করোনার মহাদুর্বিপাকে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব দুঃসহকাল অতিক্রম করছে। গত দেড় বছর ধরে এ ভয়ঙ্কর মহামারীটি হরেক রকম বৈশিষ্ট্য রূপান্তরের মধ্য দিয়ে আজ অবধি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। উন্নয়নের বিভিন্ন সূচক তার ক্রমবর্ধমান যাত্রাপথে বারবার হোঁচট খাচ্ছে। জাতির মেরুদন্ড শিক্ষা কার্যক্রমের প্রাতিষ্ঠানিক বলয় এখনও রুদ্ধতার আবর্তে। করোনা সংক্রমণে নাজেহাল বাংলাদেশ বিভিন্ন উপায়ে মারাত্মক ক্রান্তিকাল অতিক্রমের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আমাদের বাংলাদেশও করোনার সর্বগ্রাসী ছোবলে হতবিহ্বল, দিশেহারা। ভ্যাকসিন থেকে শুরু করে আরোগ্য লাভের নানাবিধ উপকরণ ছাড়াও স্বাস্থ্য সুরক্ষার সরঞ্জামাদির প্রয়োজনও হয়ে যায় আবশ্যক। আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এক সময়ের রাজধানীকেন্দ্রিক এ মারাত্মক রোগটি এখন সারা বাংলাদেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সঙ্গত কারণে সব ধরনের চিকিৎসা সুরক্ষার পণ্যের সঙ্কট তৈরি হতেও সময় লাগছে না। মুমূর্ষু রোগীদের জন্য অক্সিজেন, আইসিইউ এবং ভ্যান্টিলেশনের যে প্রাসঙ্গিকতা সেখানেও ভর করেছে ঘাটতির মহাদুর্যোগ।
এমন মহাদুর্ভোগে পীড়িত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে উন্নয়ন সহযোগী দেশ এবং সংস্থা। ভ্রাতৃপ্রতিম বন্ধুত্বের পরম নিদর্শনে এগিয়ে এসেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত, বৃহত্তর এশিয়ার শিল্পোন্নত জাপান, চীন, দূর পাশ্চাত্যের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও উন্নয়ন দাতা সংস্থা। ভারত থেকে আসা প্রথম এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাই আমাদের প্রতিষেধক ওষুধ গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। আইএমএফ, এডিবি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। পরবর্তীতে চীন থেকে আসা প্রতিষেধক টিকা সিনোফার্ম ইতোমধ্যে জনগণের মাঝে সম্প্রসারণ করা সম্ভব হয়েছে। জাপানও নতুন করে পাঠিয়েছে এ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন। ভারতের তরল অক্সিজেনের ৪শ’ টনের কয়েকটি কন্টেনার বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভেন্টিলেটর আসাও করোনা দুর্ভোগ থেকে নিস্তারের এক অনন্য কার্যক্রম। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকও সাহায্যের হাত বাড়িতে দিতে দেরি করেনি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া থেকে বৈদেশিক সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ।
তাছাড়া বিদেশে বহু প্রবাসী তাদের উদ্যোগে বাংলাদেশকে সহযোগিতার জন্য নিয়মিত রেমিটেন্স পাঠানোর কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করেছেন। আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশী চিকিৎসক দলের ২৫ লাখ ডোজ মডার্নার টিকা পাঠানোর নজিরও উঠে এসেছে। আরও ৩০ লাখ ডোজ টিকাও আসছে তাদের মাধ্যমে। তাছাড়া করোনার দুঃসময়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশী চিকিৎসকরা জুম মিনিং করে করোনা যুদ্ধ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার চিকিৎসা পদ্ধতি এবং পরামর্শও দিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ এভাবে সারাবিশ্ব থেকে সাহায্য সহযোগিতা পেলে অচিরেই করোনা মহামারীকে জয় করতে বেগ পাবে না। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনার মহাদুর্বিপাককে অবহেলা, উপেক্ষা করা মোটেও সমীচীন নয়। নিজের সুরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিজেকেই অনুসরণ করতে হবে। প্রত্যেক মানুষ সেটা যদি করে সেখানেও করোনা জয়ের সমূহ সম্ভাবনা জিইয়ে থাকে। সবার আগে বিবেচনায় আনতে হবে বহুল সংক্রমণ এই কালব্যাধিকে নিরাপদ দূরত্বে রেখে প্রাসঙ্গিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিধিগুলো যথার্থভাবে পালন করে যাওয়া। আর দেশ-বিদেশের অনেকের সাহায্য সহযোগিতা তো থাকছেই।