বাজারে বহুল প্রচলিত ও বিক্রীত নাপা বা প্যারাসিটামল খেয়ে আবারও শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে দেশে। ১০ মার্চ রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে হতভাগ্য শিশু দুটির মৃত্যু ঘটে বলে মায়ের অভিযোগ। যে কোম্পানির নাপা সিরাপ খেয়ে শিশু দুটির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে সেটি একটি বিখ্যাত ওষুধ কোম্পানি, যার রয়েছে বিশ্বখ্যাতি। অনেক দেশে এই কোম্পানির ওষুধ রফতানি হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএর তালিকাভুক্ত কোম্পানি এটি। কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে দোকান থেকে ওষুধ কেনা হয়েছে সেটির কোন অনুমোদন ছিল না ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের। অবশ্য সারাদেশেই এমনকি রাজধানীতেও অগণিত ফার্মেসি রয়েছে যেগুলো অনুমোদনহীন। প্রতিদিন প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব দোকান থেকে নকল, ভেজাল ও অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে ক্রেতাদের কাছে। সংশ্লিষ্ট দফতরের অভিযানে মাঝে মধ্যে ধরা পড়াসহ যৎসামান্য জেল জরিমানা করা হলেও এর দৌরাত্ম্য কমেনি আদৌ। ঘটনা তদন্তে গঠিত হয়েছে ৪টি কমিটি। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর নাপা সিরাপে ক্ষতিকর উপাদান খুঁজে পায়নি।
ওষুধশিল্প একটি স্পর্শকাতর বিষয়। মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্নটি এর সঙ্গে জড়িত ওতপ্রোতভাবে। পাশাপাশি খাদ্য ও পথ্যের বিষয়টিও উঠতে পারে। ভেজাল খাদ্য যেমন মানুষের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, অনুরূপ ভেজাল ও নকল-মানহীন ওষুধ বিপন্ন করে তুলতে পারে মানুষের জীবনকে। আর তাই ওষুধের মান ও দাম নিয়ে হেলাফেলা তথা শৈথিল্য প্রদর্শনের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। উন্নত বিশ্বে ওষুধের দাম ও মান নিয়ন্ত্রণ করা হয় কঠোরভাবে। এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এ্যান্ড ড্রাগ এ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এফডিএ একটি আদর্শ উদাহরণ। বাংলাদেশেও অনুরূপ একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সরকারী সংস্থা গঠন করা যেতে পারে, যারা সর্বদাই ওষুধের দাম ও মান নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট থাকবে। ওষুধনীতি অনুযায়ী ১৪০০ জেনেরিক আইটেমের মধ্যে ১২০০ ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ওষুধ কোম্পানিগুলো। মাত্র ১১৭টি ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের দায় সরকার তথা ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের। ১৯৯৪ সালের ওষুধনীতিতে ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বর্তায় কোম্পানিগুলোর কাছে। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো যথেচ্ছ মুনাফার মনোভাব নিয়ে নানা কারসাজির মাধ্যমে বাড়িয়ে দিচ্ছে ওষুধের দাম। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের বসে থাকার সুযোগ নেই। অতঃপর ভেজাল ওষুধের দাপট এবং ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে তারা জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেই প্রত্যাশা।