বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা

3

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের পাঠ, চর্চা ও গবেষণার নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ সম্পর্কে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য প্রয়োজনীয় পাঠ্যপুস্তকের অভাবও প্রকট। তদুপরি রয়েছে বৈজ্ঞানিক পরিভাষা তথা যথাশব্দ প্রয়োগের সমূহ সঙ্কট। ফলে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের প্রধানত ইংরেজী পাঠ্যপুস্তকের ওপর নির্ভর করে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হয়। পুঁথিগত মুখস্থ বিদ্যার মাধ্যমে পরীক্ষা কার্য চালিয়ে নেয়া যায় বটে, তবে আত্মস্থ করা যায় না। ফলে উচ্চপর্যায়ে আরও পঠন-পাঠন ও গবেষণার সুযোগ থাকে না তেমন। সোমবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টির প্রতি সমধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ রচনা পাঠ ও গবেষণা করতে গিয়ে সেগুলো যেন কোনভাবেই পরিভাষা কণ্টকিত না হয়। তাহলে সেসব পরিভাষা আমরা বুঝতে পারব না, শিখতেও পারব না, গবেষণা তো দূরের কথা! সুতরাং বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার ক্ষেত্রে যেসব শব্দ বহুল প্রচলিত ও ব্যবহৃত এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সেগুলো গ্রহণ করতে হবে বাংলায়। বাংলা ভাষায় ৮ হাজার ভাষা মিলেমিশে আছে। সুতরাং রক্ষণশীল থেকে পরিভাষার ওপর নির্ভর না করে সেসব শব্দই গ্রহণ করতে হবে এবং বাংলাভাষায় বিজ্ঞান চর্চা চালিয়ে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এই কাজটি এগিয়ে নিতে পারে, যাতে প্রাধান্য পাবে বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণা।
প্রসঙ্গত বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলার কথা উঠতে পারে অনিবার্যভাবে। মেলায় প্রতিবছর নতুন বই প্রকাশ হয় কয়েক হাজার। বই বিক্রির পরিমাণ প্রায় শত কোটি টাকা। এতগুলো বইয়ের মধ্যে মানসম্মত ও পাঠোপযোগী কয়টি? যে একুশে ও ভাষা আন্দোলন নিয়ে আমরা গর্ব করি এবং যেটি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত, সে সম্পর্কেও বইমেলায় গ্রন্থের অভাব প্রকট। একই কথা প্রযোজ্য মুক্তিযুদ্ধের বইয়ের ক্ষেত্রেও। বিজ্ঞান, প্রকৌশল, চিকিৎসা বিজ্ঞানের বই নেই বললেই চলে। এত দৈন্য, এত অপ্রতুলতা কেন? প্রকাশকরা বলছেন, এ বিষয়ে ভাল গবেষণা ও পাণ্ডুলিপির অভাব প্রকট। আজকাল লেখকরাও কেন যেন পাঠকপ্রিয় ও চটুল বই লিখতেই সমধিক আগ্রহী। সিরিয়াস বই লেখালেখিতে তরুণদের তেমন আগ্রহ নেই বললেই চলে। তা কেন হবে? তরুণ প্রজন্ম যদি ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলন, দেশ-কাল-কৃষ্টি-ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি-সমাজ-নৃতত্ত্ব-বিজ্ঞান-প্রকৌশল-চিকিৎসাবিদ্যা ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক না জানে, তাহলে দেশ ও জাতি সমৃদ্ধ ও সুশিক্ষিত হবে কিভাবে? শুধু মোবাইল, স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, ফেসবুকে আসক্ত হলে তো একটি দেশের তরুণ প্রজন্ম বিজ্ঞান ও মননে যথার্থ অর্থে আধুনিক ও শিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠতে পারে না। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বহু প্রত্যাশিত বইমেলা তরুণ প্রজন্মের সেই আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে পারছে না। অনেকটা এ কারণেই বইমেলার সাফল্য ও সার্থকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে প্রতি বছর। তদুপরি অধিকাংশ বই অসম্পাদিত, ভুলবাক্য ও ভুল বানানে ভর্তি, ছাপা-বাঁধাই দুর্বল- যেটি রীতিমতো দৃষ্টিকটু ও পীড়াদায়ক। নিয়মিত জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চা ও অনুশীলনের মাধ্যমে এহেন দুরবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব।