কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগামী কোরবানি ঈদের আগে দেশের দোকানপাট মার্কেট-শপিংমল খুলতে আগ্রহী নন ব্যবসায়ীরা। ‘জীবিকার চেয়ে জীবন বড়’ মহামারী করোনার কারণে এই বাস্তবতা এখন ব্যবসায়ী সমাজের সামনে। কোরবানি ঈদ সামনে রেখে দোকানপাট, মার্কেট, শপিংমল এবং ফ্যাশন হাউসগুলো খুলে দেয়ার জন্য এবার আর সরকারের কাছে আবেদন করবে না বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। এমনকি ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতিও দোকানপাট ও মার্কেট বন্ধ রাখার পক্ষে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছে। ফলে কোরবানি ঈদের আগে বন্ধই থাকছে দেশের মার্কেট ও শপিংমলগুলো।
জানা গেছে, কোরবানি ঈদের আগে সীমিত পরিসরে দোকানপাট, মার্কেট ও শপিংমলগুলো খুলে দেয়া যায় কি না তা নিয়ে শীঘ্রই সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একটি বৈঠক করা হবে। গত রোজার ঈদে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে মার্কেটগুলো খুলে দেয়া হয়। ওই সময় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৃথকভাবে আবেদন করেছিল দোকান মালিক সমিতির দুটি সংগঠন। মূলত ব্যবসায়ীদের অনুরোধে সেই সময় দোকানপাট খুলে দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু এবার ব্যবসায়ীরা মার্কেট ও শপিংমলগুলো খুলতে চাচ্ছেন না। এমনকি কোরবানি ঈদের সরকারের পক্ষ থেকে সীমিত পরিসরে দোকানপাট ও মার্কেট খুলে দেয়ার অনুমতি দেয়া হলেও তারা সেই সুযোগ নিতে আগ্রহী নয়। এ কারণে দোকান খুলে দেয়ার কোন দাবি দাওয়া নেই ব্যবসায়ীদের।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট হারুন-উর-রশিদ (হাফেজ হারুন) বলেন, কোরবানি ঈদের আগে এবার দোকানপাট ও মার্কেটগুলো আর খোলা হচ্ছে না। সমিতির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে এবার মার্কেট খোলার ব্যাপারে কোন আবেদন করা করবে না মালিক সমিতি। ঈদের আগে ব্যবসায়ীদের দোকানপাট খোলার কোন প্রস্তুতি নেই। তিনি বলেন, কোরবানি ঈদের ৩-৪ দিন আগে দোকানপাট খোলার অনুমতি দেয়া হলে তাতে ব্যবসায়ীদের মুনাফার চেয়ে বেশি লোকসান গুনতে হবে। দোকানভাড়া, কর্মচারীদের বেতন-বোনাস, বিদ্যুত-গ্যাস-পানি বিল, ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপের মুখে পড়বেন ব্যবসায়ীরা। এ কারণের মার্কেটের দোকান মালিকরা ঈদের আগে মার্কেট ও শপিংমলগুলো রাখার পক্ষে। এরপরও সরকারের পক্ষ থেকে সুযোগ দেয়া হলে যার যার নিজ দায়িত্বে খুলবেন।
জানা গেছে, মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে আর্থিক চাপের মুখে রয়েছেন দেশের স্বল্প ও নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। বেচাকেনা কমে গেছে। গত রোজার ঈদের দোকানপাট ও মার্কেটগুলো খুলে দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বেচাকেনা করতে পারেনি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। আর কোরবানির ঈদে মানুষের নজর থাকে গরু-ছাগলের হাটে। পোশাক-আশাকের মতো জিনিস এই ঈদে মানুষকে তেমন টানে না। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসায়ীরা দোকান খোলার প্রস্তুতিতে নেই। ঢাকার অভিজাত নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানি ঈদের আগে তারা মার্কেট খুলতে আগ্রহী না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মার্কেটের একজন পোশাক ব্যবসায়ী বলেন, মার্কেট সমিতি দোকান খোলার পক্ষে এবার সরকারের কাছে কোন আবেদন করবে না। এই মুহূর্তে দোকানখোলার অর্থ মালিকদের জন্য বাড়তি চাপ। দোকানভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন-বোনাসের বিষয়টি রয়েছে। মার্কেট বন্ধ থাকলে মালিকদের আর্থিক চাপ থাকবে না। তিনি বলেন, কোরবানির ৪-৫ দিন আগে মার্কেট খুললেও বেচাকেনা না হওয়ার ঝুঁকি আছে। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু যেভাবে বাড়ছে তাতে মার্কেট ক্রেতাশূন্য থাকবে। জীবিকার চেয়ে এখন জীবন বাঁচানো বেশি জরুরী। ব্যবসায়ীরাও করোনা ঝুঁকি নিতে চাবে না। সবমিলিয়ে ঈদের আগে দোকানপাট আরও খুলছে না।
জানা গেছে, করোনা সংক্রমণরোধে তৃতীয় দফা কঠোর বিধিনিষেদের সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে। শীঘ্রই সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কঠোর বিধিনিষেধের সময়সীমা কোরবানি পর্যন্ত বাড়ানো হলে দোকানপাট খোলার আর কোন সুযোগ থাকছে না।
জানা গেছে, করোনার দ্রুত সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের দেয়া কঠোর বিধিনিষেধের কারণে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। বিধিনিষেধে কলকারখানা খোলা রাখার সুযোগ দেয়া হলেও বিপণিবিতান, রেস্তরাঁ, সবজি বিক্রেতাসহ কম পুঁজির ব্যবসায়ীদের ওপর তুলনামূলক কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সীমিত পরিসরে অফিস, ব্যাংক খোলা রাখা হলেও সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন লাখ লাখ ছোট ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শপিংমলসহ সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ থাকলেও অনলাইনে পণ্য বিক্রি করা যাবে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির হিসাবে, রাজধানীতে দোকানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লাখ। মাত্র হাতেগোনা কয়েকশ প্রতিষ্ঠান শুধু অনলাইনে পণ্য বিক্রির মতো সক্ষমতা আছে। আর শপিংমল রয়েছে দেড় শতাধিক। এছাড়া সমিতির হিসাবে সারাদেশে দশে ২০ লাখ দোকান, শপিংমল, বাণিজ্য বিতান রয়েছে। গড়ে একটি দোকানে ৩ জন করে ৬০ লাখ জনবল কাজ করছে। করোনার কারণে এসব দোকানপাট ও মার্কেট বন্ধ থাকায় দেশের ৬০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ঝুঁকির মুখে রয়েছে।