সংঘাত কাম্য নয়

10

স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো নিকট অতীতেও যে রকম মহাধুমধাম ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হতে দেখা যেত, এবার তা প্রায় কোথাও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বরং দফায় দফায় অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে সংঘটিত হয়েছে ও হচ্ছে দ্বন্দ্ব-সংঘাত- হানাহানি-মারামারি সহিংসতা-রক্তপাত-প্রতিপক্ষের ওপর হামলা-পাল্টা হামলা-অগ্নিসংযোগ এমনকি টেঁটাযুদ্ধ-কুপিয়ে কিংবা গুলি করে হত্যা। একদিকে নবনির্বাচিত প্রার্থীকে কুপিয়ে হত্যার খবর যেমন আছে, অন্যদিকে রয়েছে নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে হত্যার খবরও। সর্বাধিক যা আশঙ্কার তা হলো, এবারে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার পরিলক্ষিত হচ্ছে অনেক বেশি। নিকট অতীতে যা ছিল যথেষ্ট কম।
প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে পাঁচজন নিহতের পর দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা চলাকালে বিভিন্ন স্থানে সমধিক অস্ত্রের ব্যবহার দেখা গেছে। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনকে ঘিরে ১২ জেলায় সংঘাত সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে অন্তত ২৬ জনের। তাদের মধ্যে গুলিতে নিহত হয়েছেন ১৬ জন। আহত শতাধিক। পরাজিত প্রার্থীর ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এত ব্যাপক সংঘাত সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনায় নির্বাচন কমিশন দায়ী করেছে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটি উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথাও বলেছে, বাস্তবে যার প্রতিফলন আদৌ দেখা যায়নি। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় সর্বময় ক্ষমতা অর্পিত হয়ে থাকে নির্বাচন কমিশনের হাতে। ভোটের আগে তাদের কোথাও অস্ত্র উদ্ধার অথবা সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়নি।
বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে গেছে তাদের বেশ কিছু সংখ্যক দলীয় প্রার্থী। নির্বাচিত হওয়ার খবরও আছে। তবে সর্বাধিক সংঘাত-সংঘর্ষ, হানাহানি ও হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে সরকারী দল আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী এবং বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের মধ্যে। বিষয়টি রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে। এ অবস্থায় সরকারে থাকা দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলটি আগামীতে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করবে না বলে চিন্তাভাবনা করছে। কেননা, দুই দফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর দেখা গেছে এবার নৌকা প্রতীকে হেরেছেন ৪২ শতাংশের বেশি প্রার্থী। তারা প্রধানত হেরেছেন নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী এবং বিএনপি, জাপা, ইসলামী আন্দোলন ও অন্যান্য দলীয় প্রার্থীর কাছে। তদুপরি রয়েছে ব্যাপক সংঘাত, সংঘর্ষ ও হত্যাকা-ের খবরাখবর। আগামীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। এসব বিবেচনায় বর্তমান সরকার ৫ বছর আগে স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার সিদ্ধান্ত নিলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন না ঘটায় ফিরে যেতে চাইছে নির্দলীয় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। যা হোক নির্বাচন অনুষ্ঠানকে ঘিরে সহিংস ঘটনা, সংঘাত-সংঘর্ষ, হানাহানি ও হত্যাকান্ড কাম্য নয় কোন অবস্থাতেই।