জুলাই-জুন শিক্ষাবর্ষ ও পর্যটন ছুটি চালুর প্রস্তাবনা

3

কাজিরবাজার ডেস্ক :
জুলাই-জুন শিক্ষাবর্ষ চায় বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। এছাড়া বছরে ১৫ থেকে ২০ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জোনভিত্তিক পর্যটন ছুটি চায় এই রাষ্ট্রীয় সংস্থা। দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটন বিকাশে পর্যটন করপোরেশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ৮ দফা প্রস্তাবনা তৈরি করে সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়েছে। করপোরেশন জানিয়েছে, সংসদীয় কমিটি থেকে প্রস্তাবনায় ইতিবাচক সাড়া এলে পরবর্তী সময়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জানা গেছে, বুধবার (১ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি দেশের পর্যটন খাত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। কমিটির চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ওই বৈঠকে পর্যটন করপোরেশন খাতের উন্নয়নে সংস্থাটির পক্ষ থেকে ৮ দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়।
প্রস্তাবনায় দেশের নিম্ন-মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাবর্ষ জানুয়ারি-ডিসেম্বরের পরিবর্তে জুলাই-জুন বা পর্যটনবান্ধব করা হয়। এর যুক্তি তুলে ধরে বলা হয়, দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শ্রেণি সমাপনী এবং এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নভেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে হয়ে থাকে। আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই সময়টিই পর্যটন মৌসুম। কিন্তু সন্তানদের পরীক্ষা থাকার কারণে অনেক পরিবার চাইলেও ওই সময় ভ্রমণে যেতে পারে না। ফলে শিক্ষাবর্ষটি পর্যটনবান্ধব করা হলে দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটন বেগবান হবে।
ওই প্রস্তাবের পাশাপাশি তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য বার্ষিক ছুটির তালিকা সুবিন্যাস করে একীভূতভাবে ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যটন ছুটি প্রদানের কথা বলেছে। এক্ষেত্রে যুক্তি হলো, ভ্রমণের জন্য একটি পরিবারের স্কুলগামী সন্তানের ছুটির ওপর নির্ভর করে। পরিবারটি দেশ ভ্রমণ বা অন্যান্য কোনও প্রোগ্রাম শিডিউল করে থাকে সন্তানের ছুটির ওপর। অবশ্য পর্যটন করপোরেশন সারাদেশে একই সঙ্গে পর্যটন ছুটি না দিয়ে দেশের বিভাগগুলোকে একাধিক জোনে বিভক্ত করে পর্যটন মৌসুমে জোনভিত্তিক এই ছুটি প্রদানের কথা বলেছে।
তাদের অভিমত, দেশের পর্যটন স্পটগুলোতে এখনও কাঙ্ক্ষিত ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন হয়নি। ফলে একসঙ্গে ছুটি দেওয়া হলে পর্যটন এলাকায় চাপ পড়বে। এতে জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে।
বর্তমানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকে দেশের পর্যটন স্পট নিয়ে সীমিত পরিসরে পাঠ্যসূচি থাকলেও পর্যটন করপোরেশন এর পরিসর বাড়াতে বলেছে। এক্ষেত্রে তারা মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে পর্যটন বিষয়ক পৃথক অধ্যায় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছে। এছাড়া উপজেলা ও জেলা প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন দফতর এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তার দায়িত্ব প্রদান, প্রতিটি উপজেলা ও জেলা প্রশাসনে পর্যটন উন্নয়ন বিষয়ক শক্তিশালী ও কার্যকর কমিটি গঠন, দেশের প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা শহরে এবং পর্যটন দিক বিবেচনা করে উপযুক্ত উপজেলা শহরে উপযুক্ত মান ও সুবিধাসম্পন্ন পর্যটন সুবিধা সৃষ্টি, বিমানের রুট বাড়ানোর কথা বলছে পর্যটন করপোরেশন। এক্ষেত্রে বেজ স্টেশন কেবল ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ না করে রাজশাহী-সিলেট, সিলেট-কক্সবাজার, বরিশাল-কক্সবাজার ইত্যাদি রুট চালুর পরামর্শ দিচ্ছে সংস্থাটি। এছাড়া দেশের আবিষ্কৃত পরিচিত এবং জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট ও প্রোডাক্টগুলো সংরক্ষণ এবং ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে জাতীয় সংসদ ভবন, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, শহীদ মিনারসহ ঢাকাস্থ উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও অন্যান্য পর্যটন স্পটে বিশেষ প্রণোদনায় নিয়মিত প্যাকেজ ট্যুরের আয়োজন করা যেতে পারে। একইসঙ্গে উপযুক্ততা বিচারে এই প্রণোদনা প্যাকেজ ট্যুর জেলা-উপজেলা পর্যন্ত সম্প্রসারণের প্রস্তাব দিয়েছে পর্যটন করপোরেশন।
বুধবারের বৈঠকে প্রস্তাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে পর্যটন খাত বিকশিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় দর্শনীয় স্থানগুলো নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কর্মপরিকল্পনা (প্রস্তাবনা) তৈরির জন্য ৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই সাব-কমিটির রিপোর্ট পেলে সংসদীয় কমিটি এই বিষয়ে তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করবে।
প্রসঙ্গত পর্যটন একটি অগ্রাধিকারভিত্তিক খাত। বিশ্বের সব দেশ এখন পর্যটন খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। ২০১৭ সালে বিশ্বের জিডিপিতে ট্যুরিজম খাতের অবদান ছিল ১০.৪ শতাংশ। ২০২৭ সালে ১১.৭ শতাংশে পৌঁছবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। ২০১৭ সালে পর্যটকদের ভ্রমণ খাতে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৮৯৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। একই বছরে পর্যটনে বিনিয়োগ হয়েছে ৮৮২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। সারা বিশ্বের ১০০ মিলিয়নের বেশি মানুষ জীবন-জীবিকার জন্য এই খাতের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশ বর্তমানে এ খাত থেকে বার্ষিক ৭৬ দশমিক ১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে, যা সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশের তুলনায় কম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের উপ-ব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা) সাজেদুল কবির বলেন, দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য যৌক্তিকতা তুলে ধরে জুলাই-জুন সময়ে শিক্ষাবর্ষ করাসহ বেশ কিছু প্রস্তাবনা আমরা তৈরি করে সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপন করেছি। আমাদের দিক থেকে এটি প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কোনও দফতরে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রস্তাব তোলা হয়নি। সংসদীয় কমিটি যদি মনে করে তাহলে আমরা এই বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
ব্যবস্থাপক (বিক্রয় উন্নয়ন ও জনসংযোগ) জিয়াউল হক হাওলাদারও একই ধরনের কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি যতদূর জানি এটা আলোচনার পর্যায়েই রয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কোনও মন্ত্রণালয়ে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও প্রস্তাবনা দেওয়া হয়নি।
এর আগে গত ৪ অক্টোবর সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি পর্যটন খাতের উন্নতি ও বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে দেশের পর্যটন এলাকায় বিদেশি পর্যটকদের জন্য ডেডিকেটেড ক্যাসিনোসহ তাদের বিনোদন উপযোগী সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রেখে স্থাপনা নির্মাণের সুপারিশ করেছিল।