স্টাফ রিপোর্টার :
দ্বিতীয় ধাপে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সিলেট জেলার ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
ভোট গণনা শেষে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জানা যায়, সিলেটের ১৫টির মধ্যে ৬টিতে আওয়ামী লীগ, দু’টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, ৪টিতে স্বতন্ত্রের ব্যানারে বিএনপি, ১টিতে জামায়াত ও ১টিতে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
সিলেট সদর উপজেলা: সিলেট সদর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে মোগলগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান হিরণ মিয়া, কান্দিগাঁওয়ে জামায়াত নেতা আবদুল মনাফ, জালালাবাদে আওয়ামী লীগের ওবায়দুল্লাহ ইসহাক ও হাটখোলায় খেলাফত মজলিসের মাওলানা রফিকুজ্জামান বিজয়ী হয়েছেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা: কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ইসলামপূর পূর্ব ইউনিয়নে স্বতন্ত্রের ব্যানারে বিএনপি নেতা আলমগীর হোসেন আলম, তেলিখালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আবদুল ওয়াদুদ আলফু, ইছাকলসে বিএনপি সমর্থক সাজ্জাদুর রহমান, উত্তর রণিখাইয়ে আওয়ামীলীগের ফয়জুর রহমান ও দক্ষিণ রণিখাইয়ে আওয়ামী লীগের ইকবাল হোসেন এমাদ বিজয়ী হয়েছেন।
বালাগঞ্জ উপজেলা: বালাগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নে স্বতন্ত্রের ব্যানারে বিএনপি নেতা মো. আব্দুল মুনিম, পূর্ব গৌরীপুরে বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান মুজিব, পশ্চিম গৌরিপুরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আবদুর রহমান মাখন, বোয়ালজোড়ে আওয়ামী লীগের আনহার মিয়া, দেওয়ানবাজারে বিএনপির নাজমুল আলম ও পূর্ব পৈলনপুরে আওয়ামী লীগের শিহাব উদ্দিন বিজয়ী হয়েছেন।
এদিকে সকাল থেকেই প্রতিটি কেন্দ্রে ছিলো ভোটারদের উপচেপড়া ভিড়। এর মধ্যে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের ৪৪টি ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সকাল ৮টায় শুরু হওয়া ভোট চলে বিকেল ৪টা অবধি। ভোটগ্রহণ শেষে এখন চলছে গণনা। গণনা শেষে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
ভোট চলাকালে সিলেটে প্রতিটি কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলো পুলিশ, আনসার ও গ্রামপুলিশ। এছাড়াও টহলে ছিলো বিজিবি। নির্বাচনে যাতে কোনোরকমের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যে প্রস্তুত ছিলো সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশ।
জানা যায়, এই নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ছিলেন ২ হাজার ৩০০ প্রার্থী। তন্মধ্যে চেয়ারম্যান পদে লড়াই করেছেন ১৯৮ জন। ওয়ার্ড সদস্য পদে ১ হাজার ৬২০ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদে ৪৮২ জন প্রার্থী চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ছিলেন। এ তিন পদে আরও ৭২ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও তারা শেষ অবধি সরে দাঁড়ান নির্বাচন থেকে।
ইসি সূত্র জানায়, সিলেট বিভাগের মধ্যে সিলেট জেলায় চেয়ারম্যান পদে ৬৮ জন, সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য পদে ৫২০ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদে ১৫৭ জন প্রার্থী ছিলেন। সুনামগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে ৯৩ জন, সাধারণ সদস্য পদে ১৭৪ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদে ২১৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। মৌলভীবাজারে ২১ জন চেয়ারম্যান, ২০২ জন সাধারণ সদস্য পদে এবং ৫২ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদে লড়েন। হবিগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে ১৬ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৭২৪ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদে ৬০ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে ছিলেন।
অপরদিকে, কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও সিলেট সদর উপজেলার লামাগাঁও তালুকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় উভয় পক্ষের ৩ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের ওই কেন্দ্রে প্রায় আধঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্দ্ব রাখা হয়। জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে কেন্দ্রের দুই প্রার্থীর এজেন্টের মধ্যে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে আতংকে মহিলা ও পুরুষ ভোটার লাইন ছেঁড়ে দিকবিদিক ছুটাছুটি শুরু করেন। খবর পেয়ে মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসলে পুনরায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়।