হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১ মাসে ৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শীতের প্রকৌপ বাড়ায় হাসপাতালে বেড়েইে চলেছে রোগীর সংখ্যা। ফলে পর্যাপ্ত পরিমান চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের। এছাড়াও প্রতিদিনই হবিগঞ্জ জেলাসহ আশপাশের এলাকাগুলো থেকে ভর্তি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ জন করে রোগী।
জানা যায়, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ১১ জানুয়ারি মঙ্গলবার পর্যন্ত ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন প্রায় ৯০ জন। কিন্তু এর বিপরীতে শয্যা আছে মাত্র ৫৯টি। ফলে অনেক রোগীকেই মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ছে রোগীর স্বজনদের সংখ্যাও। এ অবস্থায় চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক-নার্সরা সংশ্লিষ্টরা মনে করেন এ অবস্থা কয়েকদিন চলতে থাকলে চিকিৎসা সেবায় চরম সংকট দেখা দিতে পারে। একই সাথে রাগীর চাপ থাকায় পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পাওয়া ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশসহ নানা অভিযোগ রোগীর স্বজনদের।
শিশুদের নিয়ে আসা স্বজনরা জানান, শীতের শুরু থেকেই শিশুরা ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দিসহ নানা অসুখে পড়ছে। তাই প্রাথমিক অবস্থায় তাদেরকে গ্রাম্য চিকিৎসক দেখালেও না কমায় বাধ্য হয়েই হাসপাতালে আসছেন তারা।
স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে অনেক শিশু রোগীকে মেজেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। হাসপাতালের মেঝে ও বিছানাগুলোও অপরিচ্ছন্ন। যেখানে সেখানে পরে রয়েছে বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা, তুথু, পানের পিক। তাই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে উল্টো আরও অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে শিশুরা।
তবে চিকিৎসকরা বলছেন, শীতের এই সময় শিশুদের যত্ন সহকারে রাখতে হবে। যাতে করে অতিমাত্রায় ঠান্ডা না লাগে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি যত্নবান হতে হবে শিশুদের প্রতি।
এদিকে, হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের স্ক্যানু ওয়ার্ডেরও একই অবস্থা। ১১টি স্ক্যানু মেশিনের বিপরীতে প্রতিদিন এখানে সেবা দেয়া হচ্ছে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন শিশু নবজাতককে। এ অবস্থায় রোগীর চাপ সামলাতে তাদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
হবিগঞ্জ শহরের কামড়াপুর এলাকার ফারজানা আক্তার জানান, তিনি তার ৪ মাসের শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে এসছেন। চারদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু ঠিক সময় চিকিৎসক, নার্স তার শিশুকে দেখতে আসেন না। যা নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বাহুবল উপজেলার মিরপুর এলাকার ইউসুফ আলী জানান, তার তার ৫ মাসের শিশু বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। সে ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তি দিলেও কোন সিটের ব্যবস্থা করে দিতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে মেঝেতেই তার বাচ্চাকে নিয়ে তিনি চিকিৎসা করাচ্ছেন।
হাসপাতালের তত্ববধায়ক ডা. মোহাম্মদ আমিনুল হক সরকার জানান, ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই শ্বাসকষ্ঠ, নিউমোনিয়া, জ্বর ও সর্দি-কাশিতেই আক্রান্ত। হঠাৎ শীত বাড়ার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে ৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেয়ার। তিনি শিশুদের বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানান।