স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটের ওসমানী মেডিকেল হাসপাতাল চত্ত্বরে ঢুকলেই চোখে পড়ে এ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিক্সা আর রিকশা যত্রযত্র রাখা। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শত শত এ্যাম্বুলেন্সসহ অসংখ্য গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে হাসপাতালের চত্বর জুড়ে। আর চালকরা আছেন রোগী ধরার ধান্দায়। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়া, কোনো পরীক্ষার জন্য বাইরে বেরোনো রোগী- এমনকি লাশ নিয়েও শুরু হয় তাদের টানাটানি।
এ ঘটনা ছাড়াও ওসমানী হাসপাতাল চত্বরে অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। চালক ও দালালরা করেন হয়রানি।
ওসমানী হাসপাতাল চত্বরকে দখলমুক্ত করতে গত বছর জেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে গাড়ি রাখার পার্কিংয়ের নামে গাড়ি রাখার জায়গাটি গুড়িয়ে দেয়। ওইসময় কয়েকদিন হাসপাতাল চত্বরে গাড়ি-অ্যম্বুলেন্স রাখতে দেয়নি প্রশাসন। তবে কিছুদিনের মধ্যেই চত্বরে ফিরে আসে পুরোনো চিত্র। ফের শুরু হয় রোগী ও তাদের সঙ্গে আসা স্বজনদের ভোগান্তি। সেই থেকেই এভাবেই চলছে। সর্বশেষ গত সোমবার ২৩ মে ওসমানী হাসপাতালের ক্যানসার বহির্বিভাগের সামনেই একটি অ্যাম্বুলেন্স এক রোগীকে চাপা দিয়ে মেরেই ফেলে। তবু সেখান থেকে অবৈধ পার্কিং ঠেকাতে উদ্যোগ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, গত সোমবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে ওসমানী হাসপাতালের ক্যানসার বহির্বিভাগের সামনে অ্যাম্বুলেন্স চাপায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবদুল মালেক (৬৫) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তিনি মৌলভীবাজার জেলা সদরের বাহুলবাগ গ্রামের বাসিন্দা। আবদুল মালেক গত রবিবার হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার দুপুরে কোতোয়ালি থানায় অ্যাম্বুলেন্স চালকের সহকারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নিহতের স্ত্রী। তবে ঘটনার পর দুইদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও ‘ঘাতককে’ গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে আবদুল মালেক হাসপাতালের ক্যানসার বহির্বিভাগের সামনে একটি পরীক্ষা করানোর জন্য যান। বহির্বিভাগের সামনে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন। তখন একটি অ্যাম্বুলেন্স ঘোরানোর চেষ্টা করেন চালকের সহকারী সজীব আহমদ। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সটি পেছনে নেওয়ার সময় গাছের সঙ্গে আবদুল মালেক চাপা পড়ে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাঁকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পরপরই চালক ও সহকারী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে পালিয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, ওই অ্যাম্বুলেন্সটির নম্বর ও মূল মালিকের নাম ঠিকানা, চালক ও সহকারীর নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়েছে। গাড়ির মূল মালিক রতন মিয়া। পরে তাঁর ভাগনে জামাল মিয়া অ্যাম্বুলেন্সটি কিনে নেন। অ্যাম্বুলেন্সটি চালাতেন জায়নাল আহমেদ নামের এক চালক। চালকের সঙ্গে সজীব আহমদ নামের ওই সহকারী থাকতেন। গত সোমবারের ঘটনা ছাড়াও ওসমানী হাসপাতাল চত্বরে অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে প্রায় ঘটে ছোট ছোট দুর্ঘটনা। আর এবার ঝরলো প্রাণ।
অবৈধ পার্কিংয়ের বিষয়ে জানতে ওসমানী হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আবুল কালাম আজাদের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, ওসমানীর সামনের অবৈধ পার্কিংয়ের বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ না চাইলে আমরা সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারি না। তবে তারা আমাদের কাছে সহযোগিতা চাইলে আমরা অভিযান চালাবো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত সোমবারের ঘটনাকারী ওই চালককে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি। তাকে খুঁজছে পুলিশ।