লাগামহীন ভোজ্যতেলের দাম

5

দেশে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। গত কয়েক মাস ধরেই এটা চলছে। সর্বশেষ ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৮ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৬৮ টাকা। খুচরা বাজারে আরও বেশি। খোলা সয়াবিন লিটার প্রতি ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ভোজ্যতেল আমদানিকারক, পরিশোধনকারী ও সরবরাহকারীরা দোহাই দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির। করোনা মহামারীর অজুহাতে চীন এককভাবে বিপুল পরিমাণ ভোজ্যতেল কিনে রেখেছে বলে বর্তমানে ভোজ্যতেলের বাজার চাঙ্গা। তবে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় পাম তেলের দাম কমতির দিকে। তবু দাম বেড়েছে পাম তেলেরও। যেটা দুঃখজনক তা হলো, পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে ভোজ্যতেল আমদানি বন্ধ এবং নতুন এলসি না খোলার হুমকি দিয়ে দাম বাড়ানোর বিষয়টি ভোক্তাদের জিম্মি করার শামিল। বাংলাদেশে যে ৫-৭টি প্রতিষ্ঠান ভোজ্যতেল আমদানি ও পরিশোধন করে বাজারজাত করে থাকে সেগুলো তারা এনেছে কয়েক মাস আগে। বাংলাদেশ আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল থেকে ক্রুড সয়াবিন আমদানি করলেও পাম তেল বেশি আনে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে। শীতকালে পাম তেল জমে যায় বলে পরিশোধন খরচ পড়ে বেশি। ব্যবসায়ীরা এর সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়ে দেন সবরকম তেলের। বর্তমানে পাম তেলের দাম প্রতি লিটার ১৩৩ টাকা। বাজারে যে সয়াবিন তেল বিক্রি হয় তার মান নিয়েও প্রশ্ন আছে বিস্তর। যেমন রয়েছে আটা নিয়ে। আটায় যেমন ভুট্টার আটা মেশানো হয়, অনুরূপ সয়াবিনে মেশানো হয় পাম তেল। যদিও বাংলাদেশের বাজারে সয়াবিন তেলের চাহিদাই সর্বাধিক। বাস্তবতা এই যে, ভোজ্যতেলের কাঁচামাল সয়াবিন, সরিষা, পামফল, চিনাবাদাম, নারিকেল- প্রায় কোনটিই দেশে পর্যাপ্ত হয় না। চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে বিশেষ করে ক্রুড সয়াবিন ও ক্রুড পাম তেল আমদানি করতে হয়। তিন স্তরে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাটও মূল্যবৃদ্ধির জন্য দায়ী। ফলে এর আমদানিকারক ও পরিশোধনকারীরা একচেটিয়া ব্যবসা তথা মুনাফা করার অবাধ সুযোগ পান। অথচ দেশে বিশেষ করে খরিপ মৌসুমে পার্বত্য অঞ্চল, চরাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে বিপুল পরিমাণে সয়াবিন, বাদাম, সরিষা ও পাম গাছ রোপণসহ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারের কৃষি বিভাগের এক্ষেত্রে নজর দেয়া বাঞ্ছনীয়। প্রয়োজনে দেয়া যেতে পারে সহজ শর্তে ঋণ। বর্তমানে ট্রাকসেলে টিসিবির নিত্যপণ্যসহ ভোজ্যতেল বিক্রিও খুব সীমিত।
সরকার ইতোমধ্যে আমদানিনির্ভর না থেকে দেশেই পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর জন্য পেঁয়াজের আবাদসহ উৎপাদন বাড়াতে স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত কয়েক বছরে ধান-চাল, শাক-সবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস উৎপাদনে যথেষ্ট সক্ষম ও স্বাবলম্বী হয়ে উঠলেও পেঁয়াজ, আদা, রসুন, হলুদ, মরিচসহ মসলা এবং তেলবীজ উৎপাদনে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। নিত্যপণ্যের জন্য শুধু বিদেশের ওপর নির্ভরশীল থাকা আদৌ সমীচীন নয়। বিবিধ ভোজ্যতেলের কাঁচামাল দেশেই উৎপাদনের জন্য সহজ শর্তে কৃষিঋণ প্রদান অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।