কাজির বাজার ডেস্ক
নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের জন্য সম্প্রতি চালু হওয়া সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের দাবিতে এবার অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) দেশের ৩৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা। ফলে বন্ধ থাকছে একাডেমিক কার্যক্রম। রবিবার (৩০ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা।
এ সময় ফেডারেশনের সভাপতি ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, ‘দেশ ও জাতির প্রয়োজনে সবাইকে এক হতে হবে। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের আহŸান জানাব, তারা যেন দল-মত নির্বিশেষে এই সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেন। দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের অব্যাহত থাকবে।’
দেশের ৩৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে এই কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানিয়ে সংগঠনটির মহাসচিব এবং ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভ‚ঁইয়া বলেন, ‘দেশের ৩৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটির সঙ্গে আজকেও যোগাযোগ হয়েছে। রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বরিশাল, হাজী দানেশসহ প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। একযোগে তারাও এই কর্মসূচি পালন করবে। এটি আমাদের আত্মমর্যাদার লড়াই। আমরা বিভিন্নভাবে সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করেছি বিষয়টি সুরাহা করার জন্য কিন্তু আমরা আশানুরূপ সাড়া পাইনি।’এদিকে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভ‚ইয়া এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাবির কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ঘোষিত এ সর্বাত্মক আন্দোলনে আপনারা সবাই আমাদের সংগ্রামের সারথি। আপনাদের বিপুল সমর্থন ও ম্যানডেট নিয়ে শিক্ষক সমিতি এ সর্বাত্মক আন্দোলনের রূপরেখা প্রণয়ন করেছে। আমাদের এ আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্বশাসনে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্দোলন।
বৈষম্যমূলক ও মর্যাদাহানিকর প্রত্যয় স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার, শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন, প্রতিশ্রæত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে।
বিবৃতিতে শিক্ষক নেতারা ৯টি কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সেগুলো হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে; অনলাইন, সান্ধ্যকালীন ক্লাস, শুক্র ও শনিবারের প্রফেশনাল কোর্সের ক্লাস বন্ধ থাকবে; সব পরীক্ষা বর্জন করা হবে। মিডটার্ম, ফাইনাল ও ভর্তি পরীক্ষাসহ কোনো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না।
বিভাগীয় চেয়ারম্যান অফিস, সেমিনার, কম্পিউটার ল্যাব ও গবেষণাগার বন্ধ রাখবেন। একাডেমিক কমিটি, সমন্বয় ও উন্নয়ন কমিটি, প্রশ্নপত্র সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হবে না; অনুষদের ডিনরা ডিন অফিস, ভর্তি পরীক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট কর্যক্রম বন্ধ রাখবেন। নবীনবরণ অনুষ্ঠানের কর্মসূচি নেওয়া যাবে না। কোনো সিলেকশন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে না।
বিভিন্ন ইন্সটিটিউটের পরিচালকরা ইন্সস্টিটিউটের অফিস, ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখবেন। সান্ধ্যকালীন, শুক্রবার ও শনিবারের ক্লাস বন্ধ থাকবে; বিভিন্ন গবেষণাধর্মী সেন্টারের পরিচালকরা কোনো সেমিনার, কনফারেন্স ও ওয়ার্কশপের কর্মসূচি থেকে বিরত থাকবেন; বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষরা অফিস বন্ধ রাখবেন; প্রধান গ্রন্থাগারিক কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি বন্ধ রাখবেন।
এর আগে গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, যে সব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ১ জুলাই তারিখের পর যোগদান করবেন তাদের জন্য সার্বজনীন পেনশন স্কিমের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার জন্য বিদ্যমান অবসর সুবিধা সংক্রান্ত বিধিবিধান প্রযোজ্য হবে না।