কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রথমবারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতিতে দেশের ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরই মধ্যে ‘এ’ (বিজ্ঞান বিভাগ) ও ‘বি’ (মানবিক বিভাগ) ইউনিটের ফলাফল ঘোষণা হয়েছে। তবে গুচ্ছ পরীক্ষায় নানা ভোগান্তির মুখে পড়ছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার প্রবেশপত্র ডাউনলোড জটিলতা থেকে শুরু করে পছন্দের কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে না পারা এবং প্রশ্নপত্রে ভুলের অভিযোগসহ ‘বি’ ইউনিটের ফলাফলেও মিলেছে গোঁজামিলের তথ্য। এ পদ্ধতির পরীক্ষার ফল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে আসছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।
বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার দিন ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা এক শিক্ষার্থীর বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা নোয়াখালী থেকে এসেছি। গুচ্ছ পদ্ধতি অনুযায়ী আমার মেয়ের কেন্দ্র নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিলেক্ট করেছি। কিন্তু কেন্দ্র পড়েছে ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভোরে ঢাকায় পৌঁছেছি, এখন চলেও যাব। তবে এ পদ্ধতির পরীক্ষায় আমাদের ভোগান্তি থেকেই গেলো।
মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) বিকেল ৫টায় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ওয়েবসাইটে ‘বি’ ইউনিটের ফল প্রকাশের পর ফলাফল নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের ভরাট করা প্রশ্নের সঙ্গে ফলাফলের মিল নেই। আবার প্রশ্ন ভরাটের চেয়েও বেশি নম্বর পেয়েছেন কেউ কেউ।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ফলাফল নিয়ে কারও সন্দেহ থাকলে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ রয়েছে।
ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা মুবাশ্বির আহমেদও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার পরীক্ষার্থী ছিলেন। প্রকাশিত ফলাফলে ১০০ নম্বরের মধ্যে তিনি পান ৪৬ নম্বর। ভর্তি পরীক্ষার বাংলা অংশে ৪০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর করলেও ফলাফলে বাংলা অংশে ২৮টি পূরণ করা হয়েছে বলে দেখানো হচ্ছে।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এ শিক্ষার্থী বলেন, কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবো কি না, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এত কম নম্বরের জন্য আমি হয়তো ভালো সাবজেক্ট পাবো না। আমাদের স্বপ্ন নিয়ে এ রকম খেলা করার কোনো মানে হয় না।
একই বিড়ম্বনার কথা জানান নরসিংদী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আবির। তিনি ইংরেজিতে কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়েও ২২ নম্বর পেয়েছেন। আবার বাংলায় ৩১টি প্রশ্নের উত্তর দিলেও প্রকাশিত ফলাফলে চারটি উত্তর দিয়েছেন বলে দেখানো হয়েছে।
রাজধানীর দারুন্নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা থেকে এইচএসসি পাস করা আবু নোমান সালমান ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রকাশিত ফলাফলে ১০০ নম্বরের মধ্যে ২২.৫০ নম্বর পান তিনি।
এ শিক্ষার্থী বলেন, বাংলা অংশে ৪০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের মধ্যে ৩৫টি ভরাট করেছি। কিন্তু ফলাফলে দেখাচ্ছে বাংলায় ২০টি ভরাট হয়েছে। ইংরেজিতে ৩৫টির মধ্যে ১৭-১৮টি ভরাট করলেও দেখাচ্ছে ৩০টি ভরাট হয়েছে। আমি শতভাগ নিশ্চিত হয়েই উত্তর করেছিলাম। আমার হিসাবে, আমি ৪৩-৪৪ নম্বর পাওয়ার কথা। কিন্তু অতিরিক্ত ভরাট দেখিয়ে সেটা আবার মাইনাস দেখাচ্ছে, পেয়েছি ২২.৫০ নম্বর।
এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, আমি সেকেন্ড টাইমার পরীক্ষার্থী। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে প্রায় দুই বছর ধরে প্রস্তুতি নিলাম। অনেক স্বপ্ন ছিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। কিন্তু গুচ্ছ পরীক্ষার এমন ফলাফলে আমার সব শেষ হয়ে গেলো।
মুন্সিগঞ্জের আরেক শিক্ষার্থী সজিব হাসান ফল প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ইংরেজি থেকে ৩৫টি প্রশ্নের সবই পূরণ করেছি, কমন ছিল ২৭টি। এখন রেজাল্ট অনুযায়ী, আমি নাকি ৩১টি উত্তর করছি, যেখানে ১১টিই আবার ভুল!
প্রকাশিত ফলাফলে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৫৭.৫০ পাওয়া এ শিক্ষার্থী বলেন, ইংরেজিতে এত কম নম্বর পাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বিশ্বাস করেন এর চেয়ে বেশি আশা করিনি, আর করবোও না। ভর্তি আয়োজক কমিটির যাদের অবহেলায় আমাদের স্বপ্ন ধ্বংস হচ্ছে, আল্লাহ যেন তাদের বিচার করে।
শুধু আবির, সালমান, মুবাশ্বির কিংবা সজিবই নন, ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এমন আরও অনেক শিক্ষার্থীই প্রকাশিত ফলাফল নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন।
ফলাফলে এ ধরনের ভুলের বিষয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, অনেক শিক্ষার্থী ওএমআর পূরণ করতে ভুল করে। অর্ধেক ভরাট বা অস্পষ্ট হলে কম্পিউটারে সেটা রিড করে না। এখানে ওএমআর সম্পূর্ণ কম্পিউটারের মাধ্যমে রিড হয়, তাই ফলাফল ভুল হওয়ার প্রশ্নই আসে না। এরপরও যারা চ্যালেঞ্জ করতে চায়, বাণিজ্য অনুষদের পরীক্ষার পর আমরা তাদের জন্য একটা নোটিশ দেবো। নির্ধারিত ফি দিয়ে শিক্ষার্থীরা ফের ফলাফল চেক করতে পারবে।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দীন আহমেদ শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে বলেন, শিক্ষার্থীরা যেসব অভিযোগ করেছে, তা ভিত্তিহীন। কম্পিউটারে রেজাল্ট কাউন্ট হয়েছে, ভুল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে কোনো শিক্ষার্থী যদি অভিযোগের বিষয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তবে পরীক্ষা শেষে আমরা তাদের ফলাফল পুনর্নিরীক্ষণের ব্যবস্থা করবো।