ছাতকে লীজকৃত পুকুর দখল নিতে ব্যর্থ হয়ে ইউপি অফিসে হামলা ও ভাঙচুর

5

ছাতক থেকে সংবাদদাতা :
ছাতকে রেলওয়ের জায়গায় একটি পুকুর লীজ নিয়ে দু’পক্ষের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। টেন্ডারে লীজ প্রাপ্তিদের ওই পুকুরটি দখল সমজিয়ে দিতে গিয়ে স্থানীয় জনতার রোষানলে পড়েন। এক পর্যায়ে ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে এসে তারা ইউনিয়ন অফিসে হামলা ও ভাঙচুর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (২৫ আগষ্ট) বিকেলে উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের তকিপুর গ্রামে ও স্থানীয় ইউপি অফিসে।
জানা যায়, উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমানের তকিপুরস্থ গ্রামের বাড়ির সামনে ছাতক-সিলেট রেলওয়ে সড়কের পাশে একটি পুকুর রয়েছে। চেয়ারম্যানের পূর্ব পুরুষরা রেলওয়ে বিভাগ থেকে জায়গা লিজ নিয়ে ভোগ দখল করে আসছিলেন অনেক আগ থেকে। এক পর্যায়ে তারা নিজেদের এবং আশ পাশ মানুষের গোসল, রান্না-বান্নাসহ পানির বিশেষ প্রয়োজনে লীজকৃত জায়গায় পুকুর খনন করেন। কিন্তু সম্প্রতি কর্তৃপক্ষ ওই পুকুরটি টেন্ডার দিলে ছায়াদ আহমদ নামের এক ব্যক্তি লীজ পায়। ছায়াদ উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের গোবিন্দনগর গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে।
বুধবার ছায়াদকে তার পুকুর দখল বুঝিয়ে দিতে তকিপুর গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আখলাকের বাড়িতে যায় কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি টিম। সেখানে পৌঁছে তারা চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করেন কিন্তু টেন্ডার ও লিজের বিপরীতে আবেদনের যাবতীয় ডকুমেন্ট তুলে ধরেন আখলাক। এক পর্যায়ে স্থানীয় জনতার ধাওয়া খেয়ে তারা পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমান জানান, প্রায় ২৫-৩০ বছর আগে চাচা হুসন আলী যৌথ পরিবার থাকাকালিন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জায়গাটুকু স্থায়ী ভাবে লীজ গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীতে ওই জায়গা পুকুর খনন করেন। সে সময় থেকে পাঁচ বছর ও পরে তিন বছর পর পর কাগজ নবায়ন করে তারা ভোগ দখলে আছেন। কিন্তু ২০১৬ সালে কাগজ নবায়ন বন্ধ হয়ে পড়ে। ২০১৯ সালে তাদের অবহিত না করে কর্তৃপক্ষ টেন্ডারে নিয়ে যায় পুকুরটি। পরে ওই টেন্ডার বাতিলের জন্য তিনি আবেদন করেন রেলওয়ের কর্তৃপক্ষ বরাবরে। এ হিসেবে ভূ-কর্মকর্তা চট্টগ্রামকে টেন্ডার বাতিলের জন্য একটি পত্র প্রেরণ করেন রেলওয়ের এক সিনিয়র সচিব। এসব যাচাই-বাছাই না করে জোর পূর্বক পুকুরটি দখল নেয়ার জন্য আসে। এ সময় উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুলও তাদের সাথে ছিলেন। বিষয়টি পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে মোবাইল ফোনে অবহিত করা হলে তিনি তাদেরকে বসতে বলেন এবং বাড়িতে পৌঁছে রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সাথে তিনি যৌক্তিক আলোচনা করেন। কিন্তু এর আগে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান চলে যান। পরবর্তীতে তারা ব্যর্থ হয়ে আমার ইউনিয়ন অফিসের চেয়ারম্যান কক্ষে প্রবেশ করে আসবাবপত্র ভাঙচুরসহ কার্যালয়ের বাহিরে ঝুলিয়ে রাখা বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত জাতীয় শোক দিবসের ব্যনার দুটি ছিঁড়ে ফেলেছে ছায়াদসহ সংঘবদ্ধরা।
এ বিষয়ে ছায়াদ আহমদ জানান, তিনি রেলওয়ের পুকুরটি টেন্ডারে লিজ পেয়েছেন। ওই পুকুরটি দখল সমজিয়ে দেয়ার জন্য রেলওয়ে বিভাগ থেকে কর্মকর্তা ও সিলেট জিআরপি থানার একজন এএসআই এসেছিলেন। কিন্তু আখলাক চেয়ারম্যান দখল দিতে নানা অযুহাত দেখিয়েছেন। পরে সেখান থেকে তারা চলে আসার সময় গ্রামের লোকজন রাস্তায় তাদের উপর অতর্কিত হামলা করার চেষ্টা করেছে। তাদের গাড়িতেও তারা লাঠিপেটা করে ব্যাপক ক্ষতি করেছে। তিনি ইউনিয়ন অফিসে হামলা, চেয়ারম্যানের কক্ষ ভাঙচুর ও বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত কার্যালয়ের বাহিরে ঝুলিয়ে রাখা ব্যনার ছিঁড়ার অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, রাস্তায় তাদের উপর হামলার বিষয়টি গ্রামের মুরব্বিদের কথা মতো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমানের কাছে বিচার দেয়ার জন্য ইউনিয়ন অফিসে গিয়েছিলেন।
ইউনিয়ন অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় সন্ধ্যায় ছাতক-দোয়ারাবাজার (সার্কেল) এএসপি বিল্লাল হোসেন, ছাতক থানার ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান সহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।