এইচএসসি পরীক্ষা শুরু, পরীক্ষার্থী ১৪ লাখ ॥ স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি কেন্দ্রে কেন্দ্রে কঠোর নিরাপত্তা

10
এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্র থেকে তোলা। ছবি- মামুন হোসেন

কাজিরবাজার ডেস্ক :
তনিমা তন্বী। রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। করোনার কারণে নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় ৭ থেকে ৮ মাস পর পরীক্ষা হওয়ায় কিছুটা বিরক্ত হলেও প্রশ্নপত্র সহজ হওয়ায় বের হয়েই উচ্ছ্বাস কণ্ঠে বললেন, করোনার কারণে এক ঘেয়েমি এসে ভর করেছিল জীবনে। যখনই শুনলাম পরীক্ষা হবে তখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম। প্রশ্নও আশাতীত সহজ হয়েছে। তাই খুব ভাল হয়েছে পরীক্ষা।
প্রশ্নপত্র কমন পড়ায় নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পরীক্ষা শেষ করেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থী নবনীতা পূজা। তিনি বলেন, সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েও আমি প্রায় ২০ মিনিট কেন্দ্রে বসেছিলাম। ভাবতেই পারিনি এত সহজ প্রশ্ন হবে। খুব ভাল লাগছে।
রাজারবাগ পুলিশ লাইন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী সারা জাহান মৌ বলেন, আমি পরীক্ষার হলে কিছুটা নার্ভাস হয়ে গেছি। তবে প্রশ্ন সহজ হয়েছে। একই কথা বলেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী তাথৈ। বলেন, পরীক্ষার জন্য তেমন সময় পায়নি। সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে দেয়া হয়েছে। একটার সঙ্গে আরেকটির সম্পর্ক ছিল। তাই সংক্ষিপ্ত সময়ে প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে প্রশ্ন ছিল সহজ। পরীক্ষাও ভাল হয়েছে।
শুধু তন্বী, পূজা, মৌ বা তাথৈ নয় প্রশ্নপত্র সহজ হওয়ায় উচ্ছ্বসিত প্রায় সব এইচএসসি পরীক্ষার্থীই। বৃহস্পতিবার রাজধানীর এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা যায়, ওমিক্রন শঙ্কায় কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কড়াকড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে কেন্দ্রগুলোর প্রবেশ পথে শিক্ষার্থীদের জন্য যতটা কড়াকড়ি ছিল বাইরে ছিল না এর বালাই। প্রায় সব কেন্দ্রের সামনেই ছিল অভিভাবকদের উপচেপড়া ভিড়। তবে বেশির ভাগেরই মুখে ছিল মাস্ক।
এদিন সকাল ১০টা থেকে সারাদেশে একযোগে শুরু হয় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। করোনা পরিস্থিতির কারণে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে দেড় ঘণ্টায় হয় এবারের পরীক্ষা। সকাল-বিকেল দুই ধাপে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এ পরীক্ষা। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৬৯০ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডে ৯ হাজার ১৮৩টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ২ হাজার ৬২১টি কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছেন। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ২৯ হাজার ৭৩৮ এবং ছাত্রী ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯৫২ জন। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এইচএসসিতে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ১৭ জন, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আলিম পরীক্ষায় ১ লাখ ১৩ হাজার ১৪৪ জন এবং কারিগরিতে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০৩ জন অংশ নিচ্ছেন। এর আগে গত বছর মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন। গতবারের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে ৩৩ হাজার ৮৭৫ জন। মোট প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ১২০টি, কেন্দ্র বেড়েছে ২০টি।
এছাড়া, বিদেশের আটটি কেন্দ্রের মোট পরীক্ষার্থী ৪০৬ জন। এর মধ্যে সৌদি আরবের জেদ্দায় ১১৪, রিয়াদে ৭৪, লিবিয়ায় ২, কাতারে ৭৯, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে ৩৪, দুবাইতে ২৬, বাহরাইনে ৫৮ এবং ওমানে ১৯ জন পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
পরীক্ষা শেষে এক মাসের মধ্যে ফল প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। আগামী ৩০ ডিসেম্বর এবারের এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হবে। করোনার কারণে এপ্রিল মাসের পরীক্ষা ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এদিন বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে রাজধানীর সরকারী সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী বলেন, ওমিক্রনের শঙ্কা থাকলেও এইচএসসি পরীক্ষা চলবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে আমাদের তরফ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে কিনা জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, আমরা আশা করি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি না হয়। তবে পরিস্থিতির কারণে যদি প্রয়োজন হয় অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব। সবকিছুর উর্ধে আমাদের সন্তানদের সুরক্ষা। তাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে আমরা সবকিছু করতে প্রস্তুত আছি।
এসময় মন্ত্রী জানান, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেছে তাদের সবাইকে যোগ্যতা অনুযায়ী এমপিও করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের যত প্রতিষ্ঠান যোগ্য বিবেচিত হবে। তাদের সবাইকে এমপিওভুক্ত করা হবে। কোন প্রতিষ্ঠানকে বঞ্চিত করা হবে না। হয়ত আমাদের বাজেট কম থাকবে, সে অনুযায়ী তারা কম সুযোগ-সুবিধা পাবে। কিন্তু সবাইকে এমপিওভুক্ত করা হবে।
আগামী বছরের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ বছর একেবারে নবেম্বর-ডিসেম্বরে পরীক্ষা হচ্ছে। আগামী বছর এমনটা হবে না। আমরা যেভাবে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছি আশা রাখছি এবারের চেয়ে অনেক আগে পরীক্ষা হবে। বছরের প্রথমভাগে না হলেও মাঝামাঝি সময়ে এসব পরীক্ষা হবে। পাশাপাশি এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের টিকা দেয়া হয়নি বা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছে, তাদের পরীক্ষার পরপরই দ্রুত টিকা দেয়া হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।