করোনার লাগাতার দাপটে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করেছে। প্রবল দাপুটে এই ভাইরাসটি বর্তমানে কিছুটা দুর্বল হওয়ার খবরও স্বস্তির। তবে করোনা অতিমারীর চরম দুর্যোগে অপরাধ বেড়ে যাওয়ার চিত্রও ছিল শঙ্কিত হওয়ার মতোই। হত্যা, গুম, ধর্ষণ থেকে আরম্ভ করে রাহাজানি, ছিনতাই এবং জখমের মতো দুঃসহ ঘটনাও ছিল আতঙ্কের বিষয়। এসব বিধিবহির্ভূত জঘন্য অন্যায়কে আইনসম্মত উপায়ে মোকাবেলা করাও ছিল সময়ের অপরিহার্য দাবি। আইন-আদালতের দ্বারস্থ হতে ভুক্তভোগীদের প্রাসঙ্গিক কার্যক্রমও কোনভাবেই থেমে ছিল না। তবে করোনায় নিয়মবিধির প্রাতিষ্ঠানিক কর্মযোগ বিচার বিভাগের স্থবির হয়ে পড়াটাও ছিল এক দুর্ভোগ। তাই বলে ন্যায় বিচার বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়নি। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার আকাক্সিক্ষত স্বপ্ন করোনাকাল যে মাত্রায় কড়া নেড়েছে তা ছিল উপস্থিত বিপর্যয়ের সমূহ সমাধান। তথ্যপ্রযুক্তির বলয় উন্মুক্ত করে জরুরী প্রয়োজনীয় বিচারকার্য পরিচালনা করাও পরিস্থিতির অনিবার্য চাহিদা ছিল। অনলাইনে তেমন ভার্চুয়াল বিচার পদ্ধতির কার্যক্রম সংশ্লিষ্টদের আশার আলো দেখিয়েছে। ভার্চুয়াল বিশ্বে আইন-আদালত তার গতিপ্রবাহে মামলা-মোকদ্দমা পরিচালনা করা ছাড়াও বিচারকার্য সম্পন্ন করার নতুন কার্যক্রমে আসামিদের জামিন ও শাস্তি প্রদান ছিল দৃশ্যমান কর্মযোগ। চরম সঙ্কটকালে বিচারপ্রার্থীর এই প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত তাদের আলোর পথ দেখিয়েছে।
বিচার ব্যবস্থাকে নিরন্তর সচল রাখাও বর্তমান সরকারের এক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। সাধারণ মানুষকে ন্যায় বিচারের আওতায় আনতে কঠিন অবরুদ্ধতারকালেও সুপ্রীমকোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগ ভার্চুয়াল জগত উন্মোচন করে দেয়াও ছিল অভিনব বিচার পদ্ধতি। করোনায় সংক্রমিত হওয়ার কারণ ছাড়াও প্রাতিষ্ঠানিক আইন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক বিচারপতি নিজ জেলায় ফিরে গেছেন। সেখানে বসেও তারা ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পৃক্ত হয়ে বিচারকার্যে অংশগ্রহণ করেছেন। অনেকেই হাওড়ের গ্রামের বাড়িতে বসে বিচার প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন ভার্চুয়াল জগতে। এটি এক নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন, যা প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাসঙ্গিক আইনী কার্যক্রম সেরে ফেলার আলোকিত জগত। বয়স্ক, জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা সামাজিক দূরত্বকে কত সহজভাবে জীবনের সঙ্গে একাত্ম করে বিচার ব্যবস্থাকে গতি দিয়েছেন, তাও এক অভাবনীয় বিস্ময়। আইনমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন যে, কোভিড-১৯ অতিমারীতে সব কিছুর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও বিচার ব্যবস্থা তার প্রাসঙ্গিক কার্যক্রম থেকে কখনও বিযুক্ত ছিল না। বিচারপ্রার্থীরাও এই প্রযুক্তি বলয়ে সংযুক্ত হয়ে আইনী শুনানিতে অংশ নিতে সক্ষম হয়েছেন। সময়ের চাহিদায় এমন নতুন দিগন্ত উপহার দেয়াও ছিল জরুরী, যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রায় কয়েক ধাপ এগিয়ে যাওয়া অবশ্যই।