স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটে সৎ মায়ের নির্যাতনে ঘরছাড়তে বাধ্য হয়েছেন ১৮ বছরের এক কিশোরী পাওয়া গেছে এমন অভিযোগ। ওই কিশোরী আশ্রয় নিয়েছেন নগরীর জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল রোডের পাঠানটুলা এলাকার একটি বাসায়। সে আর ফিরতে চাচ্ছে না নিজের বাড়িতে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন।
পুলিশ সূত্র ও ভিকটিমের বর্ণনায় জানা গেছে, গত রবিবার ৩ অক্টোবর সকাল ৮টার দিকে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেলের পাশে এক কিশোরীকে কাঁদতে দেখে ওই এলাকার বাসিন্দা খালেদা বেগম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এসময় ইভা জান্নাত নামের ওই কিশোরী জানায়, তার বাড়ি হেমিতগঞ্জের নিলামপাড়া গ্রামে। তার বাবা সৌদি প্রবাসী। তার বাবার নাম জসিম উদ্দিন। তিনবছর আগে তার মা মারা গেলে প্রবাসে থাকা বাবা টেলিফোনে বিয়ে করেন একই গ্রামের ফাতেমা বেগম নামের এক নারীকে। বিয়ের পর থেকে ইভাকে নানাভাবে নির্যাতন শুরু করেন সৎ মা ফাতেমা। দিনদিন নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে এবং একপর্যায়ে রবিবার ভোরে ইভাকে জোরপূর্ব বাড়ি থেকে বের করে সিলেটগামী একটি সিএনজি অটোরিকশায় তুলে দেন ফাতেমা। পরে অটোরিকশা চালক সকাল সাড়ে ৭টার দিকে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেলের পাশে ইভাকে নামিয়ে দেন। সকাল ৮টার দিকে ইভাকে কাঁদতে দেখে ওই এলাকার বাসিন্দা খালেদা বেগম তাকে সান্তনা দিয়ে নিজ বাসায় নিয়ে আসেন এবং তার ভাই ও সিলেটের গণমাধ্যমকর্মী আমির হোসেন সাগরের পরামর্শে গত সোমবার ৪ অক্টোবর সকালে জালালাবাদ থানা পুলিশকে খবর দেন।
এদিকে, পুলিশ এসে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পূর্ণ ঠিকানা দিতে পারেনি ইভা। এমনকি তার বাবা বা নিকটস্থ কারো মোবাইল ফোন নাম্বারও বলতে পারছে না। এছাড়াও সে আর বাড়িতে ফিরবে না এবং আশ্রয়দাতা খালেদার বাসাতেই থাকবে বলে জানায়। পুলিশের কাছে ইভা বলে, সে বাড়িতে ফিরলেই সৎ মা ফাতেমা বেগম তাকে মেরে ফেলবেন। দেলোয়ার নামে তার এক ভাই আছেন, তিনি ঢাকায় থেকে লেখাপড়া করছেন। তবে তার ওই ভাই কোনো ফোন নাম্বার ব্যবহার করে না বলে জানায় ইভা।
এ বিষয়ে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুল হুদা খান বলেন, ওই মেয়ে তার পূর্ণ ঠিকানা, বাবা-ভাই কিংবা নিকটতম কারো ফোন নাম্বার বলতে পারছে না। সে শুধু বলছে- তাকে সৎ মা সব সময় নির্যাতন করে, বাড়ি ফিরলেই সৎ মা তাকে মেরে ফেলবে। তাই সে বাড়ি ফিরবে না। এদিকে, সে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র বা পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারেও যেতে চাচ্ছে না। সে ওই আশ্রয়দাতার বাসায় থাকতে চাচ্ছে। ওসি মো. নাজমুল হুদা খান বলেন, সে যদি পূর্ণ ঠিকানা বাবার ফোন নাম্বার এসব বলতে পারতো তবে গোলাপগঞ্জ থানাপুলিশের সহায়তা নিয়ে তাকে বাড়িতে ফেরত পাঠাতাম এবং আইনি সহায়তা দিতাম। কিন্তু সে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছে না। মনে হচ্ছে- মেয়েটির কিছুটা মানসিক সমস্যা রয়েছে। তবে তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, ওই কিশোরীকে আশ্রয়দাতার বাসায় রাখা হলেও আমরা খোঁজ-খবর রাখছি এবং তাকে আইনি সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছি।
কিশোরীকে আশ্রয়দাতা খালেদা বেগম বলেন, মেয়েটি চরম আতঙ্কিত। তার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন। বাড়িতে ফিরে যাওয়র কথা বললেই আমাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে ওঠে। তিনি বলেন, আমি রাগীব-রাবেয়া হাসপাতালে চাকরি করি। হাসপাতালের পাশেই একটি বাসায় আমি আর আমার মা থাকি। এখন সেও (ইভা) থাকছে। পুলিশের নির্দেশে পরবর্তীতে তার ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিতে হয় নিবো।