নবীগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ফাতেহা হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত কয়েদীর মৃত্যু

10

নবীগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
হবিগঞ্জ কারাগারের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী নবীগঞ্জের রাজু আহমদ মঙ্গলবার সকালে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে। নিহত রাজু আহমদ পৌর এলাকার আনমানু গ্রামের মৃত আব্দুল খালিকের ছেলে। নবীগঞ্জে চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ অন্ত:সত্ত্বা ফাতেহা বেগমকে ধর্ষণ করে হত্যাকান্ডের ঘটনায় উক্ত রাজু আহমদ সহ ৪ জনের যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন বিজ্ঞ আদালত। এরপর থেকেই রাজু আহমদসহ অপর আসামীরা হবিগঞ্জ জেলা কারাগারে তাদের বন্দি জীবন শুরু হয়। ৫ দিন আগে জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ অসুস্থ অবস্থায় রাজুকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে ২০ আগষ্ট রাত অনুমান ৯ টার দিকে স্বামী-স্ত্রীর পূর্ব বিরোধ মিমাংসার কথা বলে নবীগঞ্জ পৌর এলাকার হরিপুর গ্রামের আরব আলীর মেয়ে ৬ মাসের অন্ত:সত্ত্বা গৃহবধূ ফাতেহা বেগম (২৪)কে তার স্বামী সাইদুল মিয়াসহ উল্লেখিত আসামীরা ফুসলিয়ে আসামী বাবুল মিয়ার বাড়ির কথা বলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তারা তাকে বাবুল মিয়ার বাড়ীতে না নিয়ে নৌকায় উঠিয়ে শাখা বরাক নদীতে নিয়ে গিয়ে নৌকার মধ্যেই জোরপূর্বক পালাক্রমে ধর্ষণ করে। তাদের পাশবিক নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় এবং এই ঘটনার উপযুক্ত শিক্ষা দেয়ার হুমকি দেয়ায় আসামীরা শ^াসরুদ্ধ করে ফাতেহাকে হত্যা করে। পরে তার মৃত দেহ নদীর পারে ধান ক্ষেতে লুকিয়ে রাখে। ঘটনার এক দিন পর অর্থাৎ ২১ আগষ্ট সকাল ১১টার দিকে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ শাখাবরাক নদীর পার থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানায় নিহত ফাতেহার বোন রওশনারা বেগম বাদী হয়ে নিহত ফাতেহা বেগমের স্বামী সাইদুল হক, রাজু আহমদ, আব্দুল মন্নাফ, বাবুল মিয়া, আলাল মিয়া ও আব্দুল খালিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা নং-২৭ তাং-২১/০৮/২০০২ দায়ের করেন। মামলা দায়েরের একদিনের মধ্যে মৃত ফাতেহার স্বামী সাইদুল হককে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে তার স্বীকারোক্তিতে পুলিশ ধর্ষন ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত নৌকাসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করে। পুলিশ তদন্ত শেষে তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই কামাল উদ্দিন বিগত ০১/১২/২০০২ তারিখে ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট এবং অপর আসামী রাজু আহমদকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র প্রেরন করেন। পরবর্তীতে মামলার বাদী নারাজি দরখাস্ত দিলে বিজ্ঞ আদালত তা আমলে নিয়ে হবিগঞ্জ সিআইডি’কে তদন্তভার প্রদান করেন। সিআইডি পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা রাজুসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। এদিকে চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ ফাতেহা হত্যাকান্ডের ময়না তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা যায় সে ৬ মাসের অন্ত:সত্ত্বা ছিল এবং তাকে হত্যার পূর্বে ধর্ষণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে মামলার বিচারকার্য নিষ্পত্তির জন্য হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলাটি স্থানান্তরিত হয়। যার নং নাঃ শিঃ ১৩২৫/১৮। ঘটনার দীর্ঘ ১৭ বছর পর হবিগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-৩ এর বিচারক মামলার কাগজপত্র, স্বাক্ষীদের জবানবন্দি, উভয় পক্ষের কৌশলীদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে ২০১৯ সালের ৮ জুলাই সোমবার রায় প্রদান করেন। রায়ে নিহতের স্বামী উপজেলার গহরপুর গ্রামের মকলিছ মিয়া ছেলে সাইদুল হক, পৌর এলাকার হরিপুর গ্রামের মৃত আব্দুল নুরের ছেলে আব্দুল মন্নাফ, মৃত বজলা মিয়ার ছেলে বাবুল মিয়া এবং আনমনু গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে রাজু আহমদ’কে যাবজ্জীীবন কারাদন্ড, সাইদুল হক ও আব্দুল মন্নাফকে ১ লাখ টাকা করে অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ১ বছর কারাদন্ড এবং অপর আসামী হরিপুর গ্রামের মৃত রয়মান আলীর ছেলে আলাল মিয়া ও মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে আব্দুল খালিককে বেকসুর খালাস প্রদান করেন। যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত আসামী পক্ষের আত্মীয় স্বজনরা উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করেছেন। দীর্ঘ ২৩ মাস ২৮ দিন কারাভোগের পর চিকিৎসারত অবস্থায় রাজু আহমদ’র সিলেট ওসমানী হাসপাতালে তার মৃত্যু ঘটে। এর আগে তিনি কারাগারে অসুস্থবোধ করলে জেলা কারা কর্র্তৃপক্ষ তাকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে গত ১লা জুলাই তাকে সিলেট ওসামনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। মঙ্গলবার সকালে তিনি চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। এদিকে রাজু আহমদ এর মৃত্যুর খবর এলাকায় পৌঁছলে স্বজনদের মাঝে আহাজারি দেখা দেয়। এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। তার মৃতদেহ সিলেট ময়না তদন্ত ও আইনী প্রক্রিয়া শেষে বাড়িতে আনা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।