কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা পরিস্থিতিতে দেশে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে জরুরি মেডিক্যাল অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি। আর সেই চাহিদা মেটাতে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। আমদানিকারকদের দেওয়া হচ্ছে সব ধরনের সহযোগিতা। সারাদেশে জরুরি মেডিক্যাল অক্সিজেনের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অব্যাহত রাখতে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে সহযোগিতা চেয়েছে চাওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে রেলপথে অক্সিজেনের সরবরাহ শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জুন মাসেও দেশে জরুরি মেডিক্যাল অক্সিজেনের সরবরাহ ছিল স্বাভাবিক। এরইমধ্যে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার পর অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যায়। হিমশিম খেতে হচ্ছে অক্সিজেন আমদানি ও প্রস্তুতকারকদের। তবে এই মুহূর্তে দেশে অক্সিজেনের কোনও সংকট নেই বলে জানিয়েছে দেশের দুই বৃহৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশ এবং স্পেক্ট্রা অক্সিজেন লিমিটেড। এই দুটি কোম্পানি দেশের সব সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করে। তারা জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। একইসঙ্গে মেডিক্যাল অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রাখতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছেন তারা।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে কোভিড-১৯ ভাইরাস দেশব্যাপী অধিকহারে ছড়িয়ে পড়ায় জীবন রক্ষাকারী মেডিক্যাল অক্সিজেনের চাহিদা আগের তুলনায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড ভারত থেকে সড়কপথে তরল অক্সিজেন আমদানিপূর্বক দেশের অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করছে। সরবরাহ ব্যবস্থাকে দ্রুত, নির্ভরযোগ্য ও পরিমাণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সড়ক পথের পাশাপাশি রেল পরিবহণ ব্যবস্থাকে ব্যবহার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে চাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তরল অক্সিজেন সরবরাহের পরিমাণ বৃদ্ধিসহ দ্রুততা ও নির্ভরযোগ্যতার সঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিতে লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেডের অভিজ্ঞতা ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান লিন্ডে ইন্ডিয়া লিমিটেডরে পরামর্শক্রমে কিছু প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেন। এ অবস্থায়, কোভিড মহামারি পরিস্থিতিতে জরুরি তরল মেডিক্যাল অক্সিজেনের সরবরাহ দ্রুততর, নির্ভরযোগ্য ও পরিমাণ বাড়াতে সড়ক পথের পাশাপাশি রেল পরিবহন ব্যবস্থাকে ব্যবহার করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেডের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুফিয়া আক্তার ওহাব বুধবার (২৮ জুলাই) বলেন, দেশে বর্তমানে অক্সিজেনের কোনও সংকট নেই। সরবরাহ রয়েছে পর্যাপ্ত। তবে আগের তুলনায় চাহিদা বেড়ে গেছে। এজন্য সড়ক পথের পাশাপাশি তারা রেলপথ ব্যবহার করে অক্সিজেন আমদানি করছেন। এ পর্যন্ত দুদফায় ৪০০ টন অক্সিজেন তারা আমদানি করেছেন।
বুধবার (২৮ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে ভারতীয় রেলওয়ের ‘অক্সিজেন এক্সপ্রেস’ ১০টি কনটেইনার নিয়ে দ্বিতীয় দফায় বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়। সেখান থেকে আনলোড করে আগের মতোই সড়কপথে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের দুপ্তারা এলাকায় লিন্ডে বাংলাদেশ উৎপাদন ও বিক্রয় কেন্দ্রে নিয়ে সংরক্ষণ করা হবে। সেখান থেকে সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করা হবে। এর আগে গত ২৫ জুলাই প্রথম দফায় অক্সিজেন এক্সপ্রেসের একটি ট্রেন ২০০ টন তরল মেডিক্যাল অক্সিজেন নিয়ে আসে বাংলাদেশে। দেশের বহুজাতিক অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডে উৎপাদনের পাশাপাশি ভারত থেকে লিকুইড অক্সিজেন আমদানি করে। তাদের দেশে উৎপাদন সক্ষমতা ৯৫ টন। ভারতে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আমদানি বন্ধ হওয়ার আড়াই মাস পর আবারও আমদানি শুরু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, দেশে অক্সিজেনের চাহিদা একেক সময় একেক রকম। রোগী বাড়লে চাহিদা একরকম থাকে। আর কম থাকলে আরেকরকম। তবে এর আগে সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ২০০ থেকে ২২০ টনের মধ্যে। রোগী এভাবে বাড়তে থাকলে সেটি বেড়ে কতো হবে তা এখনও অনুমান করা যাচ্ছে না। শুধু দুটি কোম্পানি লিন্ডে এবং স্পেক্ট্রা বর্তমানে সরবরাহ করছে ১৭০ টন পর্যন্ত। বাকি চাহিদা অন্যান্য কোম্পানি থেকে সরবরাহ করে পূরণ করা যাচ্ছে আপাতত। তবে এই মুহূর্তে সংকট নেই অক্সিজেনের। যদি চাহিদা আরও বেড়ে যায় তাহলে দেশের বিভিন্ন ভারী শিল্প কারখানায় অবস্থিত প্ল্যান্টের মাধ্যমে অক্সিজেনের সরবরাহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।