সিলেটের রাজপথে হাজারো মানুষের উপস্থিতি। শীতের সকালে এমন দৃশ্য খুব কমই দেখা যায়। পর্যটন নগর সিলেটে এত মানুষের উপস্থিতির কারণ একটু ভিন্ন। বিশ্বের জনপ্রিয় দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে দেশের নানা প্রাপ্ত থেকে দৌড়বিদরা এসেছেন পর্যটন নগর সিলেটে। শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে সিলেট কুশিয়ারা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হল সিলেট হাফ ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করতে আসেন দৌড়বিদরা।
সিলেট রানার্স কমিউনিটির আয়োজনে সিলেট হাফ ম্যারাথন শুরু হয়। দৌড়বিদরা সিলেট ঐতিহ্যবাহী ক্বীন ব্রিজ এলাকা থেকে দৌড় শুরু করেন। এ দৌড় সিলেট নগর হয়ে সিলেট মালনীছড়া চা বাগান থেকে শহরতলীর ২২ টিলায় ঘুরে ২১ দশমিক ১ কিলোমিটার দৌড় সিলেট আন্তজার্তিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ফিনিস লাইনে গিয়ে শেষ হয়।
এরপর সকাল ১০টায় স্টেডিয়ামে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়। সেখানে বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট, মেডেল ও নগদ টাকা উপহার তুলে দেন সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. জাকারিয়া, সিলেট রানার্স কমিউনিটির সদস্য ডা. ওরাকাতুল জান্নাত, মনজুর আহমেদ আরিফ, মো. হাসান আহমেদ, মোহাম্মদ মিজান, কামরুল ইসলাম, মোহাম্মদ আবু সালেহ, আলি কামাল সুমন। এ ম্যারাথনের দুটি বিভাগ ছিল। একটি ২১ দশমিক ১ কিলোমিটার ও অপরটি ১০ কিলোমিটার। এ দুটি বিভাগে নারী-পুরুষসহ ১ হাজার ২০০ দৌড়বিদ অংশগ্রহণ করেন। ২১ দশমিক ১ কিলোমিটারে ১৫ জন নারী ও ৩৩৫ জন পুরুষ মিলে ৩৫০ জন অংশ নেন। ১০ কিলোমিটার বিভাগে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১০ কিলো জেনারেল, ১০ কিলো ৪৫-৫৫ বয়সীদের জন্য আলাদা বিভাগ আর ৫৬ বছর ঊর্ধ্বে যারা তাদের আলাদা বিভাগ। ১০ কিলোমিটার বিভাগে ৭০ জন নারী ও ৭৮০ জন পুরুষ মিলে মোট ৮৫০ জন। পুরুষদের ১০ কিলোমিটার বিভাগে চ্যাপিয়ন হন সাজ্জাদ হোসেন স্নিগ্ধ। দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন গোলাম রাহাত। পুরুষদের ২১ দশমিক ১ কিলোমিটার বিভাগে তৃতীয় হয়েছেন মো. আলামীন, দ্বিতীয় মো. আসিফ বিশ্বাস, চ্যাপিয়ন হন মো. এলাহী সরদার। নারীদের ২১ দশমিক ১ কিলোমিটার বিভাগে তৃতীয় হয়েছেন নাসিফা জাহান ওয়াহাব, দ্বিতীয় হয়েছেন মৌসমী আক্তার তন্নি, চ্যাপিয়ন হয়েছেন নাসরিন বেগম।
অন্যদিকে নারীদের ১০ কিলোমিটার বিভাগে তৃতীয় হয়েছে ১১ বছর বয়সী স্নেহা জান্নাত, দ্বিতীয় হয়েছে ১১ বছর বয়সী আফসানা হালিমা, আর চ্যাপিয়ন হয়েছে আরেক ছোট দৌড়বিদ সাইদা আক্তার রিনা। আর ৫৬ বছর বয়সী ঊর্ধ্ব নারী বিভাগে চ্যাপিয়ন হয়েছেন মেরিয়ান চৌধুরী। পুরুষদের ৫৬ বছর বয়সী ঊর্ধ্ব বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছেন ৭১ বছর বয়সী নৃপেন চৌধুরী।
৫৪ বছর বয়সী হাসিনা আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আমি ডায়াবিটিসের সমস্যায় ভোগছিলাম। কিন্তু আমি যখন রানিং শুরু করলাম আমার অনেক ভালো লাগতে শুরু করলো। এখন রানিং করার আমার একটা নেশা হয়ে গেছে। আমি আমার পরিবার নিয়ে রানিং করি। যার সঙ্গেই দেখা করি, তাকেই রানিং আসার আমন্ত্রণ জানাই। মানুষের সুস্থ থাকার জন্য এটা খুব জরুরি।
নৃপেন চৌধুরী বলেন, ৭১ বছর বয়সেও আমি দৌড়াতে পারি, আমি শারীরিকভাবে সুস্থ। সবাইকে হাঁটা ও দৌড়ানোর জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
আয়োজক কমিটির সদস্য ও সিলেট রানার্স কমিউনিটির অ্যাডমিন ডা. ওরাকাতুল জান্নাত বলেন, তরুণ সমাজকে মাদক ও খারাপ দিক থেকে বিরত রাখতে খেলাধুলার বিকল্প নেই। আমরা প্রতিবছরই ব্যতিক্রমী আয়োজনের মাধ্যমে সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে দৌড়ের প্রতি আকৃষ্ট করছি। এ ধরনের আয়োজনে একেকটা জায়গায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের দৌড়বিদ আসেন, যা দেশের পর্যটন শিল্পেও ব্যাপক ভূমিকা রাখে। আমরা পরিবেশবান্ধব এ ধরনের আয়োজন অব্যাহত রাখতে চাই এবং সবাইকে দৌড়ানোতে আসার আমন্ত্রণ জানাই।
আয়োজনের সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) জাকারিয়া বলেন, আমাদের এ কঠিন সময়ে স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। রানিং মানুষকে সুস্থ রাখে, আশা করবো সবাই এ চেষ্টা করবেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক সফিউল আলম চৌধুরী।
সিলেট রানার্স কমিউনিটি ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে। ২০১৯ সালের সিলেট মিনি ম্যারাথন ২০১৯ এর সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে ব্র্যান্ডস্ল্যান্সার সিলেট হাফ ম্যারাথন ২০২০, জানুয়ারি ২০২১ এ র্যাব ফোর্সেস সিলেট হাফ ম্যারাথন ২০২১ এর পর এবারের চতুর্থ বৃহৎ আয়োজন এ হাফ ম্যারাথন। ম্যারাথন সফল করার জন্য নিজস্ব ১৮০ জন ভলান্টিয়ার কাজ করেছে, যারা রোড সেফটির পাশাপাশি ফাস্ট এইড সাপোর্ট দেন। বিজ্ঞপ্তি