ইজারায় আর্থিক জামানতের বিধান

30

॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥

(পূর্ব প্রকাশের পর)
এডভান্স পদ্ধতি ২ প্রকার : সিকিউরিটি এ্যাডভান্স (নিরাপত্তা অগ্রিম): এ পদ্ধতিতে ঘর বাড়ী দোকান পাঠ ভাড়া দেওয়ার সময় কিছু টাকা অগ্রিম নেওয়া নিয়ে নেওয়া হয়। তবে পরে টাকা গুলো আবার ফেরত দেওয়া হয়। এ টাকা থেকে ভাড়া কর্তন করা হয় না। মালিক ভাড়াটিয়া থেকে এককালীন টাকা নেওয়ার কারন হলো যদি ভাড়াটিয়া কোনো কারনবশত ভাড়া না দিয়ে চলে যায়, তাহলে উক্ত টাকা থেকে ভাড়া কেটে নেওয়া হবে। অনুরুপভাবে যদি ভাড়াটিয়া ঘর বা দোকানের কোনো ক্ষতি করে তাহলে উক্ত টাকা দ্বারা ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে। তা সাধারণত মোটা অঙ্কের হয় না। এক দুই মাসের ভাড়ার পরিমাণ নেওয়া হয়। ঘরভাড়ার ও দোকানের উপভাড়ার ক্ষেত্রে তার প্রচলন বেশি দেখা যায়।
শরয়ী দৃষ্টিকোন থেকে এ পদ্ধতি বৈধ। এ পদ্ধতিতে ভূমির মালিকের কাছে টাকাগুলো আমানত হিসাবে থাকবে। মালিক নিজের প্রয়োজনে খরচ করতে চাইলে টাকার মালিকের কাছে অনুমতি নিতে হবে। এ টাকা ভূমি বাড়ী-ঘর বা দোকান-পাঠের নিরাপত্তার জন্য নেওয়া হয়। যাতে শর্ত ভঙ্গ করলে কোনো আসবাপত্র নষ্ট করলে ক্ষতিপূরণ নিতে পারে। ঘর ভাড়ার ক্ষেত্রে এর প্রচলন বেশি দেখা যায়। এক্ষেত্রে মালিকের অনুমতি ব্যতীত দোকান বা বাড়ী যে কাজের জন্য নিয়েছে তা ছাড়া ভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যাবে না। যদি করে মালিক তখন তাকে উচ্ছেদ করতে পারবে। বাড়ী ভাড়া আইন নিয়ন্ত্রণ ১৯৯১-এর ১৮ (ঘ) নং ধারা মতে বাড়ীর মালিককে এ অনুমতি প্রদান করা হয়। এ ধারা মতে ভাড়াটিয়া বাড়ীর কোন অংশ যদি অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেন বা ব্যবহার করতে অনুমতি দেন তাহলে বাড়ীর মালিক তাকে উঠিয়ে নিজে দখল পুনরুদ্ধার করতে পারেন।
এডভান্সের ক্ষেত্রে তার সুযোগ থাকে না; তবে মাঝে মধ্যে কাউকে শরীক করে একাংশ ভাড়া দিতে পারে। : এ পদ্ধতিতেও ভাড়া দেওয়ার সময় সামান্য কিছু টাকা অগ্রিম নিয়ে নেওয়া হয়। পরে টাকাগুলো আবার ফেরত দেওয়া হয়। তবে এ টাকা থেকে কিছু কিছু ভাড়া কর্তন করা হয়। যেমন মাসিক ভাড়া বার হাজার টাকা হলে ভাড়াটিয়া দশ হাজার টাকা আদায় করে আর বাকী দুই হাজার টাকা উক্ত এককালীন থেকে আদায় করা হয়।
শরয়ী দৃষ্টিকোন থেকে এ পদ্ধতি বৈধ। এক্ষেত্রে এডভান্সের টাকা অগ্রিম ভাড়া হিসাবে গণ্য হবে। যেহেতু অগ্রিম ভাড়া আদায় করা সহীহ; তাই এডভান্সের এ পদ্ধতি ও সহীহ। এখানে টাকা গুলো ভূমি মালিকের কাছে আমানত হিসাবে থাকবে না। মালিক চাইলে এ টাকা প্রয়োজনে খরচ কতে পারবে। বাসা, বাড়ী, অফিস ইত্যাদির ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে এ পদ্ধতির প্রচলন দেখা যায়। তা বৈধ হওয়ার দলিল, আবু হাসান সুগদী (মৃ.৪৬১ হি.) বলেন, মজুরী প্রকার। তা হয়ত নগদ হবে বা বাকী হবে বা কিস্তিতে হবে বা তা থেকে নিশ্চুপ থাকবে। ইবনে নুজাইম মিসরি (মৃ ৯৭০ হি,) বলেন, যদি এক মাস বা তার চেয়ে বেশির ভাড়া অগ্রিম আদায় করে আর নগদ তা গ্রহণ করে, তখন তা বাতিল করার সুযোগ থাকবে না। কেননা তা নগদ দেওয়াতে সন্দেহ দূরীভূত হয়। তাই তা চুক্তিতে শর্তারোপের মতো। আবদুর রহমান আফিন্দি (মৃ.১০৭৮ হি.) বলেন, যদি ইজারাগ্রহীতা দুই মাস বা তিন মাসের ভাড়া আদায় করে আর মালিক গ্রহণ করে. তখন তাদের কারও তা বাতিল করার সুযোগ থাকে না। আল্লামা যায়লায়ী (মৃ. ৭৪৩হি.) বলেন, যদি দুই মাস বা তিন মাসের ভাড়া অগ্রিম আদায় করে আর তা কজা করে নেয়। অগ্রিম নগদ পরিশোধের ক্ষেত্রে তাড়দের কারও তা বাতিল করার সুযোগ থাকে না। কেননা অগ্রিম আদায় করার কারণে পরিশোধের পরিমাণে অজ্ঞাত থাকেনা; তাই তা চুক্তিতে নির্দিষ্ট করার মতো। ফাতওয়ায়ে আলমগিরীতে বলা হয়েছে, যদি দুই মাস বা তিন মাসের ভাড়া অগ্রিম আদায় করে আর ভাড়া গ্রহণ করে নেয় তখন কারও সেই নগদ ক্ষেত্রে তা বাতিল করার সুযোগ থাকে না।
অফেরতযোগ্য অগ্রিম অর্থাৎ মালিক ভাড়াটিয়া থেকে কিছু টাকা ভাড়া ব্যতীত অগ্রিম নেবে, যা আর ফেরত দেবে না। শরীয়তের দৃষ্টিতে এটাও বৈধ। এটা মূলত পজিশন বিক্রি। তা বৈধ নয়।
দোকান ও ঘর ভাড়ার ক্ষেত্রে আর্থিক জামানত ও এডভান্স গ্রহণের পদ্ধতি নতুন উদ্ভাবিত হলেও তা প্রয়োজন, প্রচলন ও লেনদেনের মূলনীতির আলোকে বৈধ। ইসলামের প্রাথমিক যুগে তা বিদ্যমান না থাকলে ও তার দৃষ্টান্ত বিদ্যমান। কেননা তা মূলত এক প্রকার জামানত। আর শরীয়তে জামানত বৈধ। রাসূলল্লাহ (স.) এর যুগেও জামানত প্রথা ছিল। রাসূলূল্লাহ (স.) নিজেই মৃত ব্যক্তির ঋণের জামানত গ্রহণ করেছেন। তা তিনি বায়তুল মালে অর্জিত মাল ফাই তথা যুদ্ধবিহীন অর্জিত সম্পদ থেকে আদায় করতেন। তবে সকল প্রকার আর্থিক জামানত ও এডভান্স গ্রহণের ক্ষেত্রে স্পষ্ট চুরি হওয়া জরুরী। যাতে পরবর্তী সময়ে তাতে কোনো ধরনের জটিলতা তৈরি না হয়। আর কোনো পক্ষের সীমালঙ্গনের সময় লিখিত চুক্তি দেখে তার সমাধান করে নিতে পারে। (সমাপ্ত)