ইউনিয়ন নেতাদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ॥ ভোটের আগে দ্বন্দ্ব মেটান

39

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় কোন্দলে দল যেন না ভুগে সে জন্য ভোটের আগে সব বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী নির্বাচন নিয়ে যেন কোনো ধরনের দলীয় কোন্দল না হয়। যেসব ইউনিয়ন কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে, সেই দ্বন্দ্ব খুব দ্রুত মিটিয়ে ফেলতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় বক্তব্য রাখার সময় এই নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। সভায় রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধীন প্রতিটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত দলীয় চেয়ারম্যান, মহানগরের অধীন সংগঠনের প্রতিটি ওয়ার্ডের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও দলীয় নির্বাচিত কাউন্সিলার এবং জেলা পরিষদের নির্বাচিত দলীয় সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৩ জুন জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের ডেকে আগামী নির্বাচন নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। আর আগামী ৭ জুলাই ডাকা হয়েছে ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর ও খুলনা বিভাগের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের।
অন্য দল থেকে নেতা-কর্মীদেরকে দলে না আনারও নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘গ্রুপ করতে যেয়ে যারা আমাদের মানুষ হত্যা করেছে, নির্যাতন করেছে, তাদেরকে টানাটানি না করে নিজেরা কর্মী সৃষ্টি করুন।’
‘আওয়ামী লীগকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে, শক্তিশালী করতে হবে, জনসমর্থন বাড়াতে হবে।’
প্রত্যেকটা ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের তথ্য এখন থেকে কম্পিউটারে ডাটাবেজ করে রাখার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘যেন প্রত্যেকটা এলাকায় আমরা জানতে পারি, কোথায় আমাদের কর্মীরা কী করে, সেটা আমরা জানতে পারি।’
‘সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলবেন আর উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যাতে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় সেদিকে আপনারা লক্ষ্য রাখবেন।’
‘উন্নয়নের কথা বারবার বলুন’
সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের বর্ণনা দিয়ে সেগুলো জনগণের মধ্যে তুলে ধরারও তাগাদা দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, জনগণকে এ কথা বলতে হবে বারবার। কারণ, তারা অতীতের কথা ভুলে যায়।
‘মানুষকে বলতে হবে। মানুষ সুখ পেলে দুঃখের দিনের কথা ভুলে যায়। এই সুখটা পেল কীভাবে, সেটাই তাদেরকে বলতে হবে। বারবার তাদের মনে করিয়ে দিতে হবে একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়, ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আসতে পেরেছি বলেই উন্নয়নগুলো আজ দৃশ্যমান হয়েছে। আগে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বলত, বাংলাদেশ মানে ঘূর্ণিঝড়, খরা, বন্যা, ভিক্ষা চায় সাহায়ের টাকা না পেলে বাজেট হয় না, ইত্যাদি। কিন্তু আজকের বাংলাদেশ তা না।’
‘আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল, আন্তর্জাতিক প্রতিটি সংস্থা এটা মেনে চলে। সেই উন্নয়নটা করতে গেলে আমাদের অনেক কাজ করতে হয়।’
সামাজিক বিভিন্ন ভাতা যেন সঠিক মানুষের হাতে যায়, সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি যেন ভালোভাবে বাস্তবায়ন হয়, সেদিকে নজরদারিরও তাগিদ দেন শেখ হাসিনা।
তারা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর সেনা প্রধান থাকা অবস্থায় জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষা, স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমতায় বসানোর উদাহরণ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে।
স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় বসলে দেশে উন্নয়ন হয় না মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘উন্নয়ন হবে কী করে? তারা তো এ দেশের স্বাধীনতাই মানে না।’
আগামী জাতীয় নির্বাচনের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, জাতির পিতার খুনিদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দানকারী এবং তাদের লালন-পালনকারী, দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাসের সাথে জড়িত, মানি লন্ডারিং এর সাথে জড়িত এই সমস্ত গোষ্ঠী যেন আর কোনোদিন বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে না পারে, সেটা আপনাদের দেখতে হবে।’
তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের প্রশংসা
শেখ হাসিনা তার এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা বক্তব্যে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বলেন, ‘উচ্চ পর্যায়ের নেতারা মাঝে মাঝে কিছু ভুল করে, এটা নতুন কিছু না। অভিজ্ঞতা আছ বলেই আমি বলি। বাবা (বঙ্গবন্ধু) যখন ছয় দফা দিয়ে গেল, তখন আট দফা নিয়ে আসল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। পূর্ব বাংলার আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা তখন বলল বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দিয়েছেন, ছয় দফা ছাড়া আমরা কিছু মানি না।’
‘বাংলাদেশে এ রকম বহুবার দেখেছি। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সব সময় ঐক্যবদ্ধ ছিল বলেই বাধ্য হলো ইলেকশন দিতে আর সেই ইলেকশনে বিপুল ভোটে আমরা জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এলাম।’
‘আমাদের শক্তি হলো এই দেশের জনগণ। আমাদের শক্তি হচ্ছে আমাদের সংগঠন, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। এরাই আমাদের বড় শক্তি। যে কারণে যেকোনো সাহসী পদক্ষেপ নিতে আমি কখনও পিছপা হই না।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের শেষে তৃণমূলের আটজন নেতা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন এবং সবার শেষে সমাপনী বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা।