দেশের চামড়াশিল্পে যে ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে, এমনটা আগে কখনো দেখা যায়নি। আড়তদাররা বলছে, আগের বকেয়া পরিশোধ এবং নগদে চামড়া না কিনলে তারা ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করবে না। ট্যানারি মালিকরা পুঁজির সংকটের কথা বলে যাচ্ছে। আবার তারা কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারেরও দাবি জানাচ্ছে। এ অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এতে এই শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
দেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ চামড়ার জোগান আসে, তার অর্ধেকই আসে কোরবানির সময়। এ বছর পশুর চামড়া বিক্রি করতে না পেরে শত শত চামড়া ডাস্টবিনে ফেলা, না হয় মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেক মাদরাসা, এতিমখানা চামড়া থেকে তাদের পুরো বছরের খরচ সংগ্রহ করত। তারা এবার তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কোথাও কোথাও পাঁচ-দশ টাকায় চামড়া বিক্রি হয়েছে। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থ পুরোটাই গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এ কারণে কোরবানির পশুর চামড়াকে ‘গরিবের হক’ বলা হয়। সেই চামড়া নিয়ে এমন তেলেসমাতি বা ‘সিন্ডিকেটবাজি’ কোনোভাবেই কাম্য নয়।
ট্যানারি মালিকরা পুঁজিসংকটের কথা বলে গলা শুকালেও এ বছরও শুধু কাঁচা চামড়া কেনার কথা বলে ট্যানারি মালিকরা ব্যাংক থেকে তিন হাজার ৬১২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এই ঋণের অর্থ গেল কোথায়? চামড়াশিল্পে মোট ব্যাংকঋণ রয়েছে সাত হাজার ৭০৭ কোটি টাকা, যার বেশির ভাগই মাত্র ৭ শতাংশ সুদে নেওয়া। তার পরও এর ৮০ শতাংশই খেলাপি। ট্যানারি মালিকরা বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম কমে গেছে। তাদের এই দাবিও সত্য নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম একই রকম আছে। ব্যবসা করতে হলে পুঁজি খাটাতে হবে এটাই স্বাভাবিক। আরতদাররা নগদে চামড়া কিনে তাদের বাকিতে সরবরাহ করবে এবং বছরের পর বছর বকেয়া জমতে থাকবে—এটা কোনো স্বাভাবিক বাজারচিত্র নয়। সে ক্ষেত্রে কাঁচা চামড়া রপ্তানি বন্ধ রেখে যারা নগদে চামড়া কিনছে, তাদের জিম্মি করে রাখা মোটেও যৌক্তিক নয়।
এ বছরও ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে চামড়ার সর্বনিম্ন দর নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং তা ছিল আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় অনেক কম। তার পরও কোরবানির ঈদের সময় চামড়া কেনা নিয়ে এমন স্বেচ্ছাচারিতা ও সিন্ডিকেটবাজি কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। এর পেছনে কাদের কারসাজি ছিল তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা চাই, অবিলম্বে এই খাতে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা হোক।