মৃত বলে জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আসামি করা হয়নি – প্রধানমন্ত্রী

7
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাদশ জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সঙ্কটের বিষয়ে বাংলাদেশ অত্যন্ত সতর্ক রয়েছে জানিয়ে বলেছেন, আমরা সরকার গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত উন্নয়নের ক্ষেত্রে যত ঋণ নিয়েছি তা সময়মতো পরিশোধ করেছি। বাংলাদেশই একটি দেশ, যে দেশ কোনদিন ঋণ পরিশোধে ডিফল্টার (খেলাপী) হয়নি, হবেও না। সেদিক থেকে আমাদের অর্থনীতির ভিত্তি অনেক মজবুত, সেটাও আমি বলে রাখতে চাই। তবে আমরা অত্যন্ত সতর্ক।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডে জিয়াউর রহমান সরাসরি জড়িত ছিল বলে আবারও উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর দুই আত্মস্বীকৃত খুনী ফারুক-রশীদ বিবিসিতে ইন্টারভিউ দিয়ে বলেছে; জিয়াউর রহমান এই খুনের সঙ্গে ছিল। মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণেও তার জড়িত থাকার কথা উঠে এসেছে। যেহেতু মৃত ব্যক্তিকে আসামি করা যায় না, তাই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় জিয়াউর রহমানকে আসামি করা হয়নি।
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় শ্লোগান ঘোষণা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর মšী ¿সভাকে ধন্যবাদ জানাতে কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধিতে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনা এবং পরে জাতীয় সংসদ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সংবিধানের সত্তর অনুচ্ছেদ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদ আছে বলেই রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা আছে, ভারসাম্য আছে- এটা হলো বাস্তবতা। অন্যপথে যারা ক্ষমতা দখল করতে যায় তাদের কাছে যেন সত্তর অনুচ্ছেদ নিয়ে প্রশ্ন আছে। সত্তর অনুচ্ছেদ দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে স্থিতিশীল রাখা হয়েছে এটাই বাস্তবতা। এখন সংবিধানে এটাও রয়েছে যে, অবৈধভাবে যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে তাদের ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট (সর্বোচ্চ দন্ড) পর্যন্ত হবে।
জাতীয় সংসদে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় শ্লোগান ঘোষণা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর মন্ত্রী সভাকে ধন্যবাদ জানাতে কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধিতে ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান। সেই প্রস্তাবের ওপর সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ছাড়াও সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে স্পীকার ভোটে দিলে দেশের জনগণের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর মন্ত্রিসভাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতক্রমে পাস হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জিয়া সরাসরি জড়িত : বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের মামলা প্রসঙ্গে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডে জিয়াউর রহমান সরাসরি জড়িত। খুনী রশীদ-ফারুকের বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাতকারে আছে জিয়াউর রহমান এই খুনের সঙ্গে ছিল।
কেন জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি করা হয়নি তার ব্যাখ্যা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন মামলা হয় এবং ইনডেমনিটি প্রত্যাহারের পর যখন মামলা করতে গেলাম তখন আমি বললাম জিয়াউর রহমানের নামও থাক। কারণ সে-ই আসল খুনী। তখন আমাকে এটাই বলা হয়েছিল যে, যেহেতু সে (জিয়া) এখন মৃত, তাকে আসামি করে লাভ নেই। তখনকার স্বরাষ্ট্র সচিব আমাকে এটাই বলেছিলেন- তাকে আসামি করা যাবে না। তিনি বললেন জিয়ার নামটা দেয়া ঠিক হবে না, যেহেতু সে মৃত। সে কারণে জিয়ার নামটা মামলায় দেয়া হয়নি।’
‘জয় বাংলা’ শ্লোগানের প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে এ প্রসঙ্গে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিরাজুল আলম খান যে শ্লোগান দিয়েছেন সেটাও বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু স্টেজে বসে নির্দেশ দিয়েছিলেন শ্লোগান ধর, তারপর সিরাজুল আলম খানরা জয় বাংলা শ্লোগান ধরেছিল।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ শেষ করেন জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে। এরপর সেই শ্লোগান হয়ে যায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল, তাদের মুখে ছিল জয় বাংলা শ্লোগান। জয় বাংলা শ্লোগান আলাদা উদ্দীপনা সৃষ্টি করত। তিনি বলেন, আমরা যে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কাছে বন্দী ছিলাম, আমরা কিন্তু সব সময় জয় বাংলা শ্লোগান দিতাম। ১৬ ডিসেম্বর যখন পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে আমরা তখনও বন্দী। আমরা কিন্তু তখনও মুক্তি পাইনি। মুক্তি পেয়েছিলাম পরদিন ১৭ ডিসেম্বর। কিন্তু ওই বন্দীখানায় আমরা জয় বাংলা শ্লোগান দিয়েছি।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান জয় বাংলা শ্লোগান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছিল উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, ১৯৭৫-এর ১৫ আগষ্টের পর জয় বাংলা শ্লোগান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। এই শ্লোগান দিতে গিয়ে আমাদের ছাত্রলীগের কত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। এই শ্লোগান দিলেই নানান ধরনের কথা বলত, অনেক অপপ্রচার করত। ঠিক পাকিস্তানী সেনাবাহিনী যারা সেই সময় বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে, বাংলাদেশের মেয়েদের তুলে নিয়ে ক্যাম্পে নির্যাতন করেছে, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে ছাড়খার করেছে, ঠিক তারা যে কথাগুলো বলত, তারা যে সমস্ত ব্যঙ্গ করত- ’৭৫-এর পরে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ঠিক সেই কাজই করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমানের অনুসারী বিএনপির এক নেতা হারুনুর রশীদ আজও সংসদে বক্তব্য দিলেন, তাঁর বক্তব্যে বোঝা গেল তাদের মানসিকতা। তার বক্তব্যে প্রমাণিত, এরা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তারা স্বাধীনতাতেই বিশ্বাস করে না। এদের অন্তরে এখনও পেয়ারে পাকিস্তান রয়ে গেছে। পাকিস্তানের গোলামিটাই তারা পছন্দ করে, ওটাই তাদের প্রিয়। হারুন সাহেবের বক্তব্যে বোঝা গেল তাদের হৃদয়ে যে পেয়ারে পাকিস্তান সেটিই প্রমাণিত।
জিয়াউর রহমানকে খুনী বলায় বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ক্ষোভ প্রকাশ করলে তার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনীকে কেন খুনী বলবে না। ১৯৮৭ সালে খালেদা জিয়া এবং কর্নেল ফারুক ফোনে কথা বলছে সেটার ছবি আছে। খুনী রশিদের সাক্ষাতকারেও আছে জিয়াউর রহমান এই খুনের সঙ্গে ছিল। মৃত বলে তার নাম মামলায় দেয়া হয়নি। কিন্তু মামলার প্রসিডিংস যখন শুরু হয়, সাক্ষী নেয়া হয় তখন ন্ত এটা স্পষ্ট যে জিয়াউর রহমান এই হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাই যদি না হবে খন্দকার মোশতাক তাকে (জিয়া) একেবারে সঙ্গে সঙ্গেই সেনাপ্রধান করবে কেন? এগুলো তো রেকর্ডেড। এটা যতই অস্বীকার করুক, বাস্তবে এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
সংসদ নেতা বলেন, ’৭৫-এর পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করেছিল। আমাদের জয় বাংলা শ্লোগান ধ্বংস করেছিল। জাতির পিতার নাম নিষিদ্ধ করেছিল। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল। আজকে তা আন্তর্জাতিক মর্যাদা পেয়েছে। তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণকে এটাই বলব- যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে তখনই বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়েছে। কারণ, আমরা দেশের সাধারণ মানুষের উন্নতি চাই। স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় থাকলে এ দেশ তো উন্নতি করবে না। জয় বাংলা শ্লোগান জাতীয় শ্লোগান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, মর্যাদা পেয়েছে। এজন্য জাতিকে ধন্যবাদ, জনগণকে ধন্যবাদ। এই চেতনা নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে আর কেউ পেছনে ফেলতে পারবে না।
শ্রীলঙ্কা সঙ্কটে বাংলাদেশ সতর্ক : শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সঙ্কটের বিষয়ে বাংলাদেশ অত্যন্ত সতর্ক বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের এ সংক্রান্ত বক্তব্যের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শ্রীলঙ্কার বিষয়টি নিয়ে, এটা বাস্তব। তবে আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে এ পর্যন্ত উন্নয়নের ক্ষেত্রে যত ঋণ নিয়েছি তা সময়মতো পরিশোধ করছি। বাংলাদেশ একটি দেশ, যে দেশ কোনদিন ঋণ পরিশোধে ডিফল্টার হয়নি, হবেও না। সেদিক থেকে আমাদের অর্থনীতির ভিত্তি অনেক মজবুত। সেটা আমি বলে রাখতে চাই।
দ্রব্যমূল্যসহ জাতীয় জীবনের নানা সমস্যা নিয়ে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা যেসব কথা বলেছেন. আমাদের সংবিধান পাঠদান করিয়েছেন। তার প্রতিটির উত্তরই আছে। সময় এলে তার সবগুলোর জবাব দেব।
জিএম কাদেরের সংবিধান নিয়ে দেয়া বক্তব্যের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য হলোÑ এমন একটি দলের থেকে সংবিধানের বিষয় শুনতে হচ্ছে, যে দলটি (জাতীয় পার্টি) ক্ষমতায় এসেছিল সংবিধান লঙ্ঘন করে, ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে মার্শাল ল জারি করে। মার্শাল ল’র মাধ্যমে যাদের জন্ম, যার নেতা ক্ষমতাই দখল করেছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতিকে বিদায় দিয়ে- সেনাপ্রধান হয়ে গেলেন রাষ্ট্রপ্রধান। যে সংবিধান স্থগিত করে তারা ক্ষমতায় এসেছিল, সেই দলের নেতার মুখ থেকে আজকে আমাদের সংবিধান শিখতে হচ্ছে। সংবিধানের ব্যাখ্যা শুনতে হচ্ছে।
করোনা ও যুদ্ধের ধাক্কায় দাম কিছুটা বেড়েছে : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বিরোধীদলীয় উপনেতার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একে তো করোনা, তার ’পর ইউক্রেনে যুদ্ধ। সমস্ত ইউরোপে সাড়ে সাত ভাগের ওপর মূল্যস্ফীতি। কোন কোন দেশে ৮০ ভাগ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি হয়ে গেছে। এটা হয়েছে একটা করোনার ধাক্কায় আরেকটা যুদ্ধের ধাক্কায়। সেখানে বাংলাদেশে আমাদের ৬ ভাগের নিচে আছে মূল্যস্ফীতি। বিরোধী দলের উপনেতা বলেছেন, মাথাপিছু আয়ও যেমন বেড়েছে, সেই সঙ্গে দ্রব্যমূল্যও বেড়েছে। এটা হলো বাস্তব।
তিনি বলেন, এই করোনার ধাক্কার মধ্যেও আমরা প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯৪ ভাগ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। মাথাপিছু আয়ও বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৫১১ মার্কিন ডলার হয়েছে। জিনিসের দাম বাড়লেও মানুষের আয় বেড়েছে। দারিদ্র্যসীমাও হ্রাস পেয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি-জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকতে বিদেশ থেকে কোন জিনিস কেনার সময় ১০ টাকার জিনিস ২০ টাকায় কিনে বাকি ১০ টাকা পকেটে ঢুকাত। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে সেটা হয় না। আমরা বরং দাম কমিয়ে আনি।
উন্নয়ন কার জন্য : সময়মতো প্রজেক্ট শেষ না হওয়া বিষয়ে জিএম কাদেরের বক্তব্যের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, আমরা পায়রা পাওয়ার প্লান্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার আটমাস আগে উদ্বোধন করেছি। এতে প্রায় ৮০ কোটি টাকা বেঁচে গেছে। আমরা প্রত্যেকটি কাজ আগে করি, কিছু টাকা বাঁচাই।
উন্নয়নে জনভোগান্তির অভিযোগের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, উন্নয়ন কার জন্য? এই মেট্টোরেল কার জন্য? মেট্টোরেল এদেশের সাধারণ মানুষের জন্য। মানুষ যাতে সরাসরি চলাচল করতে পারে সেজন্য। উন্নয়ন তো এদেশের সাধারণ মানুষের জন্য। মানুষ তো চলাচল করতে পারে তারজন্য। এখন হয়ত আপাতত কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এটা সম্পন্ন হওয়ার পর মেট্টোরেলে উত্তরা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে ৬০ হাজার লোক যাতায়াত করতে পারবে। তখন অনেকেই গাড়ি ব্যবহার করবেন না। আজকে আমরা শতভাগ বিদ্যুত দিতে সক্ষম হয়েছি।
প্রকল্পের খরচ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, করোনার কারণে জিনিসের দাম বেড়েছে। রড, সিমেন্ট-প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। এটা কেবল আমাদের দেশে নয়, সব দেশে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ার জন্য আমেরিকার অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এক ডলারের তেল চার ডলার হয়ে গেছে। কোন কিছুর দাম বাড়লে তার সঙ্গে এ্যাডজাস্টমেন্ট করে নিতে হয়। না হলে আমাদের কাজ সম্পন্ন হবে না।
নিত্যপণ্যের মূল্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোটা চালের দাম এখন ৪৬ টাকার মতো আছে। সেটা খুব বেশি বাড়েনি। চিকন মাঝারি চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। আলু পাইকারি বাজারে ২০ টাকা, খুচরা বাজারে ২৫ টাকা। পেঁয়াজের দামের জন্য এখন কৃষক হাহাকার করছে। বেগুনের দাম ১১০ টাকার ওপর চলে গেল। সেটা এখন কমে আশি টাকায় এসেছে। তা বেগুন দিয়ে বেগুনি না খেয়ে আরও যেসব সবজি সহজলভ্য আছে সেটা দিয়ে খেলেই হয়। আমরা তো তাই খাই। বেগুনি না বানিয়ে মিষ্টি কুমড়ো দিয়ে খুব ভালো বেগুনি বানানো যায়। আমরা এভাবে করি। সেভাবে করা যায়।
জিনিসপত্র মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মানুষ যাতে বেশি কষ্ট না পায় সেই পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। যানজট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অতিরিক্ত গাড়ি এখন রাস্তায় চলে। সবাই ট্রাফিক রুল মেনে চললে আর গাড়ি কম বের করলে যানজট তো থাকে না। গাড়িতেও চড়বেন, একেকটি পরিবার দুই/তিনটি গাড়ি বের করবেন, আবার ট্রাফিক জ্যাম হলে গালি দেবেন- এটা তো চলবে না।
নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন প্রণয়নের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় সেই ব্যবস্থাটা আমরা করেছি। গ্যাস সঙ্কট নিয়ে তিনি বলেন, প্রাকৃতিক কারণে একটু সমস্যা হয়েছে। কয়েকদিন গ্যাসের ছয়টা কূপে বালু দেখা দিয়েছে। তারপরও ঠিক করে সেটা কোনমতে চালু রাখা হয়েছে, গ্যাস তোলা বন্ধ হয়নি। কিন্তু অন্য সময় হলে এটা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেত। চারটা কূপ সংস্কার করা হয়েছে, দুইটা বাকি আছে। সেটাও হয়ে যাবে। এই সমস্যাটা থাকবে না।