স্পোর্টস ডেস্ক :
রাসেল ডোমিঙ্গোর অলীক স্বপ্ন ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর। তবে পথ পায়নি বাংলাদেশ স্বল্প পুঁজিতে। ছিল না যথেষ্ট রসদ, তাই অবিশ্বাস্য কিছুর মঞ্চায়ন ঘটেনি সাগরিকা টেস্টের শেষদিনে। সিরিজের প্রথম টেস্টে পাকিস্তান অনায়াস জয় তুলে নিয়েছে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে। ফলে আইসিসি বিশ্বা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় চক্রে প্রথম ম্যাচেই হার দিয়ে শুরু করেছে বাংলাদেশ। প্রথম চক্রে ৯ দলের মধ্যে সবার নিচে থেকে শেষ করে মুমিনুল হকের দল। এবারও শুরুটা হেরে। অথচ তৃতীয় দিন দুপুর পর্যন্ত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হাতের মুঠোয় ছিল বাংলাদেশের। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত বাংলাদেশকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি তারপর। টেস্টের পঞ্চম দিন সাধারণত বোলাররা সুবিধা পায়, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হয়েছে উল্টোটা। তাই জয়ের জন্য বাকি ৯৩ রান তুলতে পাকদের খরচা ২ উইকেট, ২৫.৩ ওভার আর ২ ঘণ্টার কম সময়। অর্ধশতাধিক রান করা দুই ওপেনারকে ফেরাতে পারলেও বড় হার ঠেকানো সম্ভব হয়নি বাংলাদেশের। ২০২ রানের টার্গেট তারা ২ উইকেটে ২০৩ রান তুলেছে। হারের জন্য অধিনায়ক মুমিনুল হক দুষেছেন নতুন বলে নিজেদের ব্যাটিং-বোলিং ব্যর্থতাকে। মিরপুরে সিরিজ হার ঠেকানোর দ্বিতীয় ম্যাচে তা কাটিয়ে ওঠার আশাবাদ তার।
চতুর্থ দিনেই সবার বোঝা হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের হার নিশ্চিত। কারণ ২০২ রানের টার্গেটে বিনা উইকেটে ১০৯ রান তোলা দলকে ঠেকিয়ে রাখা শুধু কঠিন নয়, প্রায় অসম্ভব কাজ। তবে কোচ ডোমিঙ্গো আশার আলোর যে লেশমাত্র ছিল সেটাতেই ভরসা রাখছিলেন কিছুটা। কারণ চরম অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে হতে পারে অনেক কিছু। টি২০ বিশ্বকাপ ও পাকদের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের টি২০ সিরিজে বাজে পারফর্মেন্সের পরও দল তৃতীয় দিন পর্যন্ত ব্যাটে-বলে যেভাবে লড়েছে সেজন্য ক্রিকেটারদের প্রশংসাই করেছেন তিনি। লড়াকু মানসিকতায় পাকদের ব্যাকফুটে ঠেলে দেয় স্বাগতিকরা উভয় দলের একটি করে ইনিংস শেষে। কিন্তু এরপর নিজেরাই নিজেদের ভাগ্যটাকে খারাপ বানিয়েছে বাংলাদেশ। নতুন বলে ভয়ঙ্কর পাকিস্তানী পেসারদের সামনে মাথা তুলতে পারেনি বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংয়েও। ৪৯ রানেই ৪ উইকেট খুইয়ে মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাসের ২০৬ রানের অবিস্মরণীয় জুটিতে ৩৩০ রানের ভাল সংগ্রহ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে প্রথম দিন প্রথম সেশনে ৪ এবং দ্বিতীয় দিন সকালে ৬ উইকেট হারায় তারা পাকিস্তানী পেসারদের দাপটে। পাক পেসাররা সফল হলেও আশ্চর্যজনকভাবে বাংলাদেশের দুই পেসার এবাদত হোসেন ও আবু জায়েদ রাহী ছিলেন পুরোই ব্যর্থ। যদিও এই টেস্টের স্কোয়াডে বাংলাদেশ ৫ পেসার রাখে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত খেলেছেন এ দুজন। অথচ রাহীর ফিটনেসজনিত কিছু সমস্যা ছিল। তিনি ভাল সুইং করাতে পারেন এবং শুধু এ কারণেই তাকে খেলানো হয়েছে। সাইড বেঞ্চ গরম করেছেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ এবং দুই নবাগত নবাগত রেজাউর রহমান রাজা ও শহীদুল ইসলাম। সেই রাহী ১৭৪.১ ওভার ব্যাট করা পাক ইনিংসে বোলিং করেছেন মাত্র ১৬ ওভার। তিনি রান দিয়েছেন ৬৪! দেখা পাননি কোন উইকেটের। তবে কিছুটা সমালোচিত এবাদত বরং, দুর্দান্ত বোলিং করেছেন পরবর্তীতে। দ্বিতীয় দিনের শেষভাগে তিনি ১২ ওভারে ৩১ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকলেও নিজেকে দারুণভাবে ফিরে পান পরের দিন এবং আরও ১৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার কোন ইনিংসে একাধিক উইকেট পাওয়া এটি তার। কিন্তু এ দুই পেসারকে দিয়েই বারবার খেলিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ তারা সর্বশেষ কয়েকটি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচেও আহামরি বোলিং করতে পারেননি।
পাকিস্তানের ৩ পেসার শাহীন আফ্রিদি, হাসান আলী ও ফাহিম আশরাফ দারুণ ভুগিয়েছেন বাংলাদেশকে। দুই ইনিংসে এ তিন পেসার ‘চকচকে’ নতুন বলের ফায়দা তুলে নিয়েছেন দারুণ সদ্ব্যবহার করে। বাংলাদেশের টপঅর্ডাররা রীতিমতো বিপর্যস্ত হয়েছেন তাদের সামনে। তাই এ পেসত্রয়ী শিকার করেন বাংলাদেশের ১৬ উইকেট! প্রথম ইনিংসে হাসান ও দ্বিতীয় ইনিংসে শাহীন ৫টি করে উইকেট নিয়েছেন। বাংলাদেশী পেসারদের সেখানে সংগ্রহ সাকুল্যে ২ উইকেট! তবে পাক ওপেনাররা উভয় ইনিংসেই বড় জুটি গড়েছেন। শুধু তাইজুল ইসলামের বাঁহাতি স্পিনটাই বাংলাদেশকে লড়াইয়ের ময়দানে রাখতে পেরেছে। তার ৭ উইকেটই প্রথম ইনিংসে ৪৪ রানের লিড এনে দেয়। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে আবার ভেঙ্গে পড়ে বাংলাদেশের টপঅর্ডার, ২৫ রানে ৪ উইকেটের পতন ঘটে। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫৭ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। পাকিস্তানের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২০২ রান যা ছুঁতে আগের মতোই আবিদ-শফিক ওপেনিংয়ে ১৫১ রানের জুটি গড়েন। এমনকি পঞ্চম দিন সকালের উইকেটেও কিছু করতে পারেননি বাংলাদেশী বোলাররা। জয়টা তাই অনায়াসই হয়েছে। কষ্টটা প্রায় একাই করেছেন তাইজুল, তিনি ম্যাচে করেন ৭২.৪ ওভার। ক্যারিয়ারে প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই দীর্ঘ সময় বোলিং করার চাপ নিতে হয় তাকে। তাই এখন টেস্টে বাংলাদেশী বোলারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বাধিক ১৪৯৫.১ ওভার (৩৪ টেস্ট) বোলিং করেছেন তিনি। ছাড়িয়ে গেছেন সাবেক বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিককে (৩৩ টেস্টে ১৪৫৭.২ ওভার)। আর বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান আছেন সবার ওপরে (৫৮ টেস্টে ২২৩৫.৫ ওভার)।