মালদ্বীপ হোক নতুন শ্রমবাজার

7

মালদ্বীপের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ১৯৭৮ সালে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে দেশ দুটির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক বিরাজমান। ১২শ’ দ্বীপ নিয়ে গঠিত রাষ্ট্রটির জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ। অভিবাসী রয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার। মোট অভিবাসীর মধ্যে এক লাখের বেশি বাংলাদেশী। মালদ্বীপের নির্মাণ, পর্যটন, বিপণন এবং যোগাযোগসহ প্রায় সকল খাতেই বাংলাদেশী কর্মীরা কাজ করছেন। এমন এক প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মালদ্বীপ সফর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শেখ হাসিনা ছয়দিনের সফরে বর্তমানে দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে রয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মালদ্বীপ সফরে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের ওপর সমঝোতা স্মারক, যুব ও ক্রীড়া উন্নয়নে সহযোগিতার ওপর সমঝোতা স্মারক, মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের মধ্যে আয়করের ক্ষেত্রে দ্বৈত কর বাতিল এবং কর এড়ানো রোধে চুক্তি। স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য আরও একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে মালদ্বীপকে ১৩টি সামরিক যান উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, শীঘ্রই দুই দেশের মধ্যে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু করা হবে। এর মাধ্যমে দুই দেশের দ্বিপাক্ষীয় বাণিজ্য ও যোগাযোগ খাতের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালদ্বীপের পার্লামেন্টে দেয়া বক্তৃতায় সে দেশের সরকারী ও বেসরকারী খাতকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কোন দেশ একা উন্নতি করতে পারে না। কোভিড-১৯ আমাদের শিখিয়েছে উন্নত, নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ বিশ্বের স্বার্থে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং অভিজ্ঞতা ভাগাভাগির বিকল্প নেই। দক্ষিণ এশিয়ায় ভ্রাতৃপ্রতিম প্রতিবেশীদের সঙ্গে সহযোগিতার নীতিগত অবস্থান আমরা পুনর্ব্যক্ত করছি, যা আমাদের জাতির পিতা বলে গেছেন। পারস্পরিক সুবিধার জন্য আগামী ৫০ বছরের উন্নয়ন যাত্রায় আমরা মালদ্বীপকে পাশে চাই।
সমৃদ্ধ পর্যটন ছাড়াও মালদ্বীপে রয়েছে মাছসহ প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ। এ কারণে মালদ্বীপ দ্রুত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পেরেছে। বর্তমানে দেশটির মাথাপিছু আয় ১১ হাজার ডলারের বেশি। বাস্তবতা হচ্ছে, এত কম জনসংখ্যা নিয়ে এমন একটি সমৃদ্ধ দেশ পরিচালনা কঠিন। এজন্য তাদের বিদেশী সহযোগিতা প্রয়োজন। বাংলাদেশের রয়েছে জনসম্পদ। ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কৃতিতে দুই দেশের মধ্যে পার্থক্য নেই। এ কারণে মালদ্বীপে বাংলাদেশীরা খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান অনুযায়ী দুটি দেশ পারস্পরিক উন্নয়ন সহযোগী হয়ে উঠতে পারলে বৃদ্ধি পাবে দুই দেশের বাণিজ্যিক কর্মকান্ড। একই সঙ্গে মালদ্বীপ হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার।