কাজিরবাজার ডেস্ক :
দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস পর একগুচ্ছ সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ। করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় ভার্চুয়াল রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই সীমিত পরিসরে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। চলতি ডিসেম্বরের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ সকল জেলা-উপজেলার সম্মেলন শেষ করার মাধ্যমে একদম তৃণমূল পর্যন্ত ঝিমিয়ে পড়া দলের সাংগঠনিক শক্তিকে চাঙ্গা করে তুলতে মাঠে নামছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। সাংগঠনিক তৎপরতার মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মোকাবেলায় রাজপথে সরব থাকার পরিকল্পনা নিয়েও এগুচ্ছে দলটি।
মাসব্যাপী শোকের মাস আগামী বুধবার শেষ হচ্ছে। প্রাণঘাতী করোনার প্রকোপ কিছুটা কমে আসায় ঘরোয়া রাজনীতি থেকে বেরিয়ে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই সীমিত পরিসরে হলেও মাঠের রাজনীতি শুরু করতে চান দলটির নীতিনির্ধারক নেতারা। এখনই বড় ধরনের সভা-সমাবেশ বা জনসভায় যাবে না। তবে একদম তৃণমূল পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি রাজপথে কোন অপশক্তি যাতে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করতে না পারে সেজন্য প্রতিটি জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত সাংগঠনিক শাখাগুলোকে চাঙ্গা করে তোলার প্রচেষ্টা চালাবেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক শুক্রবার বলেন, করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় আবারও সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করার চিন্তাভাবনা রয়েছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের। আগামী মাস থেকেই সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলা সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত দলকে শক্তিশালী এবং পুনর্গঠনের কাজ শুরু করা হতে পারে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধী অপশক্তি যাতে এ সময়ে সরকারবিরোধী কোন ষড়যন্ত্র কিংবা সরকারকে অস্থিতিশীল করতে অপতৎপরতা চালাতে না পারে সেজন্য রাজপথেও প্রয়োজনে সরব থাকবে আওয়ামী লীগ। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকেও বিস্তারিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের কেন্দ্রীয় ২২তম সম্মেলনকে সামনে রেখে এখন থেকেই সংগঠনকে ঢেলে সাজানো এবং শক্তিশালী করার কাজে মনোযোগ দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। করোনার কারণে প্রায় ছয় মাস মাঠের রাজনীতি বন্ধ থাকলেও সেপ্টেম্বর থেকেই সীমিত পরিসরে আবারও শুরু করতে চান তারা। এজন্য দীর্ঘ বিরতির পর আবারও শুরু হতে যাচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলার সম্মেলন।
এছাড়া আগের মতো দলে যেখানেই দ্বন্দ্ব-বিভেদ, গ্রুপিং-কোন্দল, সেখানেই কেন্দ্রের কঠোর হস্তক্ষেপ। এভাবেই সাংগঠনিক বিরোধ মিটিয়ে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার কাজেও হাত দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। তৃণমূল থেকে দলকে পুনর্গঠন এবং ঢেলে সাজানোর কাজে সাংগঠনিক বিরোধীকেই প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তা দ্রুত নিরসনে কাজ পুনরায় শুরু করতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
একগুচ্ছ সাংগঠনিক পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি কেন্দ্রের নির্দেশনা না মানলেই বহিষ্কারসহ কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের হাইকমান্ডের নির্দেশ অনুযায়ী বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বিরোধ মেটানোর কাজও চালিয়ে যাবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ধারারাবাহিকভাবে ঢাকায় তলব করে সাংগঠনিক বিরোধে জড়িত মন্ত্রী-এমপি-নেতা ও দলীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে কেন্দ্রের সতর্কবার্তা পৌঁছে দেবেন তারা।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ আগামী বছরের ডিসেম্বর মাসে শেষ হবে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই জেলা-উপজেলার সম্মেলন শেষ করতে চায় দলের নীতিনির্ধারকরা। সে জন্য প্রস্তুতিও শুরু করেছিল। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে তা হয়ে ওঠেনি। দলের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ইতোমধ্যে ৩০টি জেলার সম্মেলন হয়েছে। বাকি মেয়াদোত্তীর্ণ ৪৮ জেলার সম্মেলন দ্রুত কীভাবে শেষ করা যায় তা নিয়েও বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে দলটিতে। করোনার সংক্রমণ দ্রুত না কমলে প্রয়োজনে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সম্মেলনের আয়োজনেরও চিন্তাভাবনা রয়েছে দলটিতে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই এসব মেয়াদোত্তীর্ণ জেলার সম্মেলন শেষ করতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি।
দু’দফা করোনার মারাত্মক সংক্রমণ বৃদ্ধি, লকডাউনসহ বাস্তব পরিস্থিতি এবং প্রাণঘাতী করোনার প্রকোপ থেকে দলের নেতাকর্মীদের রক্ষায় সব ধরনের প্রস্তুতি থাকলেও মাঠের রাজনীতি স্থগিত করতে বাধ্য হয় আওয়ামী লীগ। ফলে দল গুছানোর কাজও বারংবার পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়। তবে করোনার সংক্রমণ ধীরে ধীরে কিছুটা কমে আসায় সীমিত পরিসরে দলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। এজন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছেন। কেউ কেউ জেলার শীর্ষ নেতা, দলীয় এমপিদের ডেকে ঢাকায় এনে বৈঠক করেও সম্মেলনের কাজ দ্রুত শেষ করার পরিকল্পনা করছেন।
দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা মনে করছেন, করোনা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে সাংগঠনিক কর্মকা- বন্ধ রাখা ঠিক হবে না। এই সুযোগে রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষরা সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করতে পারে। এছাড়া দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ও খুলে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে সরকারের হাইকমান্ডে। তখন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোন ইস্যুতে বিরোধী পক্ষরা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে কিংবা দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে সেজন্য নানা কর্মসূচী নিয়ে রাজপথ দখলে রাখারও পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের।
জানা গেছে, দলীয় প্রধানের নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশে দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে দেশের সাতটি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলাগুলোর সম্মেলন শুরু এবং সাংগঠনিক বিরোধ সঙ্কুল জেলা, মহানগর, উপজেলা, ইউনিয়নগুলোকে চিহ্নিত করে তালিকা ধরে ধরে বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টার কাজ পুনরায় শুরু করতে যাচ্ছেন। সেপ্টেম্বর থেকে সীমিত পরিসরে এবং করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে অক্টোবর থেকে পূর্ণ গতিতে সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে ঢেলে সাজানোর কাজ শেষ করার টার্গেট নিয়েই মাঠে নামছেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা।
জানা গেছে, দ্রুতই ভার্চুয়াল রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে চায় আওয়ামী লীগ। সময় নষ্ট না করে একদম তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে চায় তারা। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হওয়ায় ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কিছুটা হলেও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসছে কেন্দ্রীয় কার্যালগুলোতে। দলীয় কর্মসূচীতেও বাড়ছে তাদের উপস্থিতি। আগামী মাস থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেলা-উপজেলায় বর্ধিত সভা, মতবিনিময়, কর্মী সভা এবং সম্মেলনের মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগকেও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে নানা পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।