শান্তিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
শান্তিগঞ্জে পুলিশের নির্যাতনের ঘটনায় নিহত উজির মিয়ার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে বিকাল ৩ টায় পাগলা সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের মাঠে নিহতের জানাযা শেষে পাগলা বাগেরকোনা পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়েছে। মৃত্যুকালে ২ মেয়ে স্ত্রী সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
জানাযায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক আহমদ, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী আবুল কালাম, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রেজাউল আলম নিক্কু, সহকারী পুলিশ সুপার শুভাশিস ধর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আব্দুল হেকিম, সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, কেন্দ্রীয় যুবলদলের সদস্য আনছার উদ্দীন, উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা পরিকল্পনামন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী হাসনাত হোসেন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক নুর হোসেন, পশ্চিম পাগলা ইউপি চেয়ারম্যান জগলুল হায়দার, সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল হক, শান্তিগঞ্জ থানার ওসি কাজী মুক্তাদীর হোসেন সহ উপজেলার বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংঘটনের সহস্রাধিক জনতা। এদিকে পুলিশের বর্বর নির্যাতনে অকালে ঝরে যাওয়া উজির মিয়ার পরিবারে বইছে শোকের মাতম। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী উজির মিয়াকে হারিয়ে কান্নার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন তারা। উজির মিয়ার ২ সন্তান বাবা বাবা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে বারবার। নিহত উজির মিয়ার ভাই ডালিম মিয়া ও পরিবারের লোকজন জানান, আমার নির্দোষ ভাইকে পুলিশ মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমরা জড়িত পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করব এবং হত্যাকারীদের ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথাও বলেন তারা।
উল্লেখ্য যে, উজির মিয়ার পরিবারের লোকজন জানান, বিগত ১০ থেকে ১২দিন আগে একই উপজেলার দরগাপাশা এলাকা থেকে একটি গরু চুরি হয়েছিল। এতে পুলিশ এই চুরির অভিযোগে পাগলা এলাকার শত্রুমর্দন বাগেরকোনা গ্রামের উজির মিয়াকে ৯ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাতে শান্তিগঞ্জ থানার এসআই দেবাশীষ, এসআই পার্ডন কুমার সিংহ ও এএসআই আক্তারুজ্জামান তাকে নিজ বাসা থেকে সন্দেহ মূলক আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
থানায় এনে তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় শরীরের বিভিন্নস্থানে মারধর করে পুলিশ এবং পরের দিন বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) তাকে সুনামগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। পরে গুরুতর আহত উজির মিয়াকে প্রথমে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর এক সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর আত্মীয় স্বজনকে দেখানোর জন্য উজির মিয়াকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বাড়িতে নিয়ে আসার পর অবস্থার অবনতি হলে সোমবার সকালে স্থানীয় কৈতক হাসপাতালে নিয়ে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃতের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা বাজারে রাস্তার মধ্যে নিহত উজির মিয়ার লাশ রেখে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে সুনামগঞ্জ সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক ৩ ঘন্টা অবরোধ করে রেখেছিলেন এলাকাবাসী।
পরে বিকালে সুনামগঞ্জের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আনোয়ারুল হালিম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবু সাঈদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদেরকে আইনের আওতায় সর্বোচ্চ বিচারের আশ্বাস দিলে অবরোধ ভাঙ্গেন এলাকাবাসী।