সাগরেই বিলিন গোয়াইনঘাটের ফয়সলের স্বপ্ন

28

কে.এম লিমন গোয়াইনঘাট থেকে :
গোয়াইনঘাট উপজেলার নব গঠিত ১২নং সদর ইউনিয়নের হোয়াউরা গ্রামের ফয়সলের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। ছেলের শোকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন মা বিলাতুন নেছা। ছেলেকে ফিরে পেতে কান্নার শেষ নেই পিতা হবি মিয়ারও। দেড় মাস আগে লিবিয়া থেকে প্লাস্টিকের নৌকায় করে ইতালির পথে রওয়ানা হয়ে সাগরের মাঝেই দুর্ঘটনায় সলিল সমাধির ধারণা করা হচ্ছে ফয়সলসহ অপরাপর ২৮ জন অভিবাসীর।
সরেজমিনে হোয়াউরা গ্রাম পরিদর্শনকালে ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায় যে, গেল বছরের নভেম্বর মাসে লিভিয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে পাড়ি জমায় ফয়সল। সেখান থেকে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি লিভিয়ার দালাল মাধ্যমে সাগর পথে প্লাস্টিকের ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে ইতালির উদ্দেশ্যে ৩০ জন অভিবাসী রওয়ানা হন। উত্তাল সাগরে টেউয়ের তোড়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয় তাদের বহনকারী ইঞ্জিন চালিত নৌকাটি। সূত্রমতে ৯ ঘন্টার পথে ৮ ঘন্টা অতিক্রম করার পর দুর্ঘটনায় পতিত হয় ইঞ্জিন নৌকাটি। ঐ ৩০ জনের মধ্যে ৬ জন সাগর সাতরে পারে উঠতে পারলেও বাকিদের সলিল সমাধির আশংকা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার পর পরই ইতালি থেকে ফয়সলের বড় ভাই ফারুক দালালসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে ফেসবুক মাধ্যমে যোগাযোগ করলেও এদের কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
জানা যায় ৩০ জন অভিবাসীর মধ্যে সবাই বাংলাদেশী। সাগরে নিখোঁজ ফয়সলের ব্যাপারে জানতে তাদের বাড়ীতে গেলে মা বিলাতুন নেছা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। অঝরে কাঁদছিলেন বাবা হবি মিয়াও। ছেলের শোকে বার বার তারা মুর্চা যাচ্ছিলেন তারা। শোকাতুর পরিবেশে সেখানকার বাতাস ভারি হয়ে উঠে। ছেলের ছবি দেখিয়ে মা বিলাতুন নেছার করুণ আর্তনাদে বিলাপ করছিলেন অপরাপর আত্মীয় স্বজনও।
বাড়ীর উঠানে বেঁধে রাখা হয়েছে একটি গরু। যা বাজার থেকে কিনে আনা হয়েছে নিখোঁজ ফয়সলের সন্ধান লাভে শিরণীর জন্য। বিভিন্ন পীর, কবিরাজ, গুণিন ব্যক্তি ও জিন সাদকদেরও সহযোগিতা চাওয়া হয় তার সন্ধানে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
কথা হলে বড় ভাই খলিল মিয়া জানান, আমাদের ৬ ভাই ২ বোন। ফারুক নামের এক ভাই ইতালিতে থাকে। লিবিয়া থেকে সাগর পথে সহজে ৯ ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে ইতালিতে ঢুকা যায়। সেখানে অভিবাসীরা সহজে নাগরিকত্ব লাভ এবং কর্মসংস্থান পায়। এমন সুযোগ সন্ধানে ইতালি প্রবাসী ভাইয়ের সূত্রে লিবিয়ার দালালদের মাধ্যমে ফয়সলেরও ইতালি যাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়। কথা মত দালালদের টাকা দিয়ে নৌ-পথে পাড়িও জমায় ফয়সল। কিন্তু উত্তাল সাগরের টেউ আচড়ে পড়ে তাদের ইঞ্জিন নৌকাটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে সাগরেই তাদের সলিল সমাধির আশংকা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার পর থেকে অদ্যাবধি ফয়সলের কোন হদিস পাওয়া যায় নি। নিখোঁজ ছেলে ফয়সলের ছবি হাতে নিয়ে তার মা বিলাতুন নেছার কান্না নিত্যকার ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে বলে জানান গ্রামের অগণিত মানুষজন।