বিশ্ব বাজারে ডিজেল ও কেরোসিন তেলের বাড়তি দামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশ সরকারও জ্বালানির দাম নির্ধারণ তথা সমন্বয় করেছে। এমন তথ্য উঠে এলে প্রশ্ন ওঠে যে, যখন দাম কমে যায় তখন সেটা কার্যকর হয় না কেন? ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশজুড়ে চলে পরিবহন ধর্মঘট। যাত্রী ভোগান্তির অন্ত ছিল না। ৫ তারিখ শুক্রবারে ছিল একই সঙ্গে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা। তা ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১টি ইউনিটের এবং অধিভুক্ত সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষাও ছিল শুক্রবারে। ফলে অগণিত নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষার্থীর দুর্দশা অবর্ণনীয়। অনেকেই নির্ধারিত সময় পার করে পরীক্ষায় বসেছে অথবা পরীক্ষা দিতে পারেননি। সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মানুষদের ভোগান্তি অসহনীয় অবস্থায় ঠেকে।
রবিবার সরকার আর পরিবহন মালিকদের সংগঠনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় যাত্রীবাহী যন্ত্রযানের ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তাও আবার ৩৫%। কিন্তু সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় করছে বলে অসহায় যাত্রীদের অভিযোগ। সিএনজিচালিত গাড়িতে কোন ভাড়া বৃদ্ধির বিষয় ছিল না। কারণ, গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি। কিন্তু ভাড়া যখন বাড়ানো হচ্ছে তখন সব যন্ত্রযানের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার চিত্রও উঠে আসছে। এবার অভিযানে নেমেছে বিআরটিএ। সিএনজিচালিত গাড়িতে স্টিকার লাগানো জরুরী। কারণ যাত্রীরাই বিভ্রান্ত হচ্ছে কোন্ গাড়িতে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। শুধু যাত্রীরাই নয়, সরকারও বিপাকে পরিবহন ব্যবস্থাপনার এমন অসহনীয় নৈরাজ্যে। সবাই মিলে একযোগে যাত্রীদের নিয়ে যে হয়রানির অবতারণা করেছে, তা সেবামূলক অবস্থার বিপরীত। এমন সব অরাজক পরিস্থিতি থামানো জরুরী বলে মনে করছেন। সরকার নির্ধারিত ভাড়াকে উপেক্ষা করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা মানে পরিস্থিতি বেসামাল করে তোলা।
কোভিড-১৯ এর চরম দুঃসময়ে যখন দুই সিটে একজন যাত্রী নিয়ে বাস চলার কথা ছিল, তখনও তাদের নিয়ম ভাঙ্গার চিত্র উঠে আসে। এসব বন্ধ করতে জরুরী আইনী পদক্ষেপ নিতে হবে প্রয়োজনে। এক টাকাও যদি বেশি ভাড়া নেয়া হয় তা হলে পরিবহন কর্তৃপক্ষকে আইনী পদক্ষেপ মোকাবেলা করতে হবে। যেখানে তথাকথিত সিটিং-গেটলক বন্ধসহ স্টিকার লাগানোর কথা বলা হয়েছে, তেমন আদেশ অমান্য করা যাবে না। নির্দেশ অমান্যকারীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জবাবদিহি করতে হবে। বিধিনিষেধবহির্ভূত কোন কিছু সাধারণ যাত্রীদের ওপর অহেতুক চাপিয়ে না দেয়ার নির্দেশও আসে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। সড়ক পরিবহন এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও সরকার ঘোষিত নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত না নিতে আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠন কোন নিয়মকানুনের তোয়াক্কাই করছে না। অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে হয়রানি করে যাচ্ছে যাত্রীদের।
এদিকে লঞ্চ মালিকরাও বিভিন্ন হিসেব নিকেশ করে তাদের মর্জিমাফিক ভাড়া আদায় করছে যাত্রীদের কাছ থেকে। সেখানে নৌ কর্তৃপক্ষ এখনও জানে না সরকার নির্ধারিত বাড়তি মূল্যের সাথে লঞ্চ মালিকদের নতুন অর্থ আদায় কতখানি সঙ্গতিপূর্ণ! তবে হিসেবের যে চিত্র ওঠে আসে তাতে প্রতি মাথাপিছু প্রতি কিলোতে ১৪ পয়সা বাড়ানোই যথার্থ। সেখানে ৬০ পয়সা আদায় করার চিত্রও বিভ্রান্তিমূলক। সব যাত্রীবাহী লঞ্চ ও বাসে বর্ধিত ভাড়া আদায়ের চিত্র এক কথায় অনৈতিক এবং অনাকাক্সিক্ষত। এখানেও সরকার নয়, মালিকরাই ভাড়া নির্ধারণ করতে রেখেছে মূল ভূমিকা। দেখা যাক বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ কিভাবে জনগণের কল্যাণে সরকার নির্ধারিত ভাড়াকে বাস্তবে প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়।