২০২১ সালে দেশীয় অস্ত্রসহ ২৯০জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য গ্রেফতার

4

সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
কিশোর অপরাধ দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। নানাবিধ হত্যাকান্ড, সংঘাত ও অন্যান্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ে ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে কিশোররা। র‌্যাব ২০২১ সালে বিপুল পরিমান আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ ২৯০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।
এসব কিশোর অপরাধ দমনে র‌্যাব জনসচেতনতা মূলক প্রচারণা ও কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ব্যাপকহারে সচেতনতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, বিশ্বের পশ্চিমা দেশগুলোতে গ্যাং ও কিশোর গ্যাংয়ের অসিত্ব দীর্ঘর্দিনের। বাংলাদেশের কিশোররা বিদেশী এই গ্যাং কালচার রপ্ত করে কয়েক দশক পূর্বে। শুরুতেই সন্ত্রাসী ভাবমূর্তি না থাকলেও ধীরে ধীরে কিশোর গ্যাং সদস্যরা সন্ত্রাসী ভাবাপন্ন হয়ে উঠে। গ্যাংয়ে গ্যাংয়ে দ্বন্দ্ব, অন্তকোন্দল, চাঁদাবাজি, এলাকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও মাদক সিন্ডিকেটে জড়িত। এহেন নানাবিধ হত্যাকান্ড, সংঘাত ও অন্যান্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ে ভবিষ্যত জীবন নষ্ট করছে। শুরুতেই ঢাকা কেন্দ্রীক থাকলেও পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা শহরেও ছড়িয়ে পড়ে এই কিশোর গ্যাং কালচার। বর্তমান সময়ে কিশোর গ্যাং তথা গ্যাং কালচার এবং উঠতি বয়সি ছেলেদের মাঝে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রুপের সাথে অন্য গ্রুপের মারামারি করা বহুল আলোচিত ঘটনায় পরিনত হয়েছে। গ্যাং সদস্যরা এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করার জন্য উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে দল বেধে ঘুরে বেড়ায়, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়, পথচারীদের উত্তপ্ত করে এবং ছোট খাট বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের উপর চড়াও হয়ে মারামারি-খুনাখুনি করে। এছাড়াও তারা নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য একই এলাকায় অন্যান্য গ্রুপের সাথে প্রায়ই কোন্দলে লিপ্ত থাকে।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে উত্তরায় স্কুলছাত্র আদনান হত্যাকান্ডের মাধ্যমে কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি আলোচনায় আসে। চাঞ্চলকর এই হত্যাকান্ডের মূলহোতাসহ বেশ কয়েকজন কিশোর গ্যাং সদস্যদের গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরবর্তীতে উত্তরা, গাজীপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় স্কুল ছাত্র শুভসহ আরো কয়েকটি হত্যাকান্ড ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। কিশোর গ্যাং নামক অপসংস্কৃতি রোধকল্পে র‌্যাব এই সকল হত্যাকান্ডের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসামীদের গ্রেফতার করে।
উল্লেখযোগ্য হত্যাকান্ডের মধ্যে রয়েছে ২০২১ সালে ২৭ এপ্রিল রাজধানীর কদমতলী হতে দুর্ধর্ষ কিশোর গ্যাং লিডার কাইল্লা মুরাদ ও বাঘা রাজুকে অস্থসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব। ৬ জুন র‌্যাব-১ এর অভিযানে টঙ্গী এলাকায় দুইটি পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হামলার সাথে জড়িত কিশোর গ্যাং ডি কোম্পানী এর পৃষ্ঠপোষক বাপ্পী উরফে লন্ডন বাপ্পি ও নীরব উরফে ডন নীরবসহ ১২ জন সক্রিয় সদস্য অস্ত্রসহ গ্রেফতার। ১৯ জুন রাজধানীর শ্যামপুর এলাকা হতে দেশীয় অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাংয়ের “সেভেন স্টার ও রবিন হুড” গ্রুপের ১০ সদস্য গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। ২৮ জুন চট্টগ্রাম জেলার জোরারগঞ্জ থানার করেরহাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদার আরিফসহ ৩ জন’কে ১টি ওয়ানশুটাগান, ১ রাউন্ড গুলি এবং ২টি চাকুসহ গ্রেফতার করা হয়। ২৮ জুন ঢাকা জেলার আশুলিয়ায় আলোচিত খাদেম নজরুলের পায়ের রগ কাটা মামলার প্রধান আসামী কিশোর গ্যাংয়ের ‘রাকিব গ্রুপ’ এর প্রধান রাকিব ও সহযোগী ইমনকে সাভার ও আশুলিয়া থেকে বিদেশী পিস্তল, দেশীয় অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার করে। ২৩ নভেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় কিশোর গ্যাং “ভাইব্বা লকিং” এর গ্যাং লিডার মোহনসহ ৯ জনকে দেশীয় অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব।