বিলম্ব হলেও বোধোদয় ঘটেছে সরকার তথা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের। খাদ্যমন্ত্রী স্বয়ং বলেছেন- দেশে মিনিকেট, নাজির শাইল নামে কোন ধান নেই। উৎপন্নও হয় না। অথচ আমরা বছরের পর বছর ধরে বাজার থেকে উচ্চমূল্যে কিনে খাচ্ছি মিনিকেট, নাজিরশাইল চালের ভাত। মূলত এসব চাল বিভিন্ন জাতের ব্রি ও স্বর্ণা ধান থেকে আহরিত মোটা চাল পালিশ করে তৈরি। দেখতে অতি সরু, মসৃণ, সুন্দর ও ঝকঝকে সাদা। বস্তার গায়ে লেখা থাকে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে বাছাইকৃত উৎকৃষ্ট মানের চাল। মূলত এসব সরু ও সাদা ভাতে তেমন পুষ্টিগুণ নেই। নেই জিঙ্ক, আয়রন, ভিটামিন-এ ও অন্যান্য খনিজ উপাদান। মূলত মোটা চাল অন্তত ৩০ শতাংশ পালিশ করে বস্তায় ভরে বাজারজাত করা হয় ভোক্তাদের নজরকাড়া এবং মনোরঞ্জনের জন্য। দামও অত্যন্ত বেশি, ভোক্তাদের গলাকাটার জন্য যথেষ্ট। চালকল মালিক, মিলার ও আড়তদারদের এই প্রতারণা প্রতিরোধে অবশেষে চাল ছাঁটাই নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে সম্মতি দিয়েছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও ব্রি’র বিজ্ঞানীরা। দেশে বর্তমানে মান ভেদে তিন ধরনের চাল বিক্রি হয়-মোটা, মাঝারি ও চিকন চাল। চিকন বা সরু চালের দাম এখন অনেক বেশি- প্রতি কেজি ৬৫-৭০ টাকা, তা সে মিনিকেট, নাজির শাইল যাই হোক না কেন। এখন থেকে চালের নামের পরিবর্তে বাজারজাত বস্তার গায়ে ধানের নাম ও জাত লিখতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে। কিভাবে তা বাস্তবায়ন করা যায় সেই কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে, যাতে মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের প্রতারণা বন্ধ করা যায়। তদুপরি চাল কোন অবস্থাতেই ৮ থেকে ১০ শতাংশের বেশি ছাঁটাই করা যাবে না। চালের ভিটামিনস ও মিনারেলস যাতে অক্ষুণ্ন থাকে এবং বজায় থাকে গুণগতমান সেদিকে সর্বোচ্চ নজরদারি করা হবে নিয়মিত। অতিরিক্ত ছাঁটাইয়ের কারণে দেশের মানুষ কমবেশি ভুগছে অপুষ্টিতে। যে কারণে বিদেশ থেকে পুষ্টি-চাল আমদানি করে খাওয়াতে হচ্ছে মানুষকে। ব্যয় করতে হচ্ছে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা। এর পাশাপাশি ধানÑচাল সংরক্ষণের দিকেও বিশেষ নজর দেয়া হবে।
দেশের মানুষের পুষ্টির ঘাটতির বিষয়টি বিবেচনা করে খাদ্যবান্ধব সরকার পুষ্টিচাল বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে, যা আপাতত দেয়া হচ্ছে গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষদের। পরে তা সম্প্রসারিত করা হবে সারাদেশে ২০২৫ সালের মধ্যে। এর জন্য ‘পুষ্টিচাল উৎপাদন, বিতরণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নির্দেশিকা- ২০২১’ প্রণয়ন করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এই চালে মেশানো থাকবে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি-১, ভিটামিন-১২, ভিটামিন-৯ (ফলিক এসিড), আয়রন ও জিঙ্ক। এই ৬টি ভিটামিন দৈনন্দিন ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করবে একজন বয়স্ক মানুষের। হতদরিদ্রদের ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী, ভিডিভি কর্মসূচী ও স্কুল মিল কর্মসূচীতে অন্তর্ভুক্ত হবে পুষ্টিচাল। তাতে সহজে পূরণ হতে পারে দৈনিক পুষ্টির চাহিদা। চাল ছাঁটাই বন্ধ হলেও মিটবে দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদা।
চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার ইতোমধ্যে আমদানি শুল্ক কমিয়েছে। বেসরকারী উদ্যোগেও শুরু হয়েছে চাল আমদানি। সরকারের খাদ্য মজুদও সন্তোষজনক। আমদানিকৃত পর্যাপ্ত চাল বাজারে এলে এবং ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির ফলে খোলাবাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। চাল ছাঁটাই নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে দৈনন্দিন পুষ্টির ঘাটতি মেটানোর পাশাপাশি চালের দাম সহনীয় হয়ে উঠবে বলেই প্রত্যাশা।