কাজিরবাজার ডেস্ক :
নতুন করে আরও ৩টি থানা গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি)। বর্তমানে এসএমপির আওতাধিন ৬টি থানা রয়েছে। এই ৬ থানার মাধ্যমে নগরীর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের কর্মকর্তারা।
প্রস্তাবিত নতুন থানাগুলো হচ্ছে- গাজী বুরহান উদ্দিন (রহ.) থানা, শাহী ঈদগাহ থানা ও জালালপুর থানা। দেশে বর্তমানে ৮টি নগরে মহানগর পুলিশের কার্যক্রম রয়েছে। এরমধ্যে সিলেট মহানগর পুলিশের আয়তন সবচেয়ে বেশি। ৫১৮ দশমিক ৪৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এসএমপিতে বর্তমানে তিন হাজার জনবল রয়েছে।
নতুন ৩টি থানা গঠনের উদ্যোগের কথা জানিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ বলেন, এরকম একটি প্রস্তাব আমরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। তারা যাছাই বাছাই করে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে পাঠাবেন। সেখান থেকে সিলেটের ডিআইজির মাধ্যমে এই প্রস্তাব যাবে পুলিশ সদর দপ্তরে।
পুলিশ কমিশনার বলেন, নগরীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি অপরাধও বাড়ছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়াই পুলিশের কাজ। এজন্যে পুলিশি সেবা জনসাধারণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে নতুন ৩টি থানা গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, আম্বরখানা-শাহী ঈদগাহ এলাকার লোকজনকে এয়ারপোর্ট থানায় যেতে হয়। তেমনি শাহজালাল উপশহরের বাসিন্দাদেরকে যেতে হয় শাহপরান (রহ.) থানায়। একই ভাবে জালালপুর এলাকার লোকজনকে হয় মোগলাবাজার থানায় নতুবা দক্ষিণসুরমা থানায় যেতে হচ্ছে। থানাগুলো দূরে থাকায় কোনো ঘটনা ঘটলে এসব এলাকায় পুলিশ যেতে অনেক বিলম্ব হয়। একারণে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধীদের আটক করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
থানাগুলো গঠন করা হলে কোনো ঘটনা ঘটার পর তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যেতে পারবে উল্লেখ করে পুলিশ কমিশনার বলেন, এতে জনগণ কম সময়ে আরও কাছে পুলিশের সেবা পাবেন। এর ফলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জনগনকে পুলিশ আরও ভালো সেবাও দিতে পারবে।
এসএমপি সূত্রে জানা গেছে, কোতোয়ালি থানা এবং শাহপরান (রহ.) থানার অংশবিশেষ নিয়ে গাজী বুরহান উদ্দিন থানা, কোতোয়ালি থানা, এয়ারপোর্ট থানা এবং জালালাবাদ থানার অংশবিশেষ নিয়ে শাহী ঈদগাহ থানা এবং দক্ষিণ সুরমা থানা ও মোগলাবাজার থানার অংশবিশেষ নিয়ে জালালপুর থানা গঠনের জন্য একটি প্রস্তাব সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রেরণ করেছে সিলেট মহানগর পুলিশ। সেখান থেকে বিভাগীয় কমিশনার ও সিলেটের ডিআইজি কার্যালয় হয়ে প্রস্তাবনাটি পাঠানো হবে পুলিশ সদর দপ্তরে। পুলিশ সদর দপ্তর যাচাই-বাছাই করার পর প্রস্তাবনাটি প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটিতে (নিকার) পাঠানো হবে। নিকারের সভায় অনুমোদনের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে নতুন ৩ থানার কার্যক্রম।
২০০৬ সালের ১৫ অক্টোবর কোতোয়ালি ও দক্ষিণ সুরমা থানা এবং এই দুই থানার আওতাধীন বন্দরবাজার ফাঁড়ি, কদমতলী ফাঁড়ি, সোবহানিঘাট ফাঁড়ি, লামাবাজার ফাঁড়ি ও আম্বরখানা ফাঁড়ি নিয়ে গঠন করা হয় সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি)। ২৬ অক্টোবর তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে এসএমপি’র কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ড, সিলেট সদর উপজেলা ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন মহানগর পুলিশের আওতাভূক্ত। প্রতিষ্ঠাকালে মহানগর পুলিশ এলাকার মোট জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৮ লাখ। এখন জনসংখ্যা প্রায় ২৫ লাখে পৌঁছেছে। ২ থানা ও পুরনো ৫টি ফাঁড়ি দিয়ে প্রায় ৫ বছর কার্যক্রম চলার পর ২০১১ সালে শাহপরান থানা, জালালাবাদ থানা, এয়ারপোর্ট থানা ও মোগলাবাজার থানা নামে নতুন আরও চারটি থানার কার্যক্রম শুরু হয়। এতে এসএমপি’র থানার সংখ্যা দাঁড়ায় ৬টিতে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে শাহজালাল রহ. তদন্ত কেন্দ্র, শাহপরান (রহ.) তদন্ত কেন্দ্র ও কামালবাজার তদন্ত কেন্দ্র নামের ৩টি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র গঠন করা হয়। স্থাপন করা হয়েছে শিবেরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি ও আলমপুর পুলিশ ফাঁড়ি নামের দুটি পুলিশ ফাঁড়িও। বর্তমানে এসএমপি’র আওতাধীন ৬টি থানা, ৩টি তদন্ত কেন্দ্র ও ৭টি পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে।