লবীব আহমদ কোম্পানীগঞ্জ থেকে :
আকাশে কখনো ঘোলা মেঘ, কখনোবা নীলের ছায়া, এটাই সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জের তুরুং ছড়া।
ছড়ার মধ্যে পাথরে বসে খুব কাছ থেকে মেঘালয়ের অসংখ্য পাহাড় দেখা, স্পর্শ করা ভারতের বিভিন্ন ছড়া থেকে আসা স্বচ্ছ ঠান্ডা পানি, যেই পানি প্রথমই আপনি স্পর্শ করবেন, যে পানি পড়ার শব্দে ঘুম ঘুম ভাব চলে আসবে, যার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য-অগণিত দেখার মতো পাথর! এইরকম একটি জায়গার খোঁজ যদি পাওয়া যায় আর ভ্রমণ ও করা যায়, তাহলে কেমন হয়? যেখানে একবার গেলে বারবারই যেতে চায় মন। এইসকল সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আপনাকে যেতে হবে কোম্পানীগঞ্জের উৎমা ও তুরুং ছড়ায়।
যার অবস্থান সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের চরার বাজারের উৎমা ও তুরুং এলাকায়। উৎমা ছড়া থেকে আরো প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তুরুং ছড়া।
কিন্তু, এইসকল সৌন্দর্য ঢাকা পড়ে আছে শুধুমাত্র একটি রাস্তা পুনঃসংস্কার আর সুষ্ঠু তদারকির অভাবে। ২০০৭ সাল থেকে প্রায় অনেকটা অচল আছে জনসাধারণ চলাচলের জন্য ভোলাগঞ্জ-দয়ার বাজার-চরার বাজার রাস্তা। সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তা সংস্থার হলেও ভোলাগঞ্জের ধলাই ব্রিজ থেকে চরার বাজার রাস্তার নেই কোনো উন্নয়ন দীর্ঘ ১৫ বছর থেকে। যার কারণে জীবনের অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় ধলাই নদীর পূর্ব পারের মানুষদের। ফলে দর্শনার্থীদের চাহিদার বাহিরেই রয়ে গেছে উৎমা ও তুরুং ছড়া।
মাত্র কয়েক কিলোমিটার রাস্তা বেশ কয়েক বছর থেকে চলাচলের প্রায় অনুপযোগী। বর্তমানে রাস্তার অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, সেটা রাস্তা নাকি খাল! বুঝাই দায়। তবুও মানুষকে যেতে হচ্ছে তার গন্তব্য। কিন্তু, এই কয়েক কিলোমিটার রাস্তার কারণে ঐ এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা অন্যান্য জায়গার চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। এলাকার মানুষ বারবার স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় মন্ত্রীর কাছে আবেদন করে আসলেও হচ্ছে না সমস্যার সমাধান। যার কারণে এলাকার মানুষ ব্যতীত বাহিরের লোকজন দেখতে পারছে না উৎমা, তুরুং এর সৌন্দর্য। যা পর্যটন খাতে বিশেষ ভূমিকা রাখতো বলে ধারণা করছেন ঐ এলাকার বাসিন্দারা। তারপরও যারা কষ্ট করে বর্ষার সময়ে নৌকা করে যাচ্ছেন, তারা এই জায়গার প্রেমেই পরে যাচ্ছেন!
উল্লেখ্য, বর্তমান সময়ে পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে থাকা কোম্পানীগঞ্জের সাদা পাথর একসময় রাস্তার কারণে পর্যটকদের দৃষ্টিগোচরের বাইরে ছিলো। যেই সাদা পাথর শুধু দেশ নয়, দেশের বাহিরের দর্শনার্থীদের কাছেও বর্তমানে আকর্ষণীয় স্থান। ২০১৮ সালে সিলেট-ভোলাগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক হওয়ার ফলে সরাসরি কম সময়ে যাওয়া যায় ভোলাগঞ্জ সাদা পাথরে। যার কারণে এখন দেশের দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিনই (খোলা থাকা অবস্থায়) দর্শনার্থীদের ভীড় জমে সাদা পাথরে।
এদিকে উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসন ও সাদা পাথরকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে আসলেও তেমন কোনো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না অপরূপ সৌন্দর্যে বেষ্টিত উৎমা ও তুরুং ছড়ায়। ইউনিয়ন পরিষদ ও কোনো প্রকার আগ্রহ দেখাচ্ছে না এই সৌন্দর্য বেষ্টিত স্থানগুলো সংরক্ষণ করতে। যেখানে সরকার পর্যটন কেন্দ্রকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের ধারনা, সাদা পাথরের চেয়েও পর্যটকদের কাছে উৎমা ছড়া থাকবে পছন্দনীয় জায়গার শীর্ষে।
উৎমা ও তুরুং ছড়া ভ্রমণ করে উত্তর রণিখাই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মাষ্টার ফয়জুর রহমান বলেন, ‘উৎমা ও তুরুং ছড়া প্রকৃতির সৃষ্টি। নয়নাভিরাম এই স্থানে পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য ভালো ব্যবস্থা নাই। ইউনিয়ন বা উপজেলা পরিষদ থেকে এর পরিচর্যা করলে এখান থেকেও সরকার অনেক রাজস্ব পাবে। আমি এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। নির্বাচনে জয়ী হলে প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম এই স্থানের সৌন্দর্যবর্ধন ও পর্যটকদের যাতায়াতের সু-ব্যবস্থার উদ্যোগ নিবো’।
উৎমা এলাকার বাসিন্দা ও দৈনিক একাত্তরের কথা’র কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি আলী হোসেন বলেন, ‘আসলে উৎমা তুরুং ছড়া প্রকৃতির এক অন্যরকম মনোরম জায়গা। এটার সংরক্ষণের জন্য যদি সরকার উদ্যোগ নেয়, তাহলে আসলে জায়গাটা তার পূর্ণ পরিচিতি পাবে এবং পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হবে। তবে এটার সংরক্ষণের পাশাপাশি এই এলাকার রাস্তা মেরামত করাও জরুরি, রাস্তার যে বেহাল দশা। বর্তমানেও এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে কিছু পর্যটকেরা আসে, তবে রাস্তার অবস্থা ভালো হলে পর্যটকদের ভীড় লেগেই থাকবে’।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন আচার্য়্য বলেন, ‘উৎমা এবং তুরুং ছড়া খুবই সুন্দর জায়গা। আমি অনেকবার গিয়েছি। কিন্তু, রাস্তার অভাবে সেখানে পর্যটকদের যাওয়া কষ্টকর হয় আর এগুলো সংরক্ষণ করার জন্য আমরা কোম্পানীগঞ্জের সকল সম্ভাবনায় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে এগুলোর নাম দিয়েছি। রাস্তাঘাট ভালো হলে এর সৌন্দর্য পুরো দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। আমার দেখা অসাধারণ একটি জায়গা এই উৎমা ও তুরুং ছড়া’।