচ্ছে। এবং যারাই মাদক বিক্রির সাথে জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মাদক নির্মূলে যা যা করা দরকার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।