করোনার মহাদুর্বিপাকে উচ্চ শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করাও ছিল সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপনার এক আবশ্যিক কার্যক্রম। সবার আগে জরুরী ছিল উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি পরীক্ষা নেয়া। এতদিন যারা করোনাকালে এক অনিশ্চিত শিক্ষা সময় পার করে সমস্যার আবর্তে পড়ে যায়, সেখান থেকে উত্তরণের পথ মুক্ত করাও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সচেতন দায়বদ্ধতা। ইতোমধ্যে সেটাও শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ খুলে দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মযোগ শুরু করা হলে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে উচ্চশিক্ষার উন্মুুক্ত পাদপীঠগুলো। এখানে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়ম অনুসরণ করা ছাড়াও বয়স বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় নিয়ে আসাও এক অনন্য কর্মসূচী। অপেক্ষমাণ ছাত্রছাত্রীরা শুধু যে ভর্তি পরীক্ষা দিতে বসেছে, তা নয়। তার চেয়েও বেশি তাদের প্রতিদিনের পাঠক্রমের নিয়মবিধি প্রাতিষ্ঠানিক আলয়ে সম্পৃক্ত হতে পারাও এক প্রাসঙ্গিক কার্যক্রম। সবার আগে বহুল সংক্রমণ করোনাকে লাগাম টেনে ধরাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্মসক্ষমতা। করোনা অতিমারীতে সবচেয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জাতির মেরুদন্ড শিক্ষা কার্যক্রম। তেমন ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া ছিল বড় রকমের চ্যালেঞ্জ। সেশন জট সামলানো থেকে শুরু করে প্রতিদিনের পাঠ গ্রহণের নিয়মবিধিতে পুনরায় ফিরে আসাটা স্বাভাবিক উপায়ে এগিয়ে নেয়াও সহজ ব্যাপার নয়। তার পরেও সব কিছুকে মানিয়ে গুছিয়ে নতুন যাত্রাপথ বেগবান করা ছাড়া জাতির উদীয়মান প্রজন্মের বিকল্প কোন রাস্তাও নেই। যারা একটি আধুনিক ও নতুন বাংলাদেশ গড়ার উদ্দীপ্ত প্রত্যয়ে নিজেদের চালিত করবে।
দেশের পাঁচটি বৃহত্তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা, বুয়েট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীর নগর গুচ্ছ পরীক্ষায় ভিন্নমত পোষণ করলে তারা আলাদা পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করে। তবে এবার বিভাগীয় শহর এবং জেলাগুলোতে পরীক্ষা কেন্দ্র বসানো হয়।
এরপর প্রথম বারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষায় ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের আওতায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের চিত্রও উঠে এসেছে। প্রথমবারের মতো নতুন কায়দায় এই ভর্তি পরীক্ষা চালিত করাও ছিল এক চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তবে পদ্ধতিটি একেবারে নতুন নয়। চিকিৎসা শাস্ত্রে ভর্তি পরীক্ষায় এমন প্রক্রিয়া অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। মেধা ও মননের বিবেচনায় সবাই নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে যাবে। সবচেয়ে মূল্যবান বিষয় হলো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দ্বার দেরিতে হলেও তার গতি ফিরে পেয়েছে। এটাই এই মুহূর্তে এক প্রকার বড় অর্জনই বলা যেতে পারে। তবে কিভাবে ক্ষতির মোকাবেলা ও পুষিয়ে নেয়া যেতে পারে তা শুধু সময়ই বলে দেবে। অভিজ্ঞ শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞ মহলও প্রাসঙ্গিক পথনির্দেশনায় দেশ গড়ার ভবিষ্যত কর্ণধারদের সময়োপযোগী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে এগিয়ে আসবেন নিশ্চয়ই। আধুনিক প্রযুক্তির স্বপ্নের সোনার বাংলা তৈরির অবিচলিত অঙ্গীকারে দেশকে সামনের দিকে চালিত করাই শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব।