গোয়াইনঘাট থেকে সংবাদদাতা :
জীবিকার তাগিদে টানাপোড়েনের সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হন নারীরাও। ফলে পরিবারের চাহিদা মেটাতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা আসেন সিলেটের সীমান্ত জনপদ গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং ও বিছনাকান্দি এলাকায়। এরপর সেই সব নারীরা যোগ দেন পাথরের ক্রাশিংয়ের মতো কঠিন কাজে।
সেখানেই কথা হয় জামালগঞ্জ থেকে পাথরের ক্রাশিংয়ের মতো কঠিন কাজ করতে আসা সংগ্রামী আয়শা বেগমের সঙ্গে তিনি বলেন, পাথরের ক্রাশিং সাইটে আসলে অশান্তি, আবার বাড়ি থাকলেও অশান্তি। পাথরের সাইটে কাজ পাওয়া যায় না। মজুরি নিয়ে নানাজনের নানা কথা। নিজেদের খাওয়া, বাচ্চাগুলার পড়াশুনা খরচ কোত্থেকে আসবে? মানুষের বাড়িত কাজ নেই। তাই পাথরের কাজ করি।
এদিকে এক ক্রাশার মেশিনে বড়-ছোট পাথর মাথায় নিয়ে কাজ করছে ময়মনসিংহ থেকে আসা মরিয়ম ধূলোবালি দিয়ে সারা শরীর একাকার। মুখও দেখে চেনা যায় না। কাজ করে চলে যাচ্ছেন নারী পুরুষ সকলেই, দম ফেলার সময় নেই। জানতে চাইলে তিনি প্রায় ফুঁসে ওঠেন। তিন সন্তান, স্বামী ও নিজে মোট পাঁচটি মানুষের খাবার জোগাড় করতে তাকে প্রতিদিন পাথরের কাজে নামতে হয়। আজকাল তেমন একটা শ্রমিকের চাহিদাও নেই।
জাফলং এলাকার বাসিন্দা জাইরুন পাথরের কাজ করছিলেন। সংবাদকর্মী জেনে বলেন আমাদের কথা নিয়ে আর কি হবে? লিখলে কি কাজকাম পাওয়া যাবে? স্বামী ছিলেন দিনমজুর। এলাকায় তেমন কোনো কাজ নেই। তাই অভাবের সংসারের তাগিদে পাথরের কাজে নেমে পড়েন তিনি।
শুধু জাইরুন-মরিয়ম- আয়শা নয়, জাফলং ও বিছনাকান্দি এলাকায় হাজারো নারী শ্রমিক এভাবে পাথরের কাজে জীবিকা নির্বাহ করছে। আর মাঝেমধ্যে ভারতে পাথরের দাম বৃদ্ধি বা কোন জটিলতায় পাথর আমদানি বন্ধ থাকলে বিপাকে পড়তে হয় তাদের। আবার সমস্যা মিটলে আমদানি শুরু হয়। প্রায় প্রতিদিন আট ঘণ্টা কাজ করতে গিয়ে অনেকের শরীরে চর্মরোগ বাসা বেঁধেছে।
অধিকাংশ নারী শ্রমিক শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন। এত কষ্ট করেও ন্যায্য মজুরি পায় না তারা।
হবিগঞ্জ থেকে আসা আমেনা বেগম বলেন, সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাজ করে মাত্র ৩০০ টাকা মজুরি পাই। কিন্তু তা পরিশ্রমের তুলনায় অনেক কম।
সুনাম গঞ্জের আঞ্জুমান বিবি বলেন, এক সময় এলাকায় কৃষি কাজ পাওয়া যেত। বাড়ির উঠানে শাকসবজিও হতো। এখন আর কৃষির ভালো ফলন নেই। সংসারে তিন ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া ও ভরণপোষণের জন্য নিজ এলাকা ছেড়ে স্বামী-স্ত্রী মিলে পাথরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
জাফলং স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস উদ্দিন লিপু বলেন গরিব অসহায় মহিলারা বিভিন্ন জেলা থেকে জাফলংয়ে এসে কাজ করছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে পাথর ক্রাশিং মেশিনে কর্মরত রয়েছেন। আমরা সমিতি ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে তাদেরকে সম্মানজনক মজুরি দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি।