জামালগঞ্জ সংবাদদাতা
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় স্বামীর সাথে অভিমান করে দুই ছেলে ও এক মেয়ে মেয়েকে নিয়ে মা যমুনা খাতুন নামে এক নারী বিষপান করেছেন। বিষক্রিয়ায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন সন্তানেরই মৃত্যু হয়। অপরদিকে মায়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই নারীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
ঘটনার খবর পেয়ে হাওর থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে স্বামী জাহাঙ্গীর হোসেনকে আটক করেছে জামালগঞ্জ থানা পুলিশ। রবিবার সকালে উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামে এ মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় পুরো গ্রাম জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম তিন সন্তানের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, আশঙ্কাজনক অবস্থায় মা যমুনা খাতুনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন- জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের জেলে জাহাঙ্গীর হোসেনের মেয়ে সাকিবা বেগম (১৫), ছেলে তামবির হোসেন (১৩) ও ৫ বছরের শিশু সাহেদ মিয়া।
জামালগঞ্জ থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হাওরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে কোন রকমে অভাব-অনটনের মধ্যদিয়ে স্ত্রী সন্তানসহ ৫ জনের সংসার চালাতেন জাহাঙ্গীর হোসেন। কিন্তু মাছ বিক্রির সেই অল্প টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো স্বামী-স্ত্রীকে। টানপোড়নের সংসার চালনা নিয়ে প্রায় সময়ই তাদের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দিত। এমতাবস্থায় প্রতিদিনের ন্যায় শনিবার সকালে জাহাঙ্গীর হাওরে মাছ ধরে সেই মাছ বিক্রি করে রাতে বাড়ি এসে রাতের খাবার খেয়ে স্ত্রী যমুনা খাতুনের কাছে মাছ বিক্রির দেড় হাজার টাকা তুলে দেন। এ সময় যমুনা খাতুন স্বামী জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞেস করেন আজ কতো টাকার মাছ বিক্রি করেছো? উত্তরে জাহাঙ্গীর জানায় তিন হাজার টাকার। এ সময় স্ত্রী বাকি দেড় হাজার টাকার হিসেব চাইলে স্বামী জাহাঙ্গীর জানায়- দেড় হাজার টাকার দেনা পরিশোধ করেছি। এ সময় স্ত্রী স্বামীকে বলে তোমার কিসের এতো দেনা, দেনা পরিশোধ করেছো নাকি জুয়া খেলে টাকা খুইয়ে এসেছো? স্ত্রীর এমন কথার পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াঝাটি ও বাকবিতÐা হয়।
এরপর রবিবার সকালে প্রতিদিনের ন্যায় স্বামী জাহাঙ্গীর হাওরে মাছ ধরতে বাড়ি থেকে চলে যান। এ সময় স্ত্রী যমুনা খাতুন স্বামীর সাথে অভিমান করে ঘরে থাকা মিষ্টির সাথে বিষ মিশিয়ে ৫ বছরের শিশুসহ তিন সন্তানকে নিয়ে সেই মিষ্টি খান। এ সময় প্রতিবেশীরা তাদের গোঙানির শব্দ শুনে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন সন্তানের মৃত্যু হয় এবং মা যমুনা খাতুনের অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
জামালগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দিলীপ কুমার দাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, ঘটনার খবর পেয়ে হাওর থেকে পালানোর চেষ্টাকালে থানা পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে স্বামী জাহাঙ্গীরকে আটক করেছে। বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
০০৩