ফেরি চলাচলে দায়বদ্ধতা

8

নদীমাতৃক বাংলাদেশে নৌযানের বহুল চলাচল প্রকৃতিরই অবারিত কর্মযোগ। আর ফেরি পারাপারও এক অত্যাবশ্যক কার্যক্রম। ফেরি চলাচলে তেল খরচ হয় প্রচুর। আর এই খরচ উপলক্ষ করে হয় হরেক রকম দুর্নীতি ও কারসাজি। এই অপরাধপ্রবণতার পেছনে থাকে শক্তিশালী অবৈধ সিন্ডিকেট। সক্রিয় এই চক্রটির এক শৃঙ্খলিত চেনের আওতায় তেল চুরির মতো গর্হিত অপরাধ হরহামেশাই ঘটে বলে তথ্য সূত্রে জানা যায়। এর সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তা, কর্মচারীরা। ফলে, বহুদিন ধরে এমন অপরাধ কর্ম সঙ্ঘটিত হলেও সেটা নজরদারির আওতায় আসে না, তদন্ত তো অনেক পরের ব্যাপার। যাত্রাপথ নির্ধারণের মধ্য দিয়ে বরাদ্দ তেলের জন্য যে অর্থ ধরা হয় তাতেও চলে অনেক কাটাছেঁড়া। যেমন সহজ স্বাভাবিক পথে ফেরি চললে দূরত্ব বেশি হয়, তেল খরচও বাড়ে। যদি দীর্ঘপথকে সীমিত করে চলা যায় তাতে সময় বাঁচে, তেলও সাশ্রয় হয়। এভাবেই বরাদ্দ তেল থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অর্থ আত্মসাত করার অশুভ তৎপরতা উঠে আসে। গত ২৩ জুলাই রো রো ফেরি শাহজালালের পদ্মা সেতুর ১৭নং খুঁটিতে প্রবলভাবে ধাক্কা লাগে। তেল কম খরচের সংক্ষিপ্ত পথে চলতে গিয়ে এমন দুর্ঘটনা ঘটার চিত্র আলোচিত হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, অভিযোগ ওঠে সাশ্রয় করে এই তেল বাইরে বিক্রি করে বহু টাকা আয় হয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান অভিমত ব্যক্ত করেন দায়সারা গোছের। তার মতে, মাঝে মাঝে তেল চুরি হয়। তবে এই দুর্ঘটনাটি সেভাবে ঘটেনি। এই দুর্ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব রফিকুল ইসলাম খানকে প্রধান করে উচ্চ পর্যায়ের পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিটি ফেরির জন্য সময় নির্ধারণ করে তেল বরাদ্দ দেয়া হয়।
গত ৩ জুন থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সেতু কর্তৃপক্ষ পদ্মা সেতুর ১৪ থেকে ২১ খুঁটি দিয়ে ফেরি চলাচলের জন্য নির্ধারণ করে। সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ পথের নিশানাও নির্ধারণ করে। তবে দুর্ঘটনায় প্রবল স্রোতের জন্য ২৫ জুলাই থেকে সেতুর ৫নং খুঁটি থেকে ১২ নং খুঁটি পর্যন্ত ফেরি চলাচলের জন্য ঠিক করে দেয়। শাহ পরাণের চালক জানান, ফেরি চলাচলের সময় স্রোতের অনুকূল আর প্রতিকূলের জন্য কম-বেশি ফেরি দোলানো কিংবা ধাক্কা লাগাটা স্বাভাবিক। আর তেলের খরচও সব সময় এক থাকে না। ওঠানামা করে। যাত্রাপথও স্বাভাবিক এবং সহজ পর্যায়ে নির্ধারণ করা মুশকিল হয়ে যায়। এমন সব হিসেব নিকেষ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ফেরি পরিচালনা করে। যেখানে কোটি কোটি টাকা আয়-ব্যয় হয়।
পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা লাগার ঘটনায় ফেরির মাস্টার ও সুকানিকে দায়ী করে তদন্ত কমিটি তার প্রতিবেদন তৈরি করছে। ফেরিটি নিয়মিত যাত্রাপথ না ধরে কেন পদ্মা সেতুর ১৬ ও ১৭নং পিলারের মধ্যে পার হচ্ছিল তাও খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি। সময় নির্ধারণ, তেল বরাদ্দ এবং ফেরির গতিবিধি নির্ণয় করা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সচেতন দায়বদ্ধতা। সুতরাং এ নির্দিষ্ট পর্যায়গুলো কঠোর নজরদারিতে আনাও সময়ের অনিবার্য দাবি। এখানে অর্থ আত্মসাত ছাড়াও নির্মীয়মাণ স্বপ্নের পদ্মা সেতুর খুঁটির সমূহ ক্ষতিও বিবেচনায় রাখা সঙ্গত।