একালের মানুষ ভুলেই গেছেন কিংবা হয়ত জানেনও না যে, একজন সাংবাদিকও নোবেল পেয়েছিলেন প্রায় শতাব্দীকাল আগে। ইতিহাসের পাতায় গেলে জানা যায়, ৮৬ বছর আগে প্রথম কোন সাংবাদিককে শান্তিতে নোবেল দেয়া হয়। জার্মানির সাংবাদিক কার্ল ফন ওসিয়েতস্কি তার নিজের দেশের শাসকগোষ্ঠীর গোপনে সামরিক শক্তি বাড়ানোর কর্মসূচী বিষয়ে প্রতিবেদন লিখেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধ নয় শান্তি- এই মর্মবাণী বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির বিষয়টি নিঃসন্দেহে শান্তিবিরোধী পদক্ষেপ ছিল। বিষয়টি জনসমক্ষে নিয়ে আসা মানে শান্তির পক্ষেই কাজ করা। তাই সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনের সাংবাদিক বিবেচিত হয়েছিলেন শান্তি পুরস্কারের অন্যতম প্রধান যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে। তিনি অর্জন করেছিলেন শান্তিতে নোবেল।
৮৬ বছর পর আবার সাংবাদিকতাই বিবেচিত হলো শান্তি পুরস্কারের জন্য। আর এটি পেয়েছেন দুটি ভিন্ন দেশের দুজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। একজন ফিলিপিন্সের মারিয়া রেসা। অপরজন রাশিয়ার দিমিত্রি আন্দ্রেইভিচ মুরাতভ। মারিয়ার ক্ষেত্রে নোবেল কমিটি বলেছে, তিনি তার জন্মস্থান ফিলিপিন্সে ক্ষমতার অপব্যবহার, সহিংসতা ও দেশটিতে ক্রমেই বেড়ে চলা কর্তৃত্ববাদের বিরদ্ধে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে শক্তহাতে ব্যবহার করেছেন। মারিয়া রেসা ফিলিপিন্সের অনলাইন নিউজ পোর্টাল র্যাপলার-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান। এর আগে তিনি সিএনএনের হয়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় দুই দশক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করেছেন। আর দিমিত্রি মুরাতভ রুশ সংবাদপত্র নোভায়া গ্যাজেটের এডিটর ইন চীফ। এই সংবাদপত্রটিকে অনেকেই রাশিয়ার প্রকৃত সমালোচক সংবাদমাধ্যম মনে করে। নোবেল কমিটির প্রধান বলেন, বিশ্বে গণতন্ত্র আর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ক্রমেই হুমকির মুখে পড়ছে। তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে যারা এসব আদর্শের জন্য লড়াই করে চলেছেন, সেসব সাংবাদিকের প্রতিনিধিত্ব করছেন মারিয়া রেসা ও দিমিত্রি মুরাতভ। এটা বলা প্রয়োজন যে, চলতি বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ৩২৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মনোনয়ন পেয়েছিল নোবেল কমিটি। এবারের পুরস্কারের জন্য যাদের নাম এসেছিল, তাদের মধ্যে পরিবেশ আন্দোলন কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, অধিকার সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নামও ছিল। সেক্ষেত্রে বলা চলে, দুজন সাংবাদিকের শান্তিতে নোবেল জয় এক অর্থে বিশ্বব্যাপী শাসকগোষ্ঠীর কর্তৃত্ববাদী মানসের বিপরীতে মানবতা ও বিবেকের কণ্ঠস্বরেরই বিজয়।