মহামারীর অভিঘাত

2

করোনা মহামারী আমূল বদলে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে। ইতোপূর্বে প্রায় কোন মহামারীর আমলেই এমনটা দেখা যায়নি। এতে একদিকে যেমন মানুষ মা-বাবা, ভাইবোনসহ স্বজন হারিয়ে নিদারুণ দুঃখ-কষ্টে ভারাক্রান্ত হয়েছে, অন্যদিকে জীবন জীবিকা সচল রাখার জন্য অপরিহার্য অর্থনীতির চাকা প্রায় স্থবির হয়ে পড়ায় রিক্ত ও নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। আয় কমেছে অধিকাংশ মানুষের। অনেক দেশে দেখা দিয়েছে খাদ্য সঙ্কট ও খাদ্যাভাব। গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে বহুলাংশে। ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশও। দেশে এমনিতেই চিকিৎসা ও ওষুধপত্রের ব্যয় বেশি। করোনায় তা বেড়েছে বহুগুণ। একমাত্র প্রতিষেধক ভ্যাকসিন সরকার বিনামূল্যে দিলেও এখন পর্যন্ত সর্বত্র পৌঁছেনি, সুলভও হয়নি। অথচ করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বেড়েই চলেছে। ডেল্টা প্লাসসহ নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের কথাও শোনা যাচ্ছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর তৃতীয় ঢেউও নাকি আসন্ন শীত মৌসুমে। বাংলাদেশে আপনজন হারিয়ে এখন পর্যন্ত অসহায় অবস্থায় নিপতিত হয়েছে ২৫ হাজার পরিবার। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। সরকার নগদ অর্থসহ বিবিধ প্রণোদনা দিলেও সবার কাছে তা পৌঁছানো যায়নি। মৃত্যুর মিছিলও বাড়ছে প্রতিদিনই। অতঃপর করোনার বিরুদ্ধে সর্বত্র প্রতিরোধ গড়তে হলে চাই সবার জন্য মাক্সের বাধ্যতামূলক ব্যবহারসহ নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি পালন, সামাজিক সুরক্ষা ও দূরত্ব বজায় রাখা সর্বোপরি ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। এর পাশাপাশি সর্বদা সচল রাখতে হবে কৃষি উৎপাদনসহ অর্থনীতির চাকা।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, বিশ্ব থেকে কখনই একেবারে নির্মূল হবে না করোনা। বরং আর দশটা রোগ-ব্যাধির মতোই মানুষকে বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে করোনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। তাই বলে জীবনের পাশাপাশি জীবিকা তো থেমে থাকবে না। কোন দেশের জন্যই লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন ইত্যাদি কোন দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হতে পারে না। দৈনন্দিন জীবিকা তথা অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে গেলে জীবনও থেমে যেতে বাধ্য। সেই অবস্থায় এক সঙ্গে জীবন-জীবিকা নির্বাহ তথা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু সচল রাখার কথা ভাবতে হবে অবশ্যই।
বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি দেশের অর্থনীতিই মূলত বিশ্বায়নের সঙ্গে সংযুক্ত। পরস্পর পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। এই অবস্থায় করোনা পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনীতির চেহারা কি দাঁড়াবে তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারে না। তবে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, চরম এক মহামন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে বিশ্ব। এর পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী খাদ্য সঙ্কট তথা দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাসও দিয়েছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা। অন্তত ৩৬টি দেশে দুুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছে সংস্থাটি। বাংলাদেশ অবশ্য এদিক থেকে ভাল অবস্থানে রয়েছে। ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় আগামীতে খাদ্য সঙ্কট এড়ানো যেতে পারে। তবু সতর্ক ও সাবধানতার বিকল্প নেই। সে অবস্থায় যথাযথ সুরক্ষাসহ শিল্প-কারখানাসহ মেগা প্রকল্পগুলো সচল এবং সর্বস্তরের মানুষ উদ্যোগী হলে জীবন-জীবিকা এক সঙ্গে চলতে পারে হাত ধরাধরি করে।