করোনা মহামারীর মধ্যেই বেড়েছে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব। প্রতিদিন শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তির সংবাদ মিলছে। আক্রান্ত রোগীর মধ্যে অধিকাংশই রাজধানীর। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, সচেতন না হলে আগামী আগষ্ট ও সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে। বছরের শুরুতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে সারাদেশে মশকনিধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনও পরিচালনা করছে নানা কার্যক্রম। এরপরও কি কারণে এবার ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করা যায়নি তা পর্যালোচনার সময় এসেছে।
বিগত অর্থবছর এই খাতে ব্যয় হয়েছে ৯৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটির এই বাজেট কম নয়। তারপরও মশা নিয়ন্ত্রণে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ৬৭৯ জন। এর মধ্যে শুধু জুলাই মাসের ২৫ দিনেই আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ৩০৭ জন। শেষ দুই দিন ১০০ জনের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। অধিকাংশ আক্রান্তই রাজধানীতে। এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
মশা নিয়ন্ত্রণে এত কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। সম্প্রতি এক অনষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘মশা নিধন অভিযানের সময় অনেক বাড়িতে কর্মীদের ঢুকতে দেয়া হয় না। অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগীর আসল ঠিকানা না দিয়ে ভুল তথ্য দেয়া হয়। এটি একজন সচেতন নাগরিকের কাজ হতে পারে না। কোথায় এডিস মশার লার্ভা আছে তা জানালে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারি। সতর্ক হলে নিজেরাও মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেন। সবার অংশগ্রহণ ছাড়া মশা নিধন সম্ভব নয়। মশা নিয়ন্ত্রণ না হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণও অসম্ভব’। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে এডিস মশার উপদ্রব ও ডেঙ্গু আক্রান্ত বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে করণীয় এক নীতি নির্ধারণী সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এবং গাজীপুরের মেয়রও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদফতর চিহ্নিত এডিস মশার হটস্পটের এলাকাগুলোতে চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে। প্রতিটি সিটি কর্পোরেশনে ১০ জন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনা করছেন। অভিযানের পাশাপাশি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সেলে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রোগীর তথ্য পাওয়ার পর ওই ব্যক্তির বাসাবাড়ি চিহ্নিত করে পুরো এলাকায় বিশেষ মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।