করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতি থমকে দাঁড়িয়েছে। এর প্রভাব পড়বে ভবিষ্যতেও। আন্তর্জাতিক সংস্থা এই পরিস্থিতিকে মহামারি ঘোষণা দিয়েছে। করোনাভাইরাস সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে এক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকসহ বিশেষজ্ঞদের অভিমত পাওয়া গেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যে ধাক্কা খাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু করোনা-পরবর্তীকালে বাংলাদেশের অর্থনীতি নতুন সম্ভাবনা নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারে—এমন খবরই এসেছে গতকাল কালের কণ্ঠে। প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, করোনার এক পিঠে জীবন-জীবিকার ঝুঁকি, ঠিক উল্টো পিঠেই উঁকি দিচ্ছে সম্ভাবনা। করোনা-পরবর্তী বদলে যাওয়া বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে আসতে পারে নতুন রপ্তানি আদেশ আর প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, করোনার কারণে চীনের প্রতি ইউরোপের নেতিবাচক মনোভাব আর চীন থেকে জাপানসহ উন্নত দেশের বিনিয়োগ সরিয়ে নেওয়ার আভাস বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক সম্ভাবনার জানান দিচ্ছে। বিশ্ব গণমাধ্যমের খবর আর পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারক ও বিশ্লেষকরা যে ইঙ্গিত দিচ্ছেন, তাতে আশাবাদী হওয়া যায়। তাঁরা বলছেন, ইউরোপ-আমেরিকায় শীর্ষ পণ্য রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে চীন। ওই সব দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন যে পরিবর্তিত বিশ্ব প্রেক্ষাপটে চীন থেকে পণ্য আমদানি কমে যেতে পারে। তাদের অনেকে বিনিয়োগও সরিয়ে নিতে পারে। সূত্র বলছে, বাংলাদেশে বিনিয়োগে জাপান বেশ আগ্রহী। এরই মধ্যে দেশটির জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চীন থেকে এখন ওরা বিপুল বিনিয়োগ সরিয়ে নেবে। এর অংশীদার বাংলাদেশ হতে পারে। সবাই চাইবে সস্তা শ্রম, উন্নত যোগাযোগ ও বিনিয়োগবান্ধব শুল্ক-করনীতি। এসব দিতে পারলে বাংলাদেশের সামনে করোনার পর বিদেশি বিনিয়োগের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরেকটি আশা জাগানো খবর হচ্ছে, সবজি ও ফলের চাহিদা আসছে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে। তাই আবার পণ্য রপ্তানি শুরু করতে চান এ খাতের উদ্যোক্তারা। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, আগের বছরের তুলনায় এ বছর সবজি রপ্তানি ভালোই হচ্ছিল। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টন সবজি রপ্তানি হতো। এখনো আমদানিকারক ৪৩টি দেশের মধ্যে প্রায় সব দেশেরই চাহিদা আসছে। কিন্তু ফ্লাইট বন্ধ থাকায় সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তবে এসব পণ্য রপ্তানির জন্য আলাদা কার্গো বিমান চালু হলে রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
করোনা-পরবর্তী সময়ে নতুন যে সম্ভাবনা ও সুযোগ আসবে, তা কাজে লাগাতে পারলে দেশের অর্থনীতির গতি আবার সচল হবে। আমরা আশা করব সংশ্লিষ্ট মহল এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।