সরকার তথা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নানা উদ্যোগ ও পদক্ষেপ সত্ত্বেও চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না কিছুতেই। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে চালের দাম, যা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে দিশেহারা করে তুলছে। বর্তমানে মোটা চাল প্রতি কেজি ৪৫ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। বাজারে মিনিকেট-নাজির শাইল নামে যেসব চাল বিক্রি হয় সেগুলো প্রতি কেজি ৬৮-৭৫ টাকা। কাটারিভোগ, চিনিগুড়া, কালোজিরা প্রতি কেজির দাম শতাধিক। চালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম। একমাত্র সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি মেলে। চালের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির পিছনে ব্যবসায়ীদের মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার প্রবণতাসহ ১৫টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা অজুহাত দিচ্ছেন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিসহ পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি ও চাঁদাবাজির। পশুখাদ্য, বেকারি আইটেম এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য চালের বাড়তি ব্যবহার হচ্ছে। তবে গত বোরো মৌসুমে এবং বর্তমানে আমনের ফলন আশাব্যঞ্জক হলেও মূলত ব্যবসায়ী, মিল মালিক, আড়তদার ও আমদানিকারকদের কারসাজিতে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না কিছুতেই। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানি বাড়াতে সরকার শুল্ককর ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করলেও ব্যবসায়ীরা তেমন উৎসাহিত হননি। অর্থাৎ পর্যাপ্ত চাল আমদানি করেননি তারা। বর্তমানে ব্যবসায়ীরা শুল্ককর ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, সরকার যদি তাদের দাবি মেনেও নেয় তাহলে কি ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত চাল আমদানি করে দেশের অভ্যন্তরে দাম কমানোর উদ্যোগ নেবেন? সেই নিশ্চয়তা কোথায়?
গত কয়েক মাস ধরে চালের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকার ইতোমধ্যে চালু করেছে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী’। এতে দেশে হতদরিদ্রদের মধ্যে মাত্র ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ তথা বিক্রি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে মোট ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবার স্বল্পমূল্যে প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল পাচ্ছেন। এই কার্যক্রম চলেছে কয়েক মাস। উল্লেখ্য, মাত্র ১০ টাকা কেজি ধরে চাল বিতরণ বর্তমান দরিদ্রবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার। এর পাশাপাশি দেশের সকল সিটি কর্পোরেশন ও পৌর এলাকায় ৭৩৭ ডিলারের মাধ্যমে ওএমএস কর্মসূচীর আওতায় প্রতিকেজি চাল ৩০ টাকা এবং প্রতিকেজি আটা ১৮ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে, যা থেকে প্রতিদিন উপকৃত হচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। সরকারের খাদ্য মজুদও সন্তোষজনক, প্রায় ২০ লাখ টন। তবু বাড়ছে চালের দাম।
ধান-চালের সংগ্রহ মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে সরকার সহায়তা করেছে কৃষককে, যাতে তারা লাভবান হতে পারেন। ধান-চাল বেচাকেনার মাঠ পর্যায়ের খবর হলো কৃষক ধানের ভাল দামে খুশি। জাতীয় বাজেটে কৃষি খাতে যথেষ্ট ভর্তুকি, প্রণোদনা ও সহায়ক কর্মসূচী রাখা হয়েছে। যাতে কৃষকসহ গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার, ফুলফল-সবজি উৎপাদক- প্রায় সবাই উপকৃত হতে পারেন কমবেশি। টিসিবির মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে পুষ্টিচাল। সরকারের মজুদ থেকে চাল বিক্রিসহ আমদানি বাড়ানো হলে চালের দাম সহনীয় হয়ে উঠবে বলেই প্রত্যাশা।