মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সম্মান

7

সঠিক ইতিহাস একটি রাষ্ট্রের ঐতিহ্য। স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন-সংগ্রামের পরিক্রমা রাষ্ট্রের অহঙ্কার। স্বাধীনতার লড়াইয়ে আত্মত্যাগকারী মানুষগুলো মহিমান্বিত এবং সর্বজন শ্রদ্ধার পাত্র। তাদের প্রতি সম্মান দেখানো রাষ্ট্রের দায়িত্ব। অতীতে এই দেশে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। খন্ডিত করা হয়েছে মুক্তি সংগ্রামের ঘটনাপ্রবাহ। অসম্মান করা হয়েছে স্বাধীনতার মহানায়কদের। একুশ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের মহান মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস এবং দীর্ঘ সংগ্রামের নায়ক-মহানায়কদের সামনে আনতে শুরু করে। একটি বিভ্রান্ত প্রজন্ম নতুন করে জানতে পারে আমাদের দীর্ঘ ঐতিহ্যময় মুক্তি সংগ্রমের ইতিহাস। বদলে যায় অনেক ভুল-ভ্রান্তির চিত্রপট।
এই দেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধকে। তাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা এবং আত্মত্যাগকারী মানুষের মূল্যায়ন আশা করাও ঠিক নয়। শেখ হাসিনার সরকার মুক্তিযুদ্ধকে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ঘটনা, মুক্তি সংগ্রামের প্রধান সৈনিক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠা, মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দান এবং স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি রাজাকার-আলবদরদের মুখোশ উন্মোচন করে জাতিকে দায়মুক্ত করেছে। এসব কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতায় সরকার মুক্তি সংগ্রামে আত্মত্যাগকারীদের মূল্যায়ন অব্যাহত রেখেছে। সর্বশেষ রণাঙ্গনের বীর নারী বীরাঙ্গনাদের জন্য বিনামূল্যে বাড়ি নির্মাণ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
সর্বশেষ গেজেট অনুযায়ী বর্তমানে ৪৫৪ জন বীরাঙ্গনা রয়েছেন দেশে। তারা ইতোমধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন। ইতোমধ্যে আরও বেশ কয়েকজনকে এই তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে মোট ৬৫৪ জন নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাদের ‘বীরনিবাস’ নির্মাণ করে দেয়ার ঘোষণা দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি। বর্তমান সরকার তাদেরকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করেছে। মহিলা ও শিশু বিষয়কমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এই প্রথম নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আলাদাভাবে সম্মানিত করা হলো। জাতির জন্য এটি গর্বের বিষয়। দেশের জন্য আত্মত্যাগকারী বীরাঙ্গনাদের স্বীকৃতি দিয়ে সম্মানের আসনে বসিয়ে গেছেন স্বয়ং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির জনকের যোগ্য সহধর্মিণী, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব নিজে গ্রহণ করেছিলেন এসব বীরাঙ্গনাকে পুনর্বাসনের দায়িত্ব। ’৭৫-এর পটপরিবর্তনের পর আবার অসহায় হয়ে পড়েন এসব নারী। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে আবার তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ইতোমধ্যে তাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে নানাভাবে। তাদের বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মান দেয়া হয়েছে। এবার ঘোষণা দেয়া হয়েছে তাদের জন্য বাড়ি করে দেয়ার। সরকারের এই উদ্যোগ মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আরও এক দফা সম্মান প্রদর্শন করা হলো।